ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন ৩০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য পাঠাবে

ডনেটস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনিয় সৈন্যদের রকেট নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিতে দেখা যাচ্ছে। ফটোঃ ৫ মার্চ, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্র ৩০ কোটি ডলারের নতুন একটি সামরিক সাহায্য প্যাকেজ ইউক্রেনকে দেবে বলে এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে। ডিসেম্বরের পর এই প্রথম এরকম এক ঘোষণা আসলো। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর অস্ত্র কেনার ব্যয়ে সাশ্রয়ের মাধ্যমে এই ‘এড হক’ প্যাকেজ সম্ভব হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান মঙ্গলবার ওয়াইট হাউসে এই প্যাকেজ ঘোষণা করে বলেন, প্যাকেজে আর্টিলারি আর হিমারস রকেট লঞ্চারের জন্য গোলাবারুদ থাকবে, যা ইউক্রেনের ফ্রন্ট লাইনে খুব জরুরি প্রয়োজন।

ওয়াইট হাউসে ঘোষণার আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা সংবাদদাতাদের বলেন, “কয়েক মাস ধরে, কয়েকটি ক্রয় চুক্তি” নিয়ে দরকষাকষি করে সেনাবাহিনী বাজেটে বরাদ্দ দামের চেয়ে “আরও কম দামে বেশ কিছু জিনিস” কিনতে পেরেছে, যার ফলে সাশ্রয় হয়েছে।

“এটা বেশ ‘এড হক’ বা এককালীন ব্যাপার। আমরা জানি না ভবিষ্যতে কখন বা আদৌ আর কোন সাশ্রয় হবে কি না। এবং আমরা নিশ্চয় এভাবেই আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবো না,” প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের একজন বলেন।

একটি উদাহরণ অনুযায়ী, ২৫মিমি কামানের গোলার দাম প্রাথমিকভাবে ১৩০ ডলার ধরা হয়েছিল। কিন্তু দরকষাকষি করে সেটা কমিয়ে ৯৩ ডলার করা সম্ভব হয়।

বেঁচে যাওয়া অর্থ তখন ইউক্রেনের জন্য আমেরিকান সাহায্যের তহবিলে রাখা হয়। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রক্রিয়া আগেও কয়েকবার হয়েছে কিন্তু তখন তহবিলে টাকা ছিল, তাই সেটা খবর করার মত কিছু ছিল না।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের সময়। ফাইল ফটো।

১০০০ কোটি ডলার ঘাটতি

নতুন এই সাহায্য প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে যখন পেন্টাগন নিজেই ১,০০০ কোটি ডলারের ঘাটতির মুখে। ইউক্রেনকে ইতোমধ্যে যে অস্ত্র আমেরিকার নিজস্ব ভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর জন্য পুনরায় সংগ্রহ করার জন্য এই অর্থ প্রয়োজন। এই ঘাটতি মেটাতে তাদের কংগ্রেসের কাছে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে হবে, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পেন্টাগন কর্মকর্তারা ধারনা করেছিলেন যে, বাইডেন প্রশাসন কংগ্রেসের কাছে যে সম্পূরক তহবিলের অনুরোধ করেছিলেন, সেখান থেকেই সেনাবাহিনীর অস্ত্রের মজুত পুনরায় ভরার টাকা আসবে।

কিন্তু সেই সম্পূরক অনুরোধে, ইউক্রেন, ইসরাইল এবং তাইওয়ানের জন্যও হাজার হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত সাহায্য চাওয়া হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের সাথে সরকারি অর্থ ব্যয় এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে মতবিরোধের কারণে কংগ্রেস এই সম্পূরক সাহায্য বিল অনুমোদন করেনি।

ইউক্রেনের জন্য কংগ্রেস শেষবার অর্থ অনুমোদন করে ১৫ মাস আগে। সেকারণে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন ভবিষ্যতে টাকা তোলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রতিরক্ষা বিভাগের হাতে এখনো ইউক্রেনকে অস্ত্র পাঠানোর জন্য ৪০০ কোটি ডলারের অনুমোদিত তহবিল আছে। কিন্তু পেন্টাগনের অস্ত্র মজুত পূর্ণ করার জন্য কংগ্রেস থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের অনুমোদন তাদের নেই।

“আমরা আমাদের মজুত থেকে অর্থ বরাদ্দ করতে পারি, কিন্তু সেটা আবার পূরণ করার সামর্থ্য ছাড়াই। এর ফলে, আমাদের নিজস্ব প্রস্তুতি বেশ ঝুঁকির মুখে পরবে,” একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন।

ভিওএ প্রশ্ন করে, পেন্টাগন কেন তাদের সাশ্রয় ব্যবহার করে ইউক্রেনকে আরও সাহায্য পাঠাচ্ছে, কিন্তু অনুমোদিত ৪০০ কোটি ডলারে হাত দিতে রাজি হচ্ছে না? জবাবে একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সংবাদদাতাদের বলেন, যেহেতু কংগ্রেস বাড়তি সাহায্য অনুমোদন করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়, তাই পেন্টাগন “গর্ত আরও গভীর করতে অনিচ্ছুক।”

“এই মুহূর্তে, আমার গর্তের আরও গভীরে খুঁড়ছি না, আমরা সমান থাকছি। তবে একই সময় আমরা স্বীকার করছি যে ইউক্রেন এই মুহূর্তে খুব কঠিন জায়গায় আছে,” তিনি বলেন।