ইসরায়েলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেন ত্রাণ সংস্থা আনরা-র প্রধান

ত্রাণ সংস্থা আনরা প্রধান ফিলিপে লাটসারিনি (বাঁয়ে) এবং জাতিসংঘে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান (মাঝে) নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার সময়। ফটোঃ ১৭ এপ্রিল, ২০২৪।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাহায্যকারী জাতিসংঘের এক সংস্থার প্রধান বুধবার বলেছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ গ্রাস করছে, এমন সময়ে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে এই সংস্থাকে বহিষ্কার করতে ইসরায়েলি প্রচারণার মুখে পড়ছে তারা এবং তাদের মানবিক অভিযান চালাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে কমিশনার-জেনারেল ফিলিপে লাটসারিনি বলেছেন, “গাজায় ইসরায়েলের সরকার আনরা-র কর্মকাণ্ড বন্ধ কর দিতে চাইছে। উত্তরাঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করতে এই সংস্থার অনুরোধ বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইসরায়েল ও মানবিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়মূলক বৈঠকে আমাদের কর্মীদের অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না।”

আনরা-র কর্মী ও এই সংস্থার একাধিক প্রাঙ্গন-চত্বরকে ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, আনরা-র ১৭৮ জন কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত আনরা-র ১৬০টির বেশি প্রাঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত অথবা ধ্বংস করা হয়েছে, যাতে অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

লাটসারিনি বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী আনরা কর্মীদের আটকও করেছে। এই কর্মীরা জানিয়েছেন, বন্দিশিবিরে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও নিগ্রহ করা হয়েছে।

লাটসারিনি পরিষদকে বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক মানবিক কর্মী, ক্রিয়াকলাপ, অভিযান ও প্রতিষ্ঠানগুলির সুরক্ষাকবচকে নির্লজ্জভাবে অমর্যাদা করার জন্য স্বতন্ত্র তদন্ত ও জবাবদিহিতার দাবি জানাচ্ছি আমরা। অন্যথায় এক ভয়াবহ নজির তৈরি হবে এবং গোটা বিশ্বে মানবিক কাজ চালানোর ক্ষেত্রে আপোস করতে হবে।”

ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী-মর্যাদা

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বহু বছর ধরে আনরা-কে সমালোচনা করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, হামাস এই সংস্থার স্কুলগুলিকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করে এবং ইসরায়েল-বিরোধী পাঠ্যক্রম প্রচার করে। ইসরায়েলের উপর ৭ অক্টোবরে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর এই বয়ান ও ভাষ্য আরও জোরালো হয়েছে।

গাজার দক্ষিণে রাফায় আনরা'র ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলার পর রক্তাক্ত মেঝে দেখে একজন ফিলিস্তিনির প্রতিক্রিয়া। ফটোঃ ১৩ মার্চ, ২০২৪।

লাটসারিনি বলেছেন, আনরা-র বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণ ইসরায়েল লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনির শরণার্থী-মর্যাদা বাতিল করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, “আনরা ইচ্ছাকৃতভাবে শরণার্থী মর্যাদাকে ব্যবহার করতে চায় বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা মিথ্যা ও অসৎ। কোনও রাজনৈতিক সমাধান-সূত্র নেই বলেই এই সংস্থা রয়েছে।”

তিনি বলেছেন, এই সংস্থাকে বাতিল করলে স্বল্পমেয়াদে মানবিক সংকট গভীরতর হবে, দুর্ভিক্ষ আরও ত্বরাণ্বিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে গাজার পুনর্গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জানুয়ারি মাসে ইসরায়েল অভিযোগ করেছিল, ৭ অক্টোবরে হামাসের ভয়াবহ হামলার সঙ্গে আনরা-র ১২ জন কর্মী যুক্ত ছিলেন। সেই কর্মীদের তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করা হয়েছিল এবং এক আভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করা হয়। কিন্তু এর ফলস্বরূপ, শীর্ষ অর্থদাতা যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৬টি অর্থদাতা প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের অনুদান বাতিল করে দেয়।

আনরা'র পক্ষে ওয়াশিংটন

ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত জিলাদ এর্দান পরিষদকে বলেন, “আনরা-কে অর্থদান বন্ধ করার সময় এসেছে।” তার অভিযোগ, ১৯৪৯ সালে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরেই ফিলিস্তিনিরা এই সংস্থাকে “হাইজ্যাক” করে নিজেদের জন্য এটি “অস্ত্রতে” পরিণত করেছে।

জর্ডান বুধবারের বৈঠক অনুরোধ করে। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, গাজার ২৩ লক্ষ ফিলিস্তিনি অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছেন। আনরাকে এই সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

ওয়াশিংটন অর্থায়ন বন্ধ করে দিলেও বলছে, আনরা এখনও জরুরি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৪৯ সালে ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের জন্য ইউ. এন. রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি বা ইউএনআরডব্লিউএ প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা আনরা নামে পরিচিত। ইসরাইল ১৯৪৮ সালের মে মাসে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের ফলে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে সাহায্যের জন্য এই সংস্থা স্থাপন করা হয়েছিল।