নিজের সহযোগিতা বন্ধ করায়, পশ্চিম আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস-বিরোধী কার্যক্রম ঝুঁকির মুখে

টেলিভিশন (ওআরটিএন) এর ভিডিও থেকে নেয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নিজের সামরিক বাহিনীর কর্নেল মেজর আমাদু আব্দরামানে অভ্যুথান ঘোষণা করছেন। ফটোঃ ২৬ জুলাই, ২০২৩।

পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্র নিজের-এর সামরিক জান্তা ওয়াশিংটনের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাতিল করার ঘোষণা দেবার পর, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রবিবার সাহেল অঞ্চলে তাদের সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নিজের সফরের পর দেশের সরকার এই ঘোষণা দেয়।

নিজেরের উত্তরে একটি বড় বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের শত শত সৈন্য রয়েছে। এই ঘাঁটি থেকে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে সাহেল অঞ্চলে বিমান টহল দেয়া হয়, যেখানে আল-কায়েদা এবং ইসলামিক ষ্টেট-এর সাথে সম্পৃক্ত জিহাদি গোষ্ঠী তৎপর।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দূত মলি ফি নিজেরের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার জন্য এই সপ্তাহে রাজধানী নিয়ামে-তে ফিরে আসেন। তাঁর সাথে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ডের মারিন জেনেরাল মাইকেল ল্যাংলি।

মলি ফি এর আগে ডিসেম্বরে এসেছিলেন, আর ডেপুটি সেক্রেটারি অফ ষ্টেট ভিক্টোরিয়া নুলান্ড অগাস্ট মাসে নিজের-এ এসেছিলেন।

সামজাকি মাধ্যম এক্স (আগের নাম টুইটার)-এ দেয়া এক পোস্টে আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতর বলে, ‘খোলা-খুলি’ আলোচনা হয়েছে এবং তারা জান্তার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখছে। তবে, নিজেরে থেকে যাবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দরকষাকষি করার আর কোন পথ আছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।

জান্তা নেতা জেনেরাল আব্দুরাহমানে চিয়ানি

এই অস্থিতিশীল অঞ্চলে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা জিহাদি গোষ্ঠীগুলোকে হারানোর জন্য পশ্চিমা দেশগুলো নিজেরকে তাদের অংশীদার দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে দেখত। কিছু দিন আগে পর্যন্ত, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স-এর ২,৫০০ সামরিক সদস্য মোতায়েন ছিল। অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোর সাথে তারা সামরিক সাহায্য এবং প্রশিক্ষণে লক্ষ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করেছে।

কিন্তু এসব জুলাই মাসে বদলে যায়, যখন বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। কয়েক মাস পর তারা ফরাসি বাহিনীকে নিজের ছেড়ে চলে যেতে বলে।

আকাশ থেকে নজরদারি

কংগ্রেসকে দেয়া ওয়াইট হাউসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫০ জন সামরিক সদস্য নিজের-এ অবস্থান করছিল। নিজের-এর ঘাঁটি ব্যবহার করে পাইলট-চালিত এবং পাইলট-বিহীন, দু’ধরনের আকাশযান দিয়ে নজরদারি করা হয়।

সাহেল অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, অভিযানে অংশ নেয়া সহ পদাতিক সৈন্যদেরও সাহায্য করে থাকে। তবে, নিজের-এ ২০১৭ সালে এক যৌথ অভিযানের সময় আমেরিকান সৈন্য নিহত হবার পর সরাসরি অংশগ্রহণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

মালী, বুরকিনা ফাসো আর নিজের নিয়ে সাহেল অঞ্চলে নতুন জোটের পক্ষে বামাকোতে বিক্ষোভ। ফটোঃ ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

সামরিক সম্পর্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জান্তা কেন নিলো, তা পরিষ্কার না। জান্তা মুখপাত্র কর্নেল মেজর আমাদু আব্দরামানে বলেন, সাম্প্রকিত সপ্তাহগুলোতে নিজেরের সিমানার ভেতরে আমেরিকান বিমানের ফ্লাইট বেআইনি ছিল।

ইন্সা গারবা সাইদু, যিনি নিজেরের সামরিক শাসকদের গণসংযোগ বিষয়ে সহায়তা করেন, যুক্তরাষ্ট্রর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজেরকে এক কৌশলগত অংশীদারের বদলে আরেকটি বেছে নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।

“আমেরিকান ঘাঁটি আর তাদের বেসামরিক লোকজন আর নিজেরের মাটিতে থাকতে পারবে না,” তিনি এপিকে বলেন।

ডিসেম্বরে তাঁর সফরের পর ফি, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দূত, সংবাদদাতাদের বলেন, জান্তা নেতাদের সাথে “ভাল আলোচনা” হয়েছে। তিনি সামরিক সম্পর্ক এবং ত্রাণ সাহায্য পুনরায় শুরু করার বিনিময়ে দেশে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করার আহবান জানান।

তবে তিনি বলেন যে, রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ামেকে সাবধান করে দিয়েছে।

মালী আর বুরকিনা ফাসো

প্রতিবেশী মালী এবং বুরকিনা ফাসো, যেখানে ২০২০ সালের পর দুটি সামরিক অভ্যুথান হয়েছে, নিরাপত্তা সাহায্যের জন্য মস্কোর দিকে ঝুঁকেছে। নিজেরে অভ্যুথানের পর সামরিক বাহিনী সাহায্যের জন্য রাশিয়ান ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে।

ক্যামেরন হাডসন, যিনি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এবং ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর জন্য আফ্রিকায় কাজ করেছেন, বলেন যে, এই ঘটনা দেখিয়েছে এই অঞ্চলে আমেরিকার উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষমতা কতটুকু হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, জান্তাকে রাশিয়ার কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য ওয়াশিংটনের চাপ প্রয়োগের চেষ্টা তাদের ক্ষুব্ধ করেছে।

“এটা বেশ বিপরীতমুখী কারণ, বাইডেন প্রশাসনের একটি ঘোষিত নীতি হচ্ছে, আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনভাবে তাদের অংশীদার বাছাই করতে পারবে,” তিনি বলেন।

মুসলিমদের জন্য পবিত্র মাস রমজান, যখন তারা রোজা রাখেন এবং নামাজের দিকে মনোনিবেশ করেন, সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল সফরে আসে। জান্তা নেতা জেনেরাল আব্দুরাহমানে চিয়ানি আমেরিকান প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেন। নিজের-এ আমেরিকান দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রর কূটনীতি নিয়ে প্রশ্ন

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জান্তা মুখপাত্র বলেন, জান্তা সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সাথে “শুধুমাত্র ভদ্রতার কারণে” দেখা করেছেন। তিনি আমেরিকানদের কথা বলার ধরনের সমালোচনা করেন।

ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর প্রাক্তন একজন আফ্রিকা বিশেষজ্ঞ অ্যানেলিস বারনার্ড বলেন, সাম্প্রতিক এই সফর ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রর উচিত তারা কিভাবে কূটনীতি চালাচ্ছে, শুধু নিজের-এ না, গোটা অঞ্চলে, তা গভীর ভাবে পর্যালোচনা করা।

“যুক্তরাষ্ট্রের সরকার অনেক সময় চোখ বেঁধে কাজ করে। নিজের এবং সাহেল অঞ্চলে কী হচ্ছে, তা সব সময় একটা শূন্যের মধ্যে হয় না,” তিনি বলেন।

“আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই যে, উপসাগর, ইসরাইল এবং অন্যান্য জায়গায় আমাদের সম্পর্কের অবনতি, পশ্চিম আফ্রিকায় আমাদের দিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে,” বারনার্ড বলেন।