ইসরাইল-হামাস অস্ত্রবিরতি সম্পর্কে কাতারের ‘সতর্কিত আশাবাদ’

গাজা ভূখন্ডের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ফিলিস্তিনিরা খাদ্য সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ১৮ মার্চ ২০২৪

কাতারের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে ‘সতর্কিত আশাবাদ’ প্রকাশ করেছেন যে গাজায় যুদ্ধের ব্যাপারে ইসরাইল ও হামাস নতুন অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছাতে পারবে এবং জঙ্গিদের কাছে আটক আরও পণবন্দীকে মুক্ত করতে পারবে। মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন মুখপাত্র এ কথা জানিয়েছেন।

দোহায় আলোচনা শেষে মাজেদ আল আনসারি এই অনুকুল মূল্যায়ন করেন। তবে আনসারি বলেন, “ এখনও সাফল্য ঘোষণার সময় আসেনি”। ঐ আলোচনায় ইসরাইলের গোয়েন্দা প্রধান ডেভিড বার্নিয়াও যোগ দেন।

ছয়-সপ্তাহের জন্য অস্ত্র বিরতি বিবেচনা করা হচ্ছে। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই লড়াইয়ে এটি হবে সম্ভাব্য দ্বিতীয় অস্ত্রবিরতি। প্রথমটি হয়েছিল নভেম্বর মাসে, এক সপ্তাহের জন্য। এই সংঘাতে বিরতি হলে এখনও হামাসের হাতে ১০০’র মতো পণবন্দীর মধ্যে প্রায় ৪০ জনকে মুক্ত করা যাবে। আর এর পরিবর্তে ইসরাইলে কারাবন্দি কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করা হবে। আর এর ফলে ইসরাইল গাজায় আরও খাদ্য ও মানবিক ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে পারবে।

একজন হামাস কর্মকর্তা বলেছেন এই প্রস্তাবিত চুক্তিতে ইসরাইলি বাহিনীকে ‘ সকল শহর ও জন অধ্যূষিত এলাকা’ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন বিস্তারিত বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি এবং এই আলোচনা শেষ হতে বেশ কিছুদিন, এমনকী সপ্তা দুয়েক সময়ও লাগতে পারে। ইতোমধ্যেই কোন কারণ ছাড়াই এই আলোচনার সময়সীমা কয়েক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হয়েছে তবে কোন নিস্পত্তি হয়নি।

এ দিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতেনিয়াহু সাম্প্রতিক দিনগুলিতে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যে রাফাহতে তিনি তাঁর পরিকল্পিত আক্রমণ নিয়ে এগিয়ে যাবেন। গাজা-মিশর সীমান্তবর্তী এই শহরটি থেকে ইসরাইল আরও হামাস জঙ্গিকে উৎখাত করতে চায়।

একই সঙ্গে ইসরাইলের এই নেতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই অনুরোধে রাজি হয়েছেন যে আগামি সপ্তাহের শুরুতে তারা একটি ইসরাইলি প্রতিনিধিদলকে ওয়াশিংটনে পাঠাবেন। রাফাহতে কোন আক্রমণ ছাড়াই এবং ঐ অঞ্চলে আশ্রয় নেয়া দশ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনির সুরক্ষা নিশ্চিত করে ইসরাইল কি ভাবে তার সামরিক লক্ষ্য অর্জন করবে সে নিয়েই এই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হবে।

হামাসের হামলায় ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হয়। ঐ হামলায় ইসরাইলে ১২০০ লোক নিহত হয় এবং হামাস ২৫০ জনকে পণবন্দি করে নিয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন গাজায় ইসরাইলের পাল্টা হামলায় প্রায় ৩২,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয় যাদের দুই –তৃতীয়াংশই ছিল নারী ও শিশু। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে তারা হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাপ

ইসরাইল ও হামাসকে যুদ্ধ বিরতিতে রাজি করাতে যু্তরাষ্ট্র তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এ সপ্তাহে সৌদি আরব ও মিশর সফরে যাচ্ছেন । সেখানে তাদের আলোচনার মূল বিষয় হবে লড়াই থামানো, ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের কাছে আটক পণবন্দিদের মুক্তি এবং যুদ্ধোত্তর গাজার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন।

ফিলিপাইনে তাঁর সফরের সময়ে মঙ্গলবার ব্লিংকেন সংবাদদাতাদের বলেন যে গাজায় সুশাসন, নিরাপত্তা. মানবিক সহযোগিতা এবং পূন:নির্মানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ব্লিংকেন বলেন একটি পরিকল্পনা থাকা এবং এ রকম আশা যে এই সংঘাত যথাশিগগির শেষ হবে সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে বোঝাতে পেরেছে।

গাজায় হামাসের যে কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিহ্ন করতে ইসরাইলের আক্রমণে গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো এবং ঘর-বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

গাজার পরিস্থিতিকে ব্লিংকেন তাঁর কথায় “ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি” বলে বর্ণনা করে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন যেখানে বলা হয়েছে গোটা জনসংখ্যার প্রয়োজন মানবিক সহায়তা।

নিজেকে রক্ষা করার ইসরাইলের অধিকারের প্রতি ব্লিংকেন সমর্থন প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে চান যে এই রকম হামলা যেন আর না ঘটে। তবে তিনি এ কথাও বলেন যে অসামরিক লোকজনকে রক্ষায় অগ্রধিকার প্রদান এবং যাদের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে তাদের সেই রকম সহায়তা প্রদান করা ইসরাইলের “অতি আবশ্যিক কর্তব্য”।

গাজার পরিস্থিতির জন্য ব্লিংকেন হামাসকে দোষারোপ করে বলেন এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠিটি ইসরাইলের উপর হামলা শুরু করে এবং এই যুদ্ধ থেমে যেত যদি হামাস অসামরিক লোকজনের আড়ালে রাখা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতো এবং সকল পণবন্দিকে মুক্ত করতো।

হোয়াইট হাউসে

এক মাসেরও বেশি সময় পরে বাইডেন সোমবার এই প্রথম নেতেনিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন। ইসরাইল যে ভাবে এই যুদ্ধ পরিচালনা করছে এবং রাফাহ আক্রমণ করার ইসরাইলের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান বলেন টেলিফোনে বাইডেন ইসরাইলি নেতাকে বলেন, “ আমরা হামাসকে পরাস্ত করার অভিন্ন লক্ষ্যে আছি । আমরা এটাই শুধু বিশ্বাস করি যে সেটা সম্ভব করার জন্য আপনার কৌশল হবে সমন্বিত ও টেকসই”।

রাফাহতে সব কিছু তছনছ করে প্রবেশ করে স্থল আক্রমণ চালানোর নেতেনিয়াহুর পরিকল্পনাকে সালিভান ভুল বলে বর্ণনা করেন। ঐ অঞ্চলে বিশাল সংখ্যক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন এবং অনেকেই ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নির্দেশেই গাজার উত্তরাঞ্চল ত্যাগ করে রাফাহতে এসেছেন।