রবিবার (১০ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস আঞ্জেলেস শহরের অনুষ্ঠিত হচ্ছে একাডেমী এওয়ার্ডস বা অস্কারের ৯৬ তম পর্ব। প্রায় এক শতকে অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রি, পরিচালক- প্রযোজক পুরষ্কার পেয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের রেকর্ড গড়েছেন। এখানে অস্কার সম্পর্কে ছয়টি তথ্যঃ
প্রথম অস্কার আর বর্তমানের অস্কার
একাডেমী এ্যাওয়ার্ড অফ মেরিট পুরষ্কারটি দেয় আমেরিকার একাডেমী অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। যে সোনালি মূর্তি বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে বিজয়ীদের দেয়া হয় তার নাম ‘অস্কার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। অস্কার প্রথম দেয়া হয় ১৯২৯ সালের ১৬ মে। হলিউড রুজভেল্ট হোটেলে ২৭০ জন অতিথির উপস্থিতিতে এক নৈশভোজের মাধ্যমে প্রথম অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়। পুরষ্কার দেয়া হয়েছিল ১৩টি ক্যাটেগরিতে।
অস্কারের ৯৬তম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালের ১০ মার্চ, লস আঞ্জেলেস শহরের সুপরিচিত মহল্লা হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। ধারনা করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। পুরষ্কার দেয়া হবে ২৩টি ক্যাটেগরিতে।
প্রথম কৃশাঙ্গ অস্কার জয়ী কে?
হ্যাটি ম্যাকড্যানিয়েল-এর নাম আজ অনেকের মনে নেই। কিন্তু মিস ম্যাকড্যানিয়েল ‘সেরা সহকারী অভিনেত্রী’ ক্যাটেগরিতে অস্কার পেয়েছিলেন ১৯৪০ সালে, ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ ফিল্মে ম্যামি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। মিস ম্যাকড্যানিয়েল ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ যিনি অস্কার পুরষ্কার লাভ করেন।
কিন্তু দীর্ঘ ২৫ বছর আর কোন কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা বা অভিনেত্রী অস্কার পান নি। সাফল্য আসে ১৯৬৪ সালে, যখন সিডনি পইটিয়ের ‘লিলিস অফ দ্য ফিল্ড’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা ক্যাটেগরিতে অস্কার লাভ করেন।
সেরা অভিনেত্রী ক্যাটেগরিতে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী অস্কার পান ২০০১ সালে, যখন হ্যালে বেরি ‘মনসটার’স বল’ ফিল্মে অভিনয়ের জন্য পুরস্কৃত হন। একই বছর, ডেনযেল ওয়াশিংটন ‘ট্রেইনিং ডে’ ফিল্মে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা অস্কার পান।
এর পরে সেরা অভিনেতা ক্যাটেগরিতে আরও তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ অস্কার পেয়েছেন। সেরা সহকারী অভিনেতা ক্যাটেগোরিতে কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতারা ৭ বার পুরস্কৃত হয়েছেন। হ্যাটি ম্যাকড্যানিয়েল-এর পর ৫০ বছর কোন কৃষ্ণাঙ্গ নারী ‘সেরা সহকারী অভিনেত্রী’ ক্যাটেগরিতে অস্কার পান নি। তবে ১৯৯০ সালের পর ৭জন সেই অস্কার পেয়েছেন।
অস্কারে সবচেয়ে চমক লাগানো সিনেমা
পুরষ্কার জয়ের ক্ষেত্রে ২০০৪ সালে পিটার জ্যাকসনের ব্লকবাস্টার ফিল্ম ‘দ্য লর্ড অফ দ্য রিংসঃ দ্য রিটার্ন অফ দ্য কিং’ -এর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। ব্যক্তিগত অভিনয়ের কোন ক্যাটেগরিতে এই ফিল্মের কেউ মনোনয়ন পান নি। কিন্তু সেরা ফিল্ম এবং সেরা পরিচালক সহ যে ১১টি ক্যাটেগরিতে ‘দ্য রিটার্ন অফ দ্য কিং’ মনোনয়ন পেয়েছিল, তার সবগুলোতেই অস্কার লাভ করে জেআরআর টল্কিনের বই ‘দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস’ অবলম্বনে তিন পর্বের সিনেমার এই শেষ পর্ব।
তবে ‘দ্য রিটার্ন অফ দ্য কিং’ ছাড়া আরও দুটি সিনেমা ১১টি অস্কার লাভ করেছে।
প্রথমে আসে চারলটন হেসটন অভিনীত, উইলিয়াম অয়াইলার পরিচালিত ব্লকবাস্টার ‘বেন হার’, যেটা ১৯৬০ সালে ১২টি ক্যাটেগরিতে মনোনীত হয়ে ১১টি অস্কার লাভ করে। তার প্রায় চার দশক পর, জেমস ক্যামেরনের ‘টাইটানিক’ ১১টি অস্কার জয় করে, যদিও তারা ১৪টি ক্যাটেগোরিতে মনোনয়ন পেয়েছিল।
বিগ ফাইভ কারা পেয়েছে?
একাডেমী এ্যাওয়ার্ডসে পাঁচটি ক্যাটেগরিকে ‘বিগ ফাইভ’ গণ্য করা হয়ঃ সেরা ফিল্ম, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী এবং সেরা চিত্রনাট্য। অস্কারের ৯৫ বছরের ইতিহাসে মাত্র তিনটি সিনেমা এই বিগ ফাইভ একযোগে পেয়েছে।
প্রথমে, ১৯৩৫ সালে ক্লার্ক গেবল-ক্লডেট কোলবারট অভিনীত ও ফ্রাঙ্ক কাপরা পরিচালিত ‘ইট হ্যাপেনড ওয়ান নাইট’। চার দশক পরে ১৯৭৬ সালের অস্কার অনুষ্ঠানে জ্যাক নিকলসন-লুইস ফ্লেচার অভিনীত ও মিলোশ ফোরম্যান পরিচালিত ‘ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কাক্কু’স নেস্ট’ বিগ ফাইভ পুরষ্কার জয় করে। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে, অ্যান্টনি হপকিন্স-জোডি ফসটার অভিনীত ও জনাথান ডেমে পরিচালিত ‘দ্য সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্ব’ পাঁচটি বড় পুরষ্কার জয় করে।
ব্যক্তিগত পুরষ্কার কার বেশি?
ব্যক্তিগত পুরষ্কারের কথা উঠলেই, সেরা অভিনেতা, অভিনেত্রী বা বড়জোর সেরা পরিচালকের প্রসঙ্গ সামনে আসে। কিন্তু অস্কার ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত পুরষ্কার পেয়েছেন যে ব্যক্তি, তিনি চিরকাল ছিলেন পর্দার আড়ালে। একজন ফিল্ম প্রযোজক যিনি আমেরিকান কার্টুন শিল্পের পথিকৃৎ, মিকি মাউস-এর স্রষ্টা, সেই ওয়াল্ট ডিসনি ২২ বার অস্কার পুরষ্কার পেয়েছেন, মনোনীত হয়েছেন ৫৯ বার।
ডিসনির আরেকটি রেকর্ড হল, ১৯৫৪ সালে তিনি ৬টি অস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে ৪টি জয় করেন। একই বছর এত সংখ্যক অস্কার তাঁর আগে বা পরে কেউ পান নি।
পরিচালকদের মধ্যে জন ফোর্ড ৪ বার অস্কার পেয়েছেন আর ক্ল্যাথেরিন হেপবার্ন ৪ বার পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী পুরষ্কার। তা ছাড়া, সেরা সঙ্গীত রচনা বা ‘বেস্ট অরিজিনাল স্কোর’ ক্যাটেগরিতে আলফ্রেড নিউম্যান ৯ বার অস্কার পেয়েছেন।
সেড্রিক গিবন্স, যিনি অস্কার পুরষ্কারের মূর্তি বা স্টাচুয়েট-এর নকশা এঁকেছেন, তিনি আর্ট ডিরেকশনে ১১ বার অস্কার পেয়েছেন। নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত অস্কার পেয়েছেন ইডিথ হেড, যিনি ‘বেস্ট কস্টিউম ডিসাইন’ ক্যাটেগরিতে ৮ বার অস্কার পেয়েছেন।
অস্কারে ভারতীয় সিনেমা
সিনেমা জগতে সত্যজিৎ রায় যে সবচেয়ে পরিচিত ভারতীয়, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অস্কার ইতিহাসে তিনিই প্রথম ভারতীয় ছিলেন না। কোন ভারতীয়র জন্য প্রথম অস্কার পুরষ্কার আসে ১৯৮৩ সালে। ভানু আথাইয়া ‘গান্ধী’ সিনেমায় বেস্ট কস্টিউম ডিজাইন ক্যাটেগরিতে অস্কার পান।
সত্যজিৎ রায়-এর অস্কার আসে ১৯৯২ সালে, তবে পুরষ্কারটি কোন নির্দিষ্ট ফিল্মের জন্য ছিল না। সিনেমায় তাঁর অর্জন এবং অবদানের জন্য রায়কে ‘লাইফটাইম অ্যায়চিভমেন্ট’ অস্কার দেয়া হয়।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্ম নেয়া সত্যজিৎ রায় শুধু একজন পরিচালক ছিলেন না। তিনি একেধারে চিত্রনাট্যকার, লেখক, গীতিকার, সুরকার, ডকুমেন্টারি নির্মাতা, ইলাস্ট্রেটর এবং ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। শুধু ভারতীয় সিনেমা নয়, রায়কে বিশ্ব সিনেমায় সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম গণ্য করা হয়।