আফগানিস্তানঃ তালিবান নেতা ইসলামি ফৌজদারি আইন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর তালিবান যোদ্ধারা কাবুলে টহল দিচ্ছে। ফাইল ফটোঃ ৩১ অগাস্ট, ২০১১।

আফগানিস্তানের মৌলবাদী তালিবান সরকারের নেতা বলেন, তারা ব্যভিচারের জন্য নারীদের প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে মারা সহ ইসলামি ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা কার্যকর করতে বদ্ধ পরিকর।

“আমাদের লক্ষ্য হল শরিয়া এবং আল্লাহর হুদুদ [আইন] কার্যকর করা,” হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা একটি অডিও ক্লিপে বলেন। তালিবান কর্মকর্তারা বলেন এটি তার সর্বশেষ বক্তৃতা থেকে নেয়া।

নির্জনে থাকা এই নেতা কোথায় কথা বলেছেন সে সম্পর্কে তারা কিছু বলেননি, তবে আখুন্দজাদা আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে কান্দাহার শহরে বাস করেন। তালিবানের এই ঐতিহাসিক জন্মস্থান এবং রাজনৈতিক সদর দফতর থেকে তিনি খুব কমই বাইরে বের হোন।

তিনি মূলত তালিবান সরকারের পশ্চিমা সমালোচকদের সম্বোধন করেন। আখুন্দজাদা ইসলামের কঠোর ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে আদেশের মাধ্যমে কান্দাহার থেকে তালিবান সরকারকে কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছেন।

পশ্চিমা বিশ্ব 'শয়তানের প্রতিনিধি'

“আপনারা এটাকে নারীর অধিকার লঙ্ঘন বলতে পারেন যখন আমরা প্রকাশ্যে ব্যভিচার করার জন্য তাদের পাথর নিক্ষেপ করি বা বেত্রাঘাত করি, কারণ এসব আপনাদের গণতান্ত্রিক নীতির সাথে সাংঘর্ষিক,” তালিবান প্রধান বলেন।

“আপনারা যেমন সমগ্র মানবতার মুক্তির জন্য সংগ্রাম করছেন বলে দাবি করেন, আমিও তাই করি। আমি আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করি এবং আপনারা শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করেন,” আখুন্দজাদা বলেন।

তিনি পশ্চিমা মানবাধিকার মূল্যবোধ এবং নারীর স্বাধীনতার সমালোচনা করে বলেন, তালিবান ধর্মীয় আলেমরা আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের এবং তাদের গণতন্ত্রের রূপকে অবিরাম প্রতিরোধ করে যাবে।

“এই আলেমদের জন্যই এই দেশ থেকে এমন গণতন্ত্র উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে,” তালিবান নেতা বলেন।

তালিবান ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় ফিরে আসে, যখন তৎকালীন আন্তর্জাতিকভাবে-সমর্থিত সরকারের পতন ঘটে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলি আফগান যুদ্ধে প্রায় ২০ বছর জড়িত থাকার পর তাদের সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।

আফগানিস্তানে নতুন শিক্ষা বছর শুরু হয়েছে কিন্তু ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েরা নিষিদ্ধ। ফটোঃ বাদাখশান প্রদেশ, ২০ মার্চ, ২০২৪।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই

আখুন্দজাদা আফগানিস্তানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করে দেন এবং অনেক নারীকে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থা সহ সরকারি ও বেসরকারি কর্মক্ষেত্র থেকে নিষিদ্ধ করেন।

কোনও পুরুষ আত্মীয়ের সাথে না থাকলে নারীদের দীর্ঘ রাস্তা এবং বিমান ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় না এবং তারা পার্ক, জিম এবং বাথহাউসের মতো সর্বজনীন স্থানে যেতে পারে না।

তালিবান নেতা তার শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করে বলেন, এটি আফগান সংস্কৃতি এবং ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

জাতি সংঘ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নারীর উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং শারীরিক শাস্তি থামাতে তালিবানের প্রতি আহবান জানিয়েছে।

“এটা হৃদয়বিদারক যে, আরও একটি বছর শুরু হচ্ছে, যখন ১২ বছরের বেশি বয়সী আফগান মেয়ে ছাড়াই স্কুলের দরজা খোলা হবে,” রিনা আমিরি, আফগান নারী এবং মানবাধিকার বিষয়য়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত শনিবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লেখেন।

তালিবানের “ধ্বংসাত্মক আদেশ” তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের আহবান তিনি পুনরায় ব্যক্ত করে বলেন, তারা আফগান জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ধ্বংস করে দিচ্ছেন।

মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে নারীদের প্রতি কঠোর আচরণের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয় নি।