গাজায় অস্ত্রবিরতির জন্য ইসরাইলি শর্ত মেনে নিতে হামাসের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন (ডানে) সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন।এপ্রিল ৯,২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার হামাসের উপর এই মর্মে চাপ দিয়েছে যে গাজায় ছয় সপ্তাহের জন্য লড়াই বন্ধ করতে তারা যেন ইসরাইলের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তি করতে সম্মত হয় আর একই সঙ্গে কারাগারে আটক শত শত ফিলিস্তিনিকে ইসরাইলের মুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র অভিহিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের হাতে আটক শ’ খানেকের মতো পণবন্দির মধ্যে কিছু পণবন্দিকেও তারা যেন মুক্ত করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ওয়াশিংটনে সংবাদদাতাদের বলেন গত সপ্তাহান্তে কায়রোতে হামাসের কাছে দেয়া এটি ছিল “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব” এবং এটি “মেনে নেয়া উচত্”।

ব্লিংকেন বলেন, “বল এখন হামাসের কোর্টে। বিশ্ব দেখছে, তারা কি করে”।

তিনি আরও বলেন যে হামাস যে এখনও শর্তগুলো মেনে নেয়নি. “সেটাই বলছে যে তারা গাজার জনগণ সম্পর্কে কতটা ভাবছে, তেমন বেশি না”।

৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ১২০০ ব্যক্তিকে হত্যা এবং প্রায় ২৫০ জনকে পণবন্দি করার পর ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে । ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে পরবর্তীতে গাজায় ইসরাইলের এই পাল্টা আক্রমণে ৩৩,০০০ লোক নিহত হন যাদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু তবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে নিহতদের মধ্যে েকয়েক হাজার হচ্ছে হামাস যোদ্ধা।

ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ১১২ জন পণবন্দিকে মুক্তি দেয়া হয় যাদের বেশির ভাগই মুক্ত হন নভেম্বর মাসের এক সপ্তাহব্যাপী অস্ত্রবিরতির সময়ে। মনে করা হচ্ছে আরও ৩৬ জন মারা গেছেন কিংবা এই ৬ মাস ব্যাপী লড়াইয়ের সময়ে তাদের হত্যা করাা হয়েছে।

ব্লিংকেন বলেন এই যুদ্ধ কয়েক মাস আগেই শেষ হতো যদি হামাস “হামাস তাদের বন্দুক নামিয়ে রাখতো , অসামরিক লোকদের আড়ালে লুকিয়ে না থাকতো এবং আত্মসমর্পন করতো”।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী সোমবার বলেন গাজা-মিশর সীমান্তে রাফাহয় হামলা চালানোর তারিখ ঠিক করেছে। তবে নির্দিষ্ট করে সেই তারিখের কথা তিনি জানাননি। সেই এলাকাতেই প্রায় দশ লক্ষ ফিলিস্তিনি নিরাপদে থাকার জন্য আশ্রয় নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলর পরিকল্পিত রাফাহ আক্রমণের বিরোধীতা করে এবং ব্লিংকেন বলছেন ইসরাইল এই আক্রমণের কোন তারিখ ওয়াশিংটনকে জানায়নি। তবে তিনি বলেন আগামি সপ্তাহে আবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা করছেন যাতে করে তারা তাদের অভিমত তুলে ধরতে পারেনএবং ঐ অঞ্চলে সর্বশেষ অবশিষ্ট হামাস ব্যাটালিয়ানকে আক্রমণ করার বিকল্প পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই শল্ষি কুটনীতিক বলেন ইসরাইলি আক্রমণ হলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন , “ অসামরিক লোকদের বিপদের স্থান থেকে সরিয়ে আনার ব্যাপারে ইসরাইলের ক্ষমতা সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ, আমাদের গভীর উদ্বেগের বিষয়ে পরিস্কার ভাবে জানিয়েছে”।

রাফাহতে শিগগিরই কিছু ঘটবে এমনটি তিনি দেখছেন না এবং তিনি এমনটিও মনে করেন না যে যুক্তরাষ্ট্রের ও ইসরাইলের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের আগে এমন কিছু ঘটবে।

এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন সেনেটে এক শুনানির সময়ে বলেন যে গাজায় মারাত্মক ও ব্যাপক দূর্ভিক্ষ সহিংসতাকে সম্ভবত বাড়িয়ে তুলবে এবং দীর্ঘ মেয়াদি সংঘাত শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহত ভাবে ইসরাইলকে এই মর্মে চাপ দিয়ে আসছে যে ইসরাইল যেন খাদ্যাভাবগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের খাওয়ানোর জন্য গাজায় মানবিক সহায়তা যেতে দেয়।