ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতিতে ভূমিকা রাখার অভিযোগ নাকোচ করলেন আমেরিকান কূটনীতিক

ফাইল-পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি এক আদালতে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন। লাহোর, পাকিস্তান। ১৭ জুলাই, ২০২৩।

২০২২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে এই প্রথমবার জনসমক্ষে মুখ খুললেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষ কূটনীতিক।

হাউস ফরেন রিলেশন্স কমিটির সামনে বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুই ঐ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি বা তার সরকার ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতিতে কোনও ভূমিকা পালন করেনি।

কমিটির চেয়ারম্যান জো উইলসনের (যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের একজন রিপাবলিকান প্রতিনিধি) প্রশ্নের জবাবে লু বলেন, “এই অভিযোগ, এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মিথ্যা। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।”

২০২২ সালের এপ্রিলে সংসদে অনাস্থা ভোটে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

তারপর থেকে ইমরান খান অভিযোগ করেছেন যে, এক গোপন কূটনৈতিক তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিযুক্ত তৎকালীন পাকিস্তানি দূত আসাদ মাজিদ খান এবং এ থেকে প্রমাণ হয় যে, তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও বিরোধী নেতাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিল। এই তারবার্তায় ২০২২ সালের ৭ মার্চ ওয়াশিংটনে লু-র সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।

গত আগস্টে আমেরিকার এক সংবাদ সংস্থা ‘দ্য ইন্টারসেপ্ট’ ওই সাইফারের কথিত বয়ান প্রকাশ করেছিল।

রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খানের কথিত তার অনুযায়ী, সেই বৈঠকে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা মাজিদ খানকে পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে বলতে উৎসাহ দিয়েছিলেন যে, ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে ইসলামাবাদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও উষ্ণ সম্পর্ক প্রত্যাশা করতে পারে কারণ ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে ইমরান খানের নিরপক্ষেতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য মস্কোতে ছিলেন এবং এই আক্রমণকে তিনি নিন্দা করেননি।

নথিতে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে লু-র বলা কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে, “আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি অনাস্থা ভোট সফল হয় তাহলে ওয়াশিংটন সব ক্ষমা করে দেবে কারণ রাশিয়া সফরকে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে…অন্যথায় আমার মনে হয়, সামনে এগোনো কঠিন হবে।”

ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতিতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন লাগাতার প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন এই মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গত বছর স্বীকার করেছিলেন যে, রাশিয়ার প্রতি ইমরান খানের সমর্থনে বাইডেন প্রশাসন অখুশি ছিল।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও ইমরান খানের বিরোধীরা তাঁর অভিযোগগুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমে কূটনৈতিক তার সংক্রান্ত প্রতিবেদনকে বেঠিক বলে অভিহিত করেছেন লু।

লু উল্লেখ করেছেন, পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মাজিদ খান তার সরকারকে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ষড়যন্ত্র ছিল না।

লু কমিটিকে জানিয়েছেন, ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে “ভিত্তিহীন অভিযোগে” তিনি একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন এবং তার পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে লু বলেন, বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষকে তদন্তের জন্য ক্রমাগত আহ্বান জানিয়েছিল।

তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সহযোগী হিসেবে আমরা স্বচ্ছ নির্বাচন এবং অনিয়মের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছিলাম।”

অসঙ্গতি নিয়ে পাকিস্তানকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।