উত্তরের হিমালয় পর্বতমালার প্রত্যন্ত রাজ্য থেকে দক্ষিণের কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ ভারতীয় শুক্রবার ভোটকেন্দ্রে লাইন দিলেন। কয়েক দফায় এই ভোটগ্রহণ পর্ব চলবে। এই নির্বাচনে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অগ্রণী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চলতি নির্বাচনে মোদির বিজেপি বা ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ‘ইন্ডিয়া’। প্রায় দুই ডজনের বেশি বিরোধী দলের জোট এই ‘ইন্ডিয়া’। বেকারত্ব, দরিদ্রদের মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট ইত্যাদির মতো বিষয় সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিরোধীরা আশা করছে যে, ক্ষমতায় মোদির দশকব্যাপী বজ্রমুষ্ঠিকে আলগা করতে তারা সক্ষম হবে।
বিশাল নির্বাচনের প্রথম দফায় শুক্রবার ভোটাররা সংসদের নিম্নকক্ষে ১০২টি আসনে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট দিলেন। এই নির্বাচন সাত দফায় ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হতে চলেছে। নির্বাচিত হবেন ৫৪৩ জন সাংসদ বা আইনপ্রণেতা।
চলতি নির্বাচনের আকার ও আয়তন সুবিশাল। প্রায় ৯৭ কোটি যোগ্য ভোটার রয়েছেন; ১০ লক্ষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে; দেড় কোটি ভোটকর্মী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা এই নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এই নির্বাচনকে বিশ্বের বৃহত্তম শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। বিশালায়তন দেশের ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ৪ জুন ভোটগণনা শুরু হবে।
৭৩ বছর বয়সী মোদি ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার জোরে বিরল তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় ফিরতে পারেন। আগের দুই নির্বাচনের চেয়ে আরও বেশি চূড়ান্ত ও নিশ্চিত জয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নিয়ে তিনি ভোটের ময়দানে নেমেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশিদ কিদওয়াই বলেন, “এই নির্বাচন মোদিময়। তিনি তার দলের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং ভোটারদের সমস্যাগুলি তার জনপ্রিয়তার তলায় চাপা পড়ে যাবে।”
জিতেন্দর সিং চান্ডেল। বয়স ৩৬ বছর। থাকেন উত্তরপ্রদেশের নয়ডায়। তিনি গাড়িচালক। জিতেন্দর বলছেন, কাজ খুঁজতে তাকে হয়রান হতে হচ্ছে। ভিওএ-কে তিনি বলেন, “কোনও চাকরি নেই। আমি এখনও কোনও সুযোগ পাইনি। আমি শুনেছি যে, গ্রামে ঘর তৈরি করার জন্য সরকার দরিদ্রদের অর্থ দিয়েছে, কিন্তু আমার লাভ হয়নি।” কিন্তু পরের সপ্তাহে যখন ভোট দেবেন, তখন তিনি বিজেপিকেই বাছবেন কারণ তিনি মনে করেন, মোদির আমলে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা উন্নত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে মোদি ভোটারদের রেকর্ড হারে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি বিশেষ করে তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের বিপুল সংখ্যক ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাই। শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ভোটই মূল্যবান এবং প্রতিটি কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ।”
মোদির উত্থানের পর থেকে কংগ্রেস দলের রাজনৈতিক উপস্থিতি নাটকীয়ভাবে সংকুচিত হয়েছে। কংগ্রেসের আশা, বিজেপিকে আরও কার্যকরীভাবে ঠেকাতে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে তাদের জোট সাহায্য করবে।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধীরা এখনও খণ্ডিত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী পদে কোনও প্রার্থী দিতে না পারা তাদের জন্য একটা অসুবিধা। বিশ্লেষক কিদওয়াই উল্লেখ করেন, “জনগণ প্রায়শই প্রশ্ন করছেন যে, মোদি বনাম কে?”
বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে, তাদের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি দ্বারা দুর্নীতি তদন্ত শুরু করার মাধ্যমে ক্ষমতাসীন বিজেপি নির্বাচনী রণক্ষেত্রকে হাস্যাস্পদ করে তুলেছে। তবে এই তদন্তগুলি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় বলে যাবতীয় অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।