অরুণাচল প্রদেশে মোদির সফর: ভারত-চীন বিবাদ

ফাইল: ভারতের অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং ‘এ গৌতম বুদ্ধের মূর্তি দেখা যাচ্ছে। এপ্রিল৯,২০১৭।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশে সফর সম্পর্কে চীনের আপত্তিকে ভারত নাকচ করে দিয়েছে। চীন অরুণাচল প্রদেশকে তাদের নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করে।

এই দুই দেশের মধ্যে চার বছর ধরে সামরিক অচলাবস্থায় এই বিবাদ হচ্ছে সর্বসাম্প্রতিক উত্তেজনা।

মোদির এই সফর সম্পর্কে বেইজিং কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানানোর এক দিন পরই , ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র রান্ধির জায়সওয়াল বলেন যে চীনের আপত্তি, “ এই বাস্তবতা বদলে দেয় না যে অরুণাচল প্রদেশ বরাবরই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং সব সময়ে তাই থাকবে”।

৪,০০০ মিটার উপরে দুই লেনের একটি টানেল উদ্বোধনের জন্য মোদি ঐ হিমালয় রাজ্য সফর করেন। এই টানেল দূরবর্তী এলাকার সঙ্গে সারা বছর পরিবহনের সংযোগ প্রদান করবে এবং ঐ সীমান্তবর্তী রাজ্যে সেনাবাহিনী ও সামরিক সাজসরঞ্জাম বহন করার সুবিধা সৃষ্টি করবে। সেখানেই উভয় দেশের সৈন্যরা সমবেত রয়েছে। মোদি আরও কয়েকটি অন্যান্য পরিকাঠামোগত প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেন যার মধ্যে রয়েছে রাস্তা নির্মাণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন।

চীনের সঙ্গে ভারতের ৩,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই দিল্লি ঐ হিমালয় অঞ্চলে আরও অনেকগুলো অবকাঠামোগত প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করতে চায় যেমন রাস্তা ও সেতু নির্মাণ।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন সোমবার সংবাদদাতাদের বলেন যে বেইজিং ভারতীয় নেতার অরুণাচল প্রদেশ সফরকে “ কড়া ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছে এবং কঠোর ভাবে এর বিরোধিতা করছে। চীন অরুণাচল প্রদেশকে জাঙ্গনান বলে উল্লেখ করে বলেছে, “চীনের জাঙ্গনান অঞ্চলে একতরফা ভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম চালানোর কোন অধিকার ভারতের নেই”।

তিনি বলেন “ ভারতের এ ধরণের পদক্ষেপ সীমান্ত সংক্রান্ত প্রশ্নকে আরও জটিল করে তুলবে এবং দু দেশের সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতিতে আরও বিঘ্ন সৃষ্টি করবে।

জাসওয়াল চীনের প্রতিবাদকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, “ অন্যান্য রাজ্যের মতো বিভিন্ন সময়ে ভারতীয় নেতারা অরুণাচল প্রদেশও পরিদর্শন করেন। এই ধরণের সফর কিংবা উন্নয়মূলক প্রকল্প নিয়ে আপত্তি জানানোর কোন যুক্তি নেই।

অতীতেও চীন অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় নেতাদের সফর নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে কিন্তু গত বছর থেকে ঐ অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর আগস্ট মাসে ভারত চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় যখন জানা যায় যে চীন একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে এই রাজ্যটিকে তাদের অঞ্চলের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

এশিয়ার এই দুটি বৃহৎ দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ছয় দশকে নিম্নতম স্তরে পৌঁছায় যখন ২০২০ সালে সীমান্তের পশ্চিমাঞ্চলে তাদের সৈন্যরা সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যাতে ২০ জন ভারতীয় ও ৪ জন চীনা সৈন্য নিহত হয়।

সেই থেকে উভয় পক্ষ তাদের সীমান্তে হাজার হাজার সৈন্য মোতায়েন করে। আর তাদের সাহায্যের জন্য যুদ্ধ বিমান, গোলন্দাজ বাহিনী ও ট্যাংক মোতায়েন করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন উত্তেজনা কমানোর জন্য দু পক্ষের প্রচেষ্টাই প্রধানত ব্যর্থ হয়েছে তবে সৈন্যরা পাঁচটি সাংঘর্ষিক স্থান থেকে সরে এসেছে যদিও সীমান্তে সেনা মোতায়েনের সংখ্যা এখনও অনেক বেশি।