তিব্বত বিষয়ক একটি সাইবার-নিরাপত্তা দলের নতুন প্রতিবেদনে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, চীন সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হ্যাকাররা কীভাবে নির্বাসিত তিব্বত সরকারের সদস্য ও সে দেশের আধ্যাত্মিক গুরু দালাই লামার দফতরকে লক্ষ্যবস্তু করতে সাইবার-গুপ্তচরবৃত্তির কৌশলকে ব্যবহার করছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত “স্পাইওয়্যার-অ্যাজ-আ-সার্ভিস” ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের সাইবার-নিরাপত্তা সংস্থা আই-সুন থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়া বিপুল তথ্যভাণ্ডার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, হ্যাকাররা ২০১৮ সাল থেকে সেন্ট্রাল টিবেটান অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা সিটিএ-র কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনকে নিশানা করছে এবং যে বিশাল পরিমাণ তথ্য এই চীনা হ্যাকাররা সংগ্রহ করেছে তা এই কর্মকর্তা ও তাদের সামাজিক পরিসরে থাকা ব্যক্তিদের জন্য নিরাপত্তাজনিত মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তিব্বত বিষয়ক গবেষণা নেটওয়ার্ক টারকুইজ রুফ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, এই নিশানা “তুলে ধরছে যে, হুমকিদাতারা তাদের কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ বদল এনেছে। পাশাপাশি, আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত ও পেশাদারি কার্যকলাপের জন্য মোবাইল ফোনের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।”
ফেব্রুয়ারির তথ্য-ফাঁস চীনের সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি ও অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে তথ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার। ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা গেছে, বেসরকারি সংস্থা আই-সুনের ক্লায়েন্টদের মধ্যে রয়েছে চীনের পুলিশ, চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় ও পিপল’স লিবারেশন আর্মি। সংস্থাটি কী উপাদান, হাতিয়ার ও কৌশল ব্যবহার করত এবং চীনের বিভিন্ন হ্যাকিং গোষ্ঠীর মধ্যে কীভাবে যোগাযোগ রক্ষা করা হত, সেই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া নথিতে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক নিরাপত্তা উপদেষ্টা সংস্থা সেকডেভ গ্রুপের জ্যেষ্ঠ তদন্তকারী গ্রেগ ওয়ালটন বলেছেন, গত কয়েক দশক ধরে জাতিগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করতে চীন কীভাবে “ব্যাপক সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির সরঞ্জাম” ব্যবহার করেছে তার একটা আভাস পাওয়া যায় এই নতুন অনুসন্ধানগুলি থেকে।
এই প্রতিবেদনের লেখক ওয়ালটন বলেছেন, “ যদিও এই উদ্ঘাটন হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এতে অনেক কিছুই প্রকাশ পেয়েছে।”
তিনি ভিওএ-কে ফোনে জানান, “পশ্চিমকে নিশানা করতে (চীনের কর্তৃপক্ষ) যে অস্বচ্ছ ব্যবস্থা ব্যবহার করছে সে সম্পর্কে আরও বিশদে জানতে আমাদের সাহায্য করছে এই অনুসন্ধান।”
সিটিএ ও প্রবাসে থাকা তিব্বতি জনগোষ্ঠী এক দশকের বেশি সময় ধরে চীনের সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির লক্ষ্যবস্তু হয়ে আছে। ২০০৮ সালে “ঘোস্টনেট” (পিপল’স লিবারেশন আর্মির বিশেষজ্ঞ বিভাগের সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত) নামক ব্যাপক সাইবার অভিযানের ফলে গোটা তিব্বতি সম্প্রদায় গুরুতর সমস্যায় পড়েছিল।
টারকুইজ রুফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিটিএ-র বিরুদ্ধে চীনের সামরিক ও গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অভিযান তিব্বতের নির্বাসিত সরকারের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সঙ্গে “তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল ক্ষেত্রে সরকারের বর্ধিত বিনিয়োগ এবং প্রবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীলতাকে লক্ষ্য করে চীনের সামরিক ও গোয়েন্দা বিভাগ তাদের তত্পরতা বাড়িয়েছে”।
চীনের সাইবার হামলার বিরুদ্ধে আত্মনির্ভরতা বাড়াতে কিছু তিব্বতি সংগঠন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
ওয়ালটন বলছেন এমনকি বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অনেককে পাঠিয়েছিল সিটিএ।