গাজার রাফায় অভিযান নিয়ে আলোচনার জন্য ইসরাইলি কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন আসছেন

গাজার রাফায় ইসরাইলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির পাশে আল-রাবায়া পরিবার রমজানের ইফতার তৈরি করছেন। ফটোঃ ১৮ মার্চ, ২০২৪।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার রাফায় অভিযান চালানোর ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের সাথে আলোচনার জন্য তাঁর কর্মকর্তাদের একটি দলকে ওয়াশিংটন পাঠাতে সোমবার সম্মত হয়েছেন। ওয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেন, উভয় পক্ষ “নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য পক্ষের কাছে পরিষ্কার” করে দিতে চাইছে।

সোমবার বাইডেন আর নেতানিয়াহু এক মাসেরও বেশি সময় পর কথা বলার পর রাফা নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপারে সম্মতি আসে। ওয়াইট হাউসের ভাষ্য অনুযায়ী, গাজায় খাদ্য সঙ্কট এবং যুদ্ধের সময় ইসরাইলের কার্যক্রম নিয়ে দুই মিত্র দেশের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে।

সালিভান বলছেন, আগামী দিনগুলিতে আলোচনা হবে, এবং সেখানে সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা এবং মানবিক সাহায্য বিশেষজ্ঞরা জড়িত থাকবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।

ওয়াইট হাউস গাজার দক্ষিণে অবস্থিত রাফায় সামরিক অভিযান নিয়ে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা সম্পর্কে সন্দিহান ছিল। গত ৭ অক্টোবর হামাসের মারাত্মক হামলার পর তাদের নির্মূল করতে ইসরাইলি আক্রমণের মুখে ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি রাফায় আশ্রয় নিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন আর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুঃ এক মাসেরও বেশি সময় পর টেলিফোনে কথা।

সালিভান বলেন, তাদের টেলিফোন আলাপের সময় বাইডেন আবার নেতানিয়াহুকে রাফা অভিযান থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। তিনি বলেন, আসন্ন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা “একটি বিকল্প পথের প্রস্তাব দেবেন, যাতে রাফায় মূল হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে এবং কোন ব্যাপক স্থল অভিযান ছাড়া মিশরের সাথে গাজার সীমান্ত নিরাপদ করা হবে।”

“রাফা অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা আর হামাসকে পরাস্ত করা নিয়ে প্রশ্ন তোলা একই জিনিস – এই ভ্রান্ত ধারনাকে প্রেসিডেন্ট আগে প্রত্যাখ্যান করেছেন, আজকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন,” সালিভান বলেন।

“এটা একেবারেই বাজে কথা। আমাদের অবস্থান হচ্ছে, হামাসকে রাফায় বা অন্য কোথাও নিরাপদ আশ্রয় দেয়া যাবে না, কিন্তু সেখানে বড় মাপের স্থল অভিযান চালানো ভুল হবে। এর ফলে আরও অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাবে, মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে, গাজায় নৈরাজ্য আরও প্রকট হবে এবং বিশ্ব দরবারে ইসরাইল আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে,” তিনি বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করে।

চাক শুমার। ফটোঃ ১৪ মার্চ, ২০২৪।

ইসরাইলে নির্বাচনের আহবান

যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাটিক দলের নেতা চাক শুমার গাজায় যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা এবং ইসরাইলে নতুন নির্বাচনের আহবান জানানোর পর, ওয়াশিংটনে বিরোধী রিপাবলিকান নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।

রিপাবলিকানরা শুমারের সমালোচনা করেন এই বলে যে, তিনি একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারে অলিখিত নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। এর পরই বাইডেন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে কথাবার্তা হয়।

বাইডেন শুমারের আহবান সমর্থন করেন নি, কিন্তু বলেছেন যে, তিনি “ভাল একটি বক্তৃতা” দিয়েছেন যেখানে অনেক আমেরিকানের উদ্বেগের প্রতিফলন ছিল। সালিভান জানান, নতুন নির্বাচনের জন্য শুমারের আহবান নিয়ে নেতানিয়াহু উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাইডেন প্রশাসন হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসরাইলা যদি কোন গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা না দেয়, তাহলে তারা রাফায় কোন অভিযান সমর্থন করবেন না। ওয়াইট হাউস কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরাইল এখনো সেরকম কোন পরিকল্পনা দেয় নি।

'দুর্ভিক্ষ আসন্ন'

বাইডেনের সাথে আলাপ শেষে নেতানিয়াহুর বিবৃতিতে এই চাপা উত্তেজনার কোন উল্লেখ ছিল না।

“আমরা যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করি, যার মধ্যে ছিল যুদ্ধের সকল লক্ষ্য অর্জনে ইসরাইলের সংকল্পঃ হামাসকে নির্মূল, আমাদের সকল জিম্মিকে মুক্ত করা এবং গাজা যাতে আর কখনো ইসরাইলের প্রতি হুমকি না হতে পারে, তা নিশ্চিত করা। একই সাথে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা সরবরাহ করা, যা এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে সাহায্য করবে,” নেতানিয়াহু বলেন।

বাইডেন-নেতানিয়াহু সংলাপ এমন সময় হল, যখন একটি নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, উত্তর গাজায় “দুর্ভিক্ষ আসন্ন”, যেখানে ৭০ শতাংশ মানুষ মারাত্মক অনাহারে আছে, এবং যুদ্ধের আরও সম্প্রসার গাজার অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অনাহারের মুখে ঠেলে দেবে।

গত বছর ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে জঙ্গিরা দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালালে পাঁচ মাস-ব্যাপী এই যুদ্ধ শুরু হয়। হামাস প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা – যাদের বেশির ভাগ বেসামরিক - এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।

জবাবে ইসরাইল সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এবং ধ্বংসাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, ৩১,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি ইসরাইলি আক্রমনে নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। গাজার ২৩ লক্ষ জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ তাদের বসত-বাড়ি থেকে পালিয়েছে।