রাশিয়ায় নিখোঁজ মানুষের স্বজনদের উৎকণ্ঠার মাঝে শোক দিবস পালন

মস্কোর ক্রোকাস সিটি হল আক্রমণে নিহত শিশু সহ ১৩০ জনের বেশি মানুষ স্মরণে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ফটোঃ ২৪ মার্চ, ২০২৪।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর এক শহরতলির সঙ্গীত কনসার্টে সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জনের বেশি লোক মারা যাবার পর রবিবার দেশে জাতীয় শোক পালন করা হচ্ছে। যারা এখনো নিখোঁজ, তাদের স্বজনরা তাদের খবর জানার জন্য অপেক্ষা করছেন।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ নভোস্তি জানাচ্ছে, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়, জাতীয় পতাকা অর্ধ-নমিত করা হয়েছে এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিনোদন অনুষ্ঠান আর বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ রেখেছে।

জনতা লাইন ধরে ধীর গতিতে হেঁটে বিধ্বস্ত কনসার্ট হল, ক্রোকাস সিটি হলের কাছে তৈরি একটি অস্থায়ী স্মৃতি চিহ্নে ফুল রেখে যায়।

“লোকজন একটা কনসার্টে এসেছিলেন, কেউ কেউ তাদের পরিবার নিয়ে ভাল সময় কাটাতে এসেছিলেন, এবং আমাদের যে কেউ সেই পরিস্থিতিতে পড়তে পারতেন,” এপিকে বলেন আনদ্রেয় কন্ডাকভ, যিনি সেখানে ফুল দিতে আসেন। “আমি সকল পরিবারের জন্য সমবেদনা এবং আমার শ্রদ্ধা জানাতে চাই।”

“এই ট্র্যাজেডি সারা দেশের উপর প্রভাব ফেলেছে,” বলেন মারিয়া করশুনোভা, যিনি একজন কিন্ডারগার্টেন স্কুল শিক্ষক। “ছোট বাচ্চারা যে এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটা একেবারে ভাবাই যায় না।” নিহতদের মধ্যে তিনটি শিশু আছে।

বিধ্বস্ত ক্রোকাস সিটি হলে জাতীয় পতাকা অর্ধ-নমিত। ফটোঃ ২৪ মার্চ, ২০২৪।

এই আক্রমণ গত কয়েক বছরে রাশিয়ার মাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। ইসলামিক ষ্টেট গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত একটি গোষ্ঠী এই হামলার জন্য দায়িত্ব দাবী করেছে।

উদ্ধারকারীরা বিধ্বস্ত ভবনে খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কিছু পরিবার এখনো জানেনা তাদের স্বজন, যারা শুক্রবার সেই কনসার্টে গিয়েছিল, তারা বেঁচে আছেন কি না।

স্ত্রীর খোঁজে স্বামী

ইগর পোগাদায়েভ বেপরোয়া হয়ে তাঁর স্ত্রীর খোঁজ নিচ্ছেন। তাঁর স্ত্রী কনসার্টে গিয়েছিলেন কিন্তু তাঁর মেসেজের কোন উত্তর দিচ্ছেন না।

ইয়ানা পোগাদায়েভা ক্রোকাস সিটি হল থেকে তাঁর স্বামীকে দুটো ছবি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর পোগাদায়েভ তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে আর কোন মেসেজ পান নি।

কনসার্টে লোকজনকে লক্ষ্য করে বন্দুকধারীরা গুলি চালাচ্ছে, এই খবর পাবার পর পোগাদায়েভ ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু কোন অ্যাম্বুলেন্সে বা শত শত যেসব লোক সেখান থেকে বের হয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে তিনি তাঁর স্ত্রীকে খুঁজে পান নি।

“আমি সেখানে খুঁজেছি, সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি, ছবি দেখিয়েছি। কেউ কিছু দেখেনি, কেউ কোন খবর দিতে পারে নি,” পোগাদায়েভ এক ভিডিও বার্তায় এপিকে জানান।

তিনি ক্রোকাস সিটি হলে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য স্থাপন করা টেলিফোন হটলাইনে কল করে কোন তথ্য পান নি।

শনিবার যখন মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে, পোগাদায়েভ মস্কো এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে যান, নতুন আসা রোগী সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য।

কিন্তু তাঁর স্ত্রীর নাম হামলায় আহত ১৫৪ জনের মধ্যে ছিল না। কর্তৃপক্ষ মৃত ৫০ জনের পরিচয় নিশ্চিত করে, কিন্তু সেখানেও তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল না।

পোগাদায়েভ এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, যে ১৩৭ জন মারা গিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী তাদের মধ্যে একজন। তিনি এখনো বাড়ি ফেরেন নি।

“আমি একা থাকতে পারছিলাম না, এটা খুবই কষ্টকর, তাই আমি এক বন্ধুর কাছে এসেছি,” তিনি বলেন। “অন্তত এখন আমি কারো সাথে থাকব।”

মস্কোর আঞ্চলিক জরুরি পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় রবিবার এক ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যাছে, বিধ্বস্ত ভবন ভারি মেশিন দিয়ে ভাঙ্গা হচ্ছে, যাতে উদ্ধারকারীরা সব জায়গায় ঢুকতে পারেন।

ক্রোকাস সিটি হলে হামলার সন্দেহে আটক একজনকে মস্কোতে তদন্ত বিভাগের সদর দফতরে নিয়ে আসা হয়। ফটোঃ ২৪ মার্চ, ২০২৪।

দায়িত্ব নিয়ে দ্বিমত

এর আগে শনিবার, রুশ কর্তৃপক্ষ চারজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করছেন বলে মনে হচ্ছে। তবে ইউক্রেন হামলার দায় অস্বীকার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা নিশ্চিত যে ইসলামিক ষ্টেট-এর সাথে সম্পৃক্ত গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে।

“আইসিস এই হামলার জন্য একক ভাবে দায়ী। এখানে ইউক্রেনের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা ছিল না,” ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্রী এড্রিয়েন ওয়াটসন এক বিবৃতিতে বলেন।

রবিয়ার মস্কোর বাসামান্নি ডিসট্রিক্ট আদালতের সামনে ব্যাপক পুলিশ উপস্থিতি ছিল, যদিও হামলা সংক্রান্ত কোন শুনানির কোন ঘোষণা দেয়া হয় নি। পুলিশ আদালত থেকে সাংবাদিকদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।

পুতিন এই হামলাকে “বর্বরোচিত, রক্তাক্ত সন্ত্রাসী” আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রুশ কর্তৃপক্ষ চারজনকে গ্রেফতার করেছে যারা ইউক্রেনে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল। ইউক্রেনে পালাবার জন্য সীমান্তের ওপারে তাদের জন্য একটি ‘পথ’ তৈরি করা হয়েছিল বলে পুতিন দাবী করেন।

তবে কিয়েভ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও জোরদার করার জন্য পুতিন এবং অন্যান্য রুশ রাজনীতিক মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ইউক্রেনকে হামলার সাথে জড়াচ্ছে।

ওয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি কারিন জঁ-পিয়ের এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার নিন্দা করে, এবং বলেন যে, “ইসলামিক ষ্টেট গোষ্ঠী একটি সন্ত্রাসী শত্রু যাদেরকে সব জায়গায় পরাস্ত করতে হবে।”