যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, যে বছর বিশ্বের অর্ধেকের বেশি অংশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কৃত্রিম মেধা-সহ নতুন প্রযুক্তি ভুয়া তথ্যকে আগের চেয়ে অনেক বড় হুমকি করে তুলেছে।
সোওলে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ডেমোক্রেসি সামিটে সোমবার ভাষণ দিতে গিয়ে ব্লিনকেন যোগ করেন, এই সব প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল তথ্য-পরিবেশকে ইতোমধ্যেই নাটকীয়ভাবে গতিশীল করেছে। সেই সঙ্গে এগুলি “মেরুকরণে ইন্ধন জুগিয়ে ভুয়া তথ্য-প্রচারণা বৃদ্ধি করেছে এবং চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে মানুষের মনে যে ভ্রান্ত ধারণা ও বোধ রয়েছে তাকে বাড়িয়ে তুলেছে।”
ব্লিনকেন বলেন, কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকের সময়, ভুয়া তথ্য ও প্রচারণার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। তিনি বলেন, “কখনও এর ফল হয়েছে জীবননাশী।” তাঁর কথায়, জলবায়ু পরিবর্তন আরেকটি উদাহরণ যেখানে সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপের ক্ষেত্রে বিলম্ব করতে সাহায্য করেছে ভুয়া প্রচারণা।
গোটা বিশ্বে অসংখ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ব্লিনকেন ২০২৪ সালকে “একের পর এক দেশে অসাধারণ নির্বাচনী বছর” বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি তিনি সতর্ক করেছেন, নাগরিক ও প্রার্থীরা “মিথ্যাচারের বন্যার মুখোমুখি হবেন, যা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার পথ আটকে দেয়।”
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিরোধীরা ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক দেশের অভ্যন্তরে মত-পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে নেতিবাচক মনোভাব ও অস্থিতিশীলতার বীজ বপন করছে।
পররাষ্ট্র দফতরের ২০২৩ সালের একটি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্লিনকেন। সেই রিপোর্ট বলছে, অপপ্রচার ছড়াতে ও পশ্চিমা সংবাদ সংস্থাগুলিকে দমিয়ে দিতে চীন কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
চীন ও রাশিয়ার উদাহরণ
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আফ্রিকায় টেলিভিশন প্ল্যাটফর্মের স্বত্ব কিনছে চীন যেখানে সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ চ্যানেলগুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা গোপনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিডিয়া সংস্থাগুলিও কিনছে যেখানে তারা ব্যাপক চীনপন্থী সংবাদ পরিবেশন করবে।
ব্লিনকেন আরও বলেন, রাশিয়াও একই কৌশল ব্যবহার করেছে। ইউক্রেনের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থনকে খর্ব করতে দক্ষিণ আমেরিকার চ্যানেলগুলির মাধ্যমে রাশিয়া তাদের নিজস্ব মতামত-সম্বলিত বিষয় “পাচার” করছে।
ব্লিনকেন তার ভাষণে জোর দিয়েছেন যে, সরকারকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের (অনলাইন ও অফলাইন) নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে কারণ স্বতন্ত্র ও ক্ষমতায়িত গণমাধ্যম সুস্থ গণতন্ত্রের ভিত্তি।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে এই ডেমোক্রেসি সামিট শুরু করেছিল। এই শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচার এবং গণতন্ত্র কীভাবে জনগণকে উন্নততর পরিষেবা দিতে পারে তা তুলে ধরা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতি অনু্যায়ী, ৭০টিরও বেশি দেশ গণতন্ত্র বিষয়ে সামিটের ঘোষণাকে অনুমোদন করেছে।