গাজা ইসরাইলঃ জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির দাবী সত্ত্বেও নেতানিয়াহু অভিযান চালিয়ে যাবার কথা বলছেন

গাজা সীমান্তে ইসরাইলের সাঁজোয়া বহর। ফাইল ফটোঃ ১ জানুয়ারি, ২০২৪।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করার জন্য তার অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প পুনরায় ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি তিনি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি প্রস্তাবেরও সমালোচনা করেছেন।

নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরাইল হামাসের অবাস্তব, বিভ্রান্তিকর দাবির কাছে নতি স্বীকার করবে না এবং যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য অর্জনে কাজ চালিয়ে যাবেঃ সমস্ত অপহৃতকে মুক্তি দেয়া, হামাসের সামরিক ও সরকারি ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং গাজা যাতে আর ইসরাইলের জন্য হুমকি হয়ে না উঠে, তা নিশ্চিত করা।”

হামাস কর্মকর্তারা সোমবার বলেন, তারা একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কাজ করা আলোচকদের বলেছেন, হামাস তার প্রস্তাব পরিবর্তন করবে না। প্রস্তাবের মধ্যে গাজা থেকে ইসরাইলের পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং ইসরাইলের হাতে আটক বন্দীদের পরিবর্তে গাজায় আটক জিম্মি বিনিময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

গাজার রাফায় ইসরাইলি বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত বাড়ি থেকে এক ফিলিস্তিনি নারী কিছু জিনিস উদ্ধার করেছেন। ফটোঃ ২৬ মার্চ, ২০২৪।

সাময়িকভাবে যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির উপায় খুঁজে বের করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, মিশর এবং কাতারি আলোচকদের কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যুদ্ধরত দুই পক্ষ তাদের দাবির পক্ষে খুব কমই অগ্রগতি দেখিয়েছে।

মঙ্গলবার নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের অবস্থান প্রমাণ করে যে “সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি একটি চুক্তির জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী নয়, এবং এটি নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের ক্ষতির একটি দুর্ভাগ্যজনক সাক্ষ্য।”

সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাবে রমজান মাসের জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ‘দাবি’ জানানো হয়েছে, যা ‘দীর্ঘস্থায়ী টেকসই যুদ্ধবিরতির দিকে পরিচালিত করবে।’ এতে সমস্ত জিম্মির তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত মুক্তি, আরও মানবিক সহায়তা প্রদানে সমস্ত বাধা অপসারণ এবং গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার দাবি করা হয়।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর আবেগপ্রবণভাবে নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, “এটি নিশ্চয়ই একটি টার্নিং পয়েন্ট। এটি অবশ্যই মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে। এটি অবশ্যই আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংস এই হামলার সমাপ্তির সংকেত দেবে।”

যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মান্সুর বক্তব্য রাখছেন। ফটোঃ ২৫ মার্চ, ২০২৪।

জাতিসংঘে ভোট, ইসরাইলের ক্ষোভ

সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় লড়াই থামনোর প্রথম দাবি জানিয়ে, মুসলমানদের জন্য পবিত্র রমজান মাসে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। যুক্তরাষ্ট্র এতে ভোটদানে বিরত থাকায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানান।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পরিকল্পিত ওয়াশিংটন সফর বাতিল করেছেন। তিনি হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির শর্ত না দিয়ে ভোটাভুটির অনুমতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘নীতিগত অবস্থান’ থেকে ‘পিছু হটেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন।

প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র তার ভিটো ক্ষমতা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রস্তাবটি ১৪-০ ভোটে পাস হয়। প্রস্তাবে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলার সময় বন্দি সমস্ত জিম্মির মুক্তি দাবি করা হয়।

নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের অতীতে ভিটো দেয়ার একটি মূল কারণ ছিল জিম্মিদের মুক্তির শর্তকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের সাথে সরাসরি যুক্ত না করা। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি, বিষয় দুটি সংযুক্ত। রাশিয়া ও চীন যুদ্ধবিরতির নিঃশর্ত আহ্বানের পক্ষে ছিল।

সোমবার অনুমোদিত প্রস্তাবে জিম্মিদের মুক্তি দাবি করা হলেও এটিকে যুদ্ধবিরতি শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেতানিয়াহু গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ শহরে সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক ইসরাইলি স্থল আক্রমণ রোধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের জন্য বাইডেনের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছেন।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কার্বি বলেন, জিম্মি চুক্তির অংশ হিসেবে যুদ্ধবিরতির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ‘অবিচল’ রয়েছে।

কার্বি বলেন, “আমরা ভোটদানে বিরত থাকার কারণ হলো, প্রস্তাবে হামাসকে নিন্দা জানানো হয়নি।”

ইসরাইল-হামাস সংঘাতের ‘তাৎক্ষণিক ও টেকসই যুদ্ধবিরতির’ পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি একটি প্রস্তাবে শুক্রবার রাশিয়া ও চীন ভেটো দেয়ার পর এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হলো।