ঈদে ঢাকা ছেড়েছে ১ কোটি মানুষ, বেড়েছে নাগরিক সুবিধা

ফাইল ছবিঃ ঈদকে সামনে রেখে রেলপথে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছেড়ে নিজ জেলা শহর ফেনীতে যাচ্ছেন ব্যাংকের চাকরিজীবী কামরুল হাসান।

সোমবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর মানিকনগর দূরপাল্লার বাস ট্রর্মিনালে এই ব্যাংকারের সঙ্গে কথা হয় ভয়েস অফ আমেরিকার।

তিনি বলেন, “১৫ রমজানে (২৫ মার্চ) ছেলে-মেয়ের স্কুলের ছুটির পর পরিবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ অফিস শেষ করে নিজে যাচ্ছি।”

শুধু কামরুল হাসান নয়, তার মতো প্রায় ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন এবারের ঈদে।

৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা।

এখন ঢাকায় বসবাসকারী নাগরিকেরা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঈদের ছুটির এই সময়ে রাজধানীতে যান চলাচল করবে সীমিত আকারে।

ঢাকার আশপাশের ইট ভাটাও বন্ধ।

নেই কোনো নির্মাণকাজ।

ফলে সারাবছর দূষণের শীর্ষ থাকা ঢাকার বায়ু মান উন্নতি ঘটবে বলে আশা করছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।

ফাঁকা ঢাকায় সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা পড়তে হবে নগরবাসীকে।

গণপরিবহনের স্বল্পতায় বাড়বে যাতায়াত ব্যয়।

কাজের লোকের অভাবে অনেকে পড়তে হবে ভোগান্তিতে।

চুরি-ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বাংলাদেশে থেকে পরিচালিত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করেন মনোজিৎ মিত্র।

এই সংবাদকর্মী এবার ঈদের বিশেষ ডিউটিতে ঢাকায় থাকবেন।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদে ঢাকা শহরে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। তবে, কিছু অসুবিধাও আছে।”

মনোজিৎ মিত্র বলেন, “সুবিধাগুলো হচ্ছে- ঈদে ঢাকায় মানুষ কম থাকায় রাস্তায় যানবাহন কম চলাচল করে। এতে যানজট থাকে না, শব্দ দূষণও কম হয়। কম সময়ে যাতায়াত করা যায়। রাস্তাঘাটের পরিবেশও ভালো থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোও অন্য সময়ের তুলনায় ফাঁকা থাকে। সহজে বিভিন্ন জায়গায় এবং দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘোরাঘুরি করা যায়।”

ঈদের ছুটিতে বাসায় লোডশেডিং তুলনামূলক কম থাকে উল্লেখ করেন এই সংবাদকর্মী।

তিনি বলেন, “বিদ্যুতের অভাবে অনেক কাজ সঠিক সময়ে শেষও করতে পারি না। কিন্তু ঈদের সময় কলকারখানা ও বিপনি বিতান গুলো বন্ধ থাকায় বাসা-বাড়িতে লোড়শেডিং কমে যায়। এতে অনেক অসুবিধা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রগুলো ভালো থাকে।”

ঈদে ঢাকা ছাড়ছেন ১ কোটির বেশি মানুষ

গত বছর ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে মোবাইল কোম্পানিরগুলোর সিম কার্ডের হিসেবে অনুযায়ী, ১ কোটি ৫২ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছিলেন বলেও জানিয়েছিলেন তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেবে অনুযায়ী, এবার ঈদ করতে ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।

সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, “এবারের ঈদে ঢাকা ও আশপাশের জেলা থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তার মধ্যে রাজধানী থেকে যাচ্ছেন ১ কোটির বেশি মানুষ।”

সড়ক পরিবহন, রেল ও নৌপরিবহনের বাইরে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং আকাশ পথে আরও কয়েক লাখ মানুষ ঈদে ঢাকা ছেড়েছেন বলেও জানান যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আর দূরপাল্লার বাস, রেল এবং নৌ-পথের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই তিনটি পথে ৮০ লাখের বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন।

এবারের ঈদ উপলক্ষে নৌপথে ১৫ লাখের বেশি মানুষ বাড়ি ফিরেছেন বলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু আমাদের জন্য বিরাট আর্শীবাদ। সেতু হওয়ার আগে নৌ-পথে অগণিত মানুষ দক্ষিণাঅঞ্চলে যাতায়াত করতো। এখন সেতু হওয়ার পরে নৌ-পথে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তারপরও প্রতিদিন নৌ পথ দিয়ে কয়েক লাখ মানুষ যাতায়াত করছে।”

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন এপ্রিল মাস। প্রতিদিনই ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ন করে আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। এখানে নৌ-পুলিশ সার্বক্ষণিক আছে। এছাড়া কোস্টগার্ডকেও সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে।”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ঈদের ছুটিতে দূরপাল্লার বাসে করে ৬০ লাখের বেশি মানুষ রাজধানী ছেড়েছে। এই হিসেবটা ঈদের দিন ছাড়া। ঈদের দিনেও অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ে। কিন্তু তার সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই।”

গত ৩ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ২ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ টি অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে বলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান টিকেট বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান সহজ-এর প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা সন্দীপ দেবনাথ।

রেল সূত্রে আরো জানা যায়, ১০ ও ১১ এপ্রিল আরও ১ লাখের বেশি টিকেট বিক্রি হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক (৫ বছরের নিচে) শিশুদের জন্য রেল ভ্রমণে টিকেটের প্রয়োজন হয় না।

এ ছাড়া রেলের ছাদে ভ্রমণ অবৈধ হওয়ায় সে হিসেব পাওয়ার সুযোগ নেই।

সেক্ষেত্রে এই দুইখাতের হিসেবে আরও কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন বলে ওই সূত্র থেকে জানা যায়।

নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, “নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমাদের ধারণা, ঈদে শহরে বসবাসকারী ৪০-৫০ ভাগ মানুষ ঢাকা ছাড়েন। এবার ছুটি লম্বা হওয়ায় এই সংখ্যা আরও বাড়বে।”

ছুটিতে ঢাকায় পাওয়া যাবে বাড়তি নাগরিক সুবিধা

নগর বিশষজ্ঞরা বলছেন, একটি বড় আদর্শ শহরের জনসংখ্যা ৭০ লাখ।

এই সংখ্যক মানুষের বসবাস হলে ওই শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, ঢাকার জনসংখ্যা এক কোটি দুই লাখ ৭৮ হাজার৷

যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের দাবি, ঢাকার জনসংখ্যা ২ কোটির বেশি।

ঈদের ছুটিতে ঢাকায় থেকে যাওয়া নগরবাসী কিছুটা সুবিধা পাবেন।

“মানুষ কম থাকার কারণে ঈদের সময় ঢাকায় নাগরিক সুবিধা বাড়ে” বলে জানান গর বিশেষজ্ঞ আদিল মোহাম্মদ খান।

বিশেজ্ঞষরা বলছেন, ঈদের সময় যানজট কম থাকার কারণে মানুষের কর্মঘন্টা বা সময় বাচঁবে।

শব্দ ও বায়ু দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

কলকারখানার ও বিপনিবিতানগুলো বন্ধ থাকায় গ্যাস-বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না নগরবাসীকে।

ফাইল ফটোঃ ঢাকার অদূরে একটি ইটের ভাটায় কাজ করছেন শ্রমিকরা।

ঈদের তিনদিন ঢাকার বায়ুর মানের উন্নতি হবে

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “গত ৫-৬ বছর ধরে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) একটা সমীক্ষা করে বলেছে, কোনও ঈদের সময় ঢাকার বায়ুর মান কেমন থাকে। সেই হিসেবে আমরা বলতে পারি, ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন এবং পরের দিন- এই তিন দিন বায়ুর মান মোটামুটি উন্নত হয়।"

ঈদের সময় মানুষ শহর ছেড়ে বাইরে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মানুষ যখন ঢাকার বাইরে যায় তখন যানজটের দূষণ থাকে না, কলকারখানার দূষণ থাকে না বলেই তখন বায়ুর মান উন্নত হয়।”

আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, “ঢাকার বায়ু সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ইট ভাটার কারণে। ক্যাপসের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, ইট ভাটা ও অন্যান্য শিল্প থেকে ২৯ ভাগ বায়ু দূষণ হয়। ৩০ ভাগ হয় নির্মাণ কাজ থেকে। যানবাহন থেকে ১৫ ভাগ বায়ু দূষণ, ট্রান্স-বাউন্ডারি থেকে ৮-৯ ভাগ, বর্জ্য পোড়ানো থেকে ১১ ভাগ বায়ু দূষণ হয়ে থাকে। ঈদের সময় এই উৎসগুলো মোটামুটি বন্ধ থাকে। এখন ফাঁকা ঢাকায় নাগরিকরা এর সুবিধাগুলো পাবেন।”

অবকাঠামোর ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণ বেশি জনসংখ্যা রয়েছে ঢাকায়

নগর বিশেষজ্ঞ আদিল মোহাম্মদ খান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “একটা বড় শহরের জনসংখ্যা যখন ৭০ লাখ ছাড়িয়ে যায়, তখন এটা ব্যবস্থাপনার বাইরে চলে যায়। ঢাকার জনসংখ্যা কম করেও যদি দেড় কোটি ধরা হয়, তাহলে সেটা ধারণ ক্ষমতার চাইতে অনেক বেশি। আর আদর্শ একটি শহরের যেসব অবকাঠামো থাকে, রাস্তা থেকে শুরু করে গ্যাস-বিদ্যুৎ তার তিন ভাগের একভাগও তৈরি হয়নি ঢাকায়।”

“একটা অপ্রস্তুত শহরে দেড় কোটি লোক চলে আসলো। অবকাঠামোর ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণ বেশি জনসংখ্যা রয়েছে ঢাকায়”-উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “যখন ঈদের সময় অর্ধেকের বেশি লোক চলে যায়, তখন ঢাকা একটা ব্যবস্থাপনার জায়গায় চলে আসে। অফিস-আদালত, কল-কারখানা বন্ধ থাকে। এই সময়ে ঢাকায় চলাফেরা, ঘোরাঘুরি ও থাকার জন্য একটা স্বস্তিদায়ক পরিবেশ হয়। যানজটে যে সময় নষ্ট হতো, সেটাও বেচেঁ যায়। সবমিলিয়ে তখন ঢাকায় যারা থাকেন তারা নাগরিক সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারেন।”

ফাইল ছবিঃ ঈদের ছুটির আগে ঢাকার যানজট।

বাড়বে যাতায়াত খরচ ও অভাব থাকবে কাজের লোকের

ঈদের সময় রাজধানীতে মানুষ কমে যাওয়া এবং পরিবহনের চালক ও সহযোগী ছুটিতে থাকায় বন্ধ থাকে অধিকাংশ গণপরিবহন।

রিকশা, সিএনজি ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল এ চলাচল করতে হয় এবং গুনতে হয় ভাড়া।

বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে যোগ হয় ঈদ বকশিস।

ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় এসেছেন মৌসুমি রিকশা চালক বিল্লাহ হোসেন।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ঈদে বড় গাড়ি কম চলে, এতে বেশি পেসেঞ্জার (যাত্রী) পাই। এই জন্য এখন ঢাকা আইছি। আর ঈদের সময় ভাড়ার পাশাপাশি বকশিসও চাইয়া লই।”

বাসা-বাড়িতে গৃহস্থালির কাজে থাকা লোকেরা ঈদে ছুটিতে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেক পরিবারকে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসিন্দা সায়েমা আমিন।

ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “সাধারণ সময়ের তুলনায় ঈদে রান্না-বান্না বেশি করতে হয়। একদিকে ঈদের আমেজ, অন্যদিক অতিথিরাও আসেন। কিন্তু সবার মতো কাজের লোকেরাও তখন ছুটিতে চলে যায়। সাধারণ সময়ে ঢাকায় ঘন্টা হিসেবে কিছু কাজের লোক পাওয়া যায়। সেই সেবাও বন্ধ থাকে ঈদে। ফলে, ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের।”

ঈদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশার উপদ্রব রোধে বিশেষ ব্যবস্থাপনা

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঈদের ছুটি ভোগ করেন।

তবে, এসময় নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ও মশার উপদ্রব্য রোধে সিটি করপোরেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “কোরবানির ঈদের সময় তো আমরা এক ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। আর এই ঈদে নরমাল হবে। যারা ছুটিতে যাওয়ার যাবে। আর যেসব জায়গায় লোক থাকা দরকার সেখানে সবই ঠিক থাকবে। যা থাকা দরকার সব কিছুই ঠিক মতো থাকবে। একইভাবে মশার উপদ্রব রোধে ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে।”

কমবে রাজধানীর ব্যবসা-বাণিজ্য

ঈদের ছুটিতে অর্ধেকের বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ায় কমবে পাইকারি বাজারের কেনাবেচা।

পাড়া-মহল্লার খুচরা পর্যায়ের দোকানগুলোর বেচাবিক্রির ওপর পড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

কারওয়ান বাজার আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ঈদের সময় ঢাকার বাইরে থেকে আড়তে পণ্য কম আসে। যারা গ্রাম থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসে, তারা বোঝে যে ঈদের সময় রাজধানীতে মানুষ থাকে না, গ্রামে চলে যায়। এখন পণ্য নিয়ে গেলে বিক্রি হবে না, পঁচে যাবে। যার কারণে ঈদের ছুটিতে ব্যবসা থাকে না।”

রাজধানীর বাসাবোর আহমেদবাগ এলাকার দোকানী আব্দুর রশিদ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ঈদের আগের দিন চাঁদ রাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। কারণ ঈদকে কেন্দ্রে করে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি কিনে। আর ঈদের পরে দুই-তিন দিন ভালো বিক্রি হয়।”

ঈদের ছুটির বাকি দিনগুলোতে বেচাবিক্রি কমে যায়।

ঈদের ছুটির সময় অনেক খুচরা দোকানের কর্মচারীরা গ্রামে চলে যাওয়ায় মুদি দোকানগুলোর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বন্ধ থাকে।

ফাঁকা ঢাকায় চুরি-ডাকাতি বাড়ার আশঙ্কা

ঈদের ছুটিতে ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় বেড়ে যায় বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি-ডাকাতির ঘটনা।

নগরবাসীকে পুলিশের পক্ষ থেকে এবার ১৪টি পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷

পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বলেন, “ঈদের ছুটিতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা আছে ৷ নগরবাসীকে আমরা ১৪ ধরনের পরামর্শ দিয়েছি৷ টহল, চেকপোস্ট, নজরদারি ছুটির মধ্যে আমরা বাড়াব৷ নগরবাসীকেও তাদের বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে৷ আমরা ফাঁকা ঢাকায় মটরসাইকেল সহ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখব৷”

যারা ছুটিতে গ্রামে বাড়িতে যাবেন তাদেরকে ফাঁকা বাসায় নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার না রেখে ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রেখে যেতেও পরামর্শ দেওয়া হয় ডিএমপির পক্ষ থেকে।