রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় ওয়ারসো'র কৈফিয়ত দাবী

ইউক্রেনের রাজধানীতে ভূপাতিত একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ। ফটোঃ ২৪ মার্চ, ২০২৪।

পোল্যান্ড রবিবার বলেছে, নতুন করে নেটো জোটভুক্ত দেশের “আকাশসীমা লংঙ্ঘন” করায় রাশিয়ার কাছে তারা এর ব্যাখা দাবি করেছে। পোল্যান্ডের আকাশসীমা প্রায় ২ কিলোমিটার পার করে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আবার ইউক্রেনে প্রবেশ করে বলে পোলিশ সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানায়।

সামাজিক মাধ্যম 'এক্স'-এ পোলিশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, "রাশিয়ান বিমান বাহিনীর ছোঁড়া একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রাতে পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এটি লুবলিন প্রদেশের ওসেরদও গ্রামের ওপরে দিয়ে পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ৩৯ সেকেন্ড অবস্থান করে।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পাওয়েল রোনস্কি বলেন, “আমরা রাশিয়ান ফেডারেশনকে সর্বোপরি ভাবে, ইউক্রেন ও এর জনগণের ওপর সন্ত্রাসী বিমান হামলা বন্ধ করতে, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

এদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া গত চার দিনে দেশটিতে তৃতীয় বারের মত বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রাজধানী কিয়েভ লক্ষ্য করে এটি ছিল দ্বিতীয় হামলা। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, কিয়েভে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে একটি বিমান সতর্কতা চলে।

রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্রাইমিয়ার সেভাস্তোপোল শহরের আকাশে ইউক্রেনের ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে রাশিয়া। বাখমুতের নিকটবর্তী একটি গ্রাম শনিবার তারা দখল করে নিয়েছে বলেও তারা জানায়।

ইউক্রেনে গোলাবারুদের ঘাটতির মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের ফ্রন্ট লাইনের বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইভানিভস্কে গ্রাম দখল করে নিয়েছে। স্থলযুদ্ধের গতি কিছুটা ধীর হয়ে এলেও দুই দেশের বিমান হামলাই অব্যাহত রয়েছে সমান তালে।

ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী শনিবার জানায়, শুক্রবার রাতে রাশিয়ার ছোঁড়া ৩৪টি ড্রোনের মধ্যে ৩১টিই গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। ইউক্রেনের মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশে ড্রোনগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে বলে দেশটির সামরিক বাহিনী জানায়।

ইউক্রেনে বিদ্যুৎ ক্ষতিগ্রস্ত

শুক্রবার রাতে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলো মেরামরত করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা এখনো কিছু ইউক্রেনীয়দের বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। কিয়েভ কতৃপক্ষ শনিবার দাবি করেছে, এক দিন আগেই চলমান যুদ্ধে মস্কো তাদের বিদ্যুৎ গ্রিডে সবচেয়ে বড় আকারের হামলা চালিয়েছিল।

সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ অঞ্চলেই "বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা" ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে খারকিভ অঞ্চলে পরিস্থিতি এখনো খারাপ। খারকিভ শহর এবং হেমেলনিতস্কি অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ এখনও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জাতীয় গ্রিড অপারেটর ইউক্রেনারগো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

রুশ হামলায় ৫ জন নিহত হয় এবং দশ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহ হারায়। ইউক্রেনের সব চেয়ে বড় বাধও হামলার শিকার হয়।

এদিকে, শনিবার সকালে ইউক্রেনের বিমান হামলায় রাশিয়ার বেলগরোদ অঞ্চলে ২ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছেন বলে আঞ্চলিক গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ জানিয়েছেন।

রাশিয়ার সামারা অঞ্চলে ইউক্রেন রাতে ড্রোন হামলা চালালে একটি বড় তেল শোধনাগারে আগুন ধরে যায়।

অন্য দিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শনিবার জানিয়েছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের ক্রাসনোয়ে গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

কিছু তথ্য রয়টার্স ও এএফপির থেকে নেওয়া হয়েছে।