গর্ভপাতের উপর থেকে প্রায়-সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে কাজ অব্যাহত রাখতে শুক্রবার ভোট দিলেন পোল্যান্ডের আইনপ্রণেতারা। ঐতিহ্যসম্পন্ন রোমান ক্যাথলিক এই দেশে গর্ভপাত একটি ব্যাপক বিতর্কিত ও বিভেদ সৃষ্টিকারী বিষয়।
এ দেশের সংসদের নিম্নকক্ষ ‘সেজম’-এর সদস্যরা পৃথক চারটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করার জন্য ভোট দিয়েছেন। এই প্রস্তাবগুলির মধ্যে দু’টি প্রস্তাব হলো ইউরোপীয় নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গর্ভাবস্থার ১২তম সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাতকে বৈধ ঘোষণা করার প্রস্তাব ।
একটি পরিকল্পনায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কোনও নারী যদি গর্ভাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসেন তাহলে তাকে যেন অপরাধী হিসেবে গণ্য করা না হয়। আর চতুর্থটিতে বলা হয়েছে , অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভপাতের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হোক, তবে ভ্রূণের ত্রুটির ক্ষেত্রে গর্ভপাতের অনুমতি দিতে রাজি তারা। ২০২০ সালে আদালতের এক রায়ের মাধ্যমে গর্ভপাতের এই অধিকারকে রদ করা হয়েছিল।
মধ্যপন্থী দলের প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড টাস্ক চাইছেন, গর্ভাবস্থার ১২তম সপ্তাহে পর্যন্ত নারীদের গর্ভপাতের অনুমতি দিতে আইন পরিবর্তন করা হোক।
গর্ভপাতের অধিকারের সমর্থকরা বলেছেন, গর্ভপাতের বিষয়টি পত্রপাঠ বাতিল না করে এ নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত আসলে সেটি হবে সঠিক পদক্ষেপ। তবে, তারা এও বলছেন যে, আইনে প্রকৃত কোনও বদল আসার আশু সম্ভাবনা নেই।
উদারীকরণের কোনওরকম প্রস্তাবে ভিটো দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা। তিনি রক্ষণশীল। তিনি গত মাসে ‘মর্নিং আফটার পিল’ বা সকালের বড়ি সংক্রান্ত প্রস্তাবে ভিটো দিয়েছিলেন। অথচ এটি গর্ভপাতের বড়ি নয়, বরং এটি জরুরিকালীন গর্ভনিরোধক। নারী ও ১৫ বছর ও তার ঊর্ধ্ব বয়সের মেয়েরা এই বড়ি দোকান থেকে কিনতে পারেন।
গর্ভপাত-বিরোধীরাও সক্রিয়। পোল্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসকে জাতীয় আত্মপরিচয়ের বুনিয়াদ বিবেচনা করা হয়। তবে, এই দেশ দ্রুত ধর্মনিরপেক্ষতার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে ধর্ষণ, অজাচার বা কোনও নারীর জীবন বা স্বাস্থ্য যদি ঝুঁকিতে থাকে সেই সব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রজনন অধিকার সংক্রান্ত সমর্থকরা বলছেন, এমনকি এই সব ক্ষেত্রেও আইনি পরিণতির ভয়ে বা নৈতিক বাধার কথা উল্লেখ করে চিকিৎসক ও হাসপাতাল নারীদের ফিরিয়ে দেয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক অধিকারের সনদে গর্ভপাতের অধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় সংসদ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
গর্ভপাতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পোল্যান্ড ও মাল্টাকে আহ্বান জানিয়েছেন আইনপ্রণেতারা। এই দুই দেশেই গর্ভপাতের উপর কঠোরতম বিধিনিষেধ রয়েছে।