ইসরাইল হামাসঃ গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা কাতারে পুনরায় শুরু হবার সম্ভাবনা 

গাজার রাফায় বিধ্বস্ত আল-ফারুক মসজিদের পাশে ফিলিস্তিনি শিশু। ফটোঃ ১৭ মার্চ, ২০২৪।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে স্থগিত হয়ে যাওয়া আলোচনা রবিবার কাতারে জোরালোভাবে শুরু হবে বলে মিশরীয় কর্মকর্তারা ধারনা করছেন। তবে তা সোমবার পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে।

মিশরীয় দুজন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের তিন স্তরের নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হবে। কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন, কারণ তাদেরকে সংবেদনশীল আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয়নি।

প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হবে। এতে ইসরাইলের হাতে আটক ৩৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে গাজায় জঙ্গিদের হাতে আটক নারী, অসুস্থ ও বৃদ্ধ ৩৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবে।

হামাস প্রত্যেক সেনার জন্য ৫০ জন বন্দির বিনিময়ে কমপক্ষে পাঁচজন নারী সেনাকে মুক্তি দেবে। হামাসের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরাইলের বাহিনী গাজার দুটি প্রধান সড়ক থেকে সরে যাবে, লড়াইয়ে বিধ্বস্ত গাজার উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ফিরে যেতে দেবে এবং ওই অঞ্চলে অবাধ ত্রাণ প্রবাহের অনুমতি দেবে, কর্মকর্তারা বলছেন।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা শুক্রবার জানায়, বিচ্ছিন্ন উত্তরাঞ্চলে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপে উভয় পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করবে এবং হামাস আরও বন্দির বিনিয়মে জিম্মি থাকা অবশিষ্ট ইসরাইলি সেনাদের মুক্তি দেবে।

তৃতীয় দফায় ইসরাইল গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে পুনর্গঠন শুরু করার অনুমতি দিলে হামাস তার হাতে থাকা মৃতদেহগুলো হস্তান্তর করবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব’ বলে অভিহিত করলেও কাতারে ইসরাইলি আলোচক পাঠাতে সম্মত হয়েছেন। তাঁর সরকার স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে জোর দিয়ে বলেছে, প্রথমে ‘হামাসকে নির্মূল করার’ ঘোষিত লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।

গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ লোককে হত্যা এবং ২৫০জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাবার পর, ইসরাইল ফিলিস্তিনি জঙ্গি সংগঠনটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

ইসরাইলের ব্যাপক বিমান এবং স্থল আক্রমণে গাজার বিভন্ন এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ভূখণ্ডের ২৩ লক্ষ বাসিন্দার ৮০ শতাংশ বাস্তচ্যুত হয়েছে যার ফলে চরম এক মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে।

খাদ্য বোঝাই একটি ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন বজরা গাজায় পৌঁছেছে। ইসরাইলের সামরিক অভিযানের পাঁচ মাস পর সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে। (ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী/রয়টার্সের মাধ্যমে হ্যান্ডআউট)। ফটোঃ ১৫ মার্চ, ২০২৪ সালে।

সমুদ্রপথে ত্রাণ সরবরাহ

হামাস ছয় সপ্তাহের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করার পর, সাইপ্রাস থেকে একটি নতুন সামুদ্রিক করিডোর দিয়ে আসা একটি ত্রাণবাহী জাহাজ শুক্রবার গাজায় খাদ্যদ্রব্য নামানো শুরু করেছে। গাজার জনগণ মরিয়া হয়ে খাদ্যের অপেক্ষায় থাকে।

এএফপি ফুটেজ অনুযায়ী, ওপেন আর্মস নামের একটি জাহাজ একটি বজরা টেনে মঙ্গলবার সাইপ্রাস থেকে যাত্রা শুরু করে। একই নামের স্প্যানিশ দাতব্য সংস্থা মতে,এটি পাঁচ মাসেরও বেশি যুদ্ধের পরে দুর্ভিক্ষের হুমকির মুখোমুখি গাজাবাসীদের জন্য দুইশত টন খাদ্য বহন করছে।

ওপেন আর্মসের সাথে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থা, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন জানায় তারা লার্নাকার সাইপ্রিয়ট বন্দরে শিম, টিনজাত মাংস, ময়দা, চাল এবং খেজুরের সরবরাহ সহ আরেকটি জাহাজ প্রস্তুত করছে। তবে, তারা গাজায় সাহায্য আনার জন্য আরও স্থল পথে প্রবেশের সুবিধার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলে, জাহাজটি থেকে মাল খালাসের সময়ে তারা জেটির চারপাশের "অঞ্চল সুরক্ষিত" করার জন্য সৈন্য মোতায়েন করেছিল। তারা বলে, "জাহাজটি একটি ব্যাপক নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্যে দিয়ে গেছে।"

রমজানের প্রথম শুক্রবার

রমজানের প্রথম শুক্রবার হাজার হাজার মুসলমান প্রচন্ড নিরাপত্তা এবং প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে ইসরাইল-অধিভুক্ত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে অংশ নেয়।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শুক্রবার বলে, তিনি রাফায় একটি অভিযানের জন্য সামরিক বাহিনীর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। তবে অভিযান নিয়ে কোনও বিশদ বিবরণ বা সময়রেখা প্রদান করা হয়নি। রাফায় গাজা ভূখন্ডের বেশিরভাগ লোক আশ্রয় নিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা, যাদের মতে নির্ভরযোগ্য বেসামরিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা ছাড়া রাফাতে হামলা একটি "লাল রেখা" হবে, তারা বলেন নেতানিয়াহু কর্তৃক অনুমোদিত পরিকল্পনাটি তারা দেখেননি।

গাজার ২৩ কোটি মানুষকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের মাত্র একটি ভগ্নাংশ পৌছাচ্ছে। আর তাই আসন্ন দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করেছে।

সড়কপথে ত্রাণবাহী স্বল্প সংখ্যক ট্রাক প্রবেশ করায়, বিমান ও সমুদ্রপথে ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রচেষ্টা বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে।

গাজার নিকটতম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ সাইপ্রাসও বলেছে তারা একটি দ্বিতীয়, বড় ত্রাণবাহী জাহাজ প্রস্তুত করছে।