গাজা যুদ্ধের কারণে জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের 'কালো রমজানের' আশঙ্কা

ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে একটি বাজারের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। ৭ মার্চ, ২০২৪।

রমজান মাসে, মুসলিমদের সিয়াম (সংযম) সাধনার প্রাক্কালে, জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে উৎমবের খুব কম ছাপ পড়েছে।

গুহা আকৃতির উপহারের দোকানগুলো প্রায় অর্ধেক ধাতব শাটার দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদের দিকে যাওয়ার যে সরু রাস্তাগুলো রয়েছে, সেগুলো একদম ফাঁকা। ঝারবাতি আর চকচকে লণ্ঠনগুলো অনুপস্থিত। সাধারণ সময়ে তাড়াহুড়ো করে যাওয়া মুসল্লিদের মাথার ওপর এগুলো দুলতে থাকে।

কয়েক দশকের পুরনো ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র জেরুজালেম। এই শহরের রমজানের প্রস্তুতি গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের কারণে ম্লান হয়ে পড়েছে। গাজা যুদ্ধ এখন ষষ্ঠ মাসে গড়িয়েছে।

গাজায় ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় আছে। তাই, এখানকার মানুষের মধ্যে আনন্দ প্রকাশের কোনো অনুভূতি কাজ করছেনা।

ওল্ড সিটির অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার দামেস্ক গেটের কাছে, তার কফি স্ট্যান্ডের সামনে দাড়িঁয়ে আবু মুসাম হাদ্দাদ বলেন, “এটি হবে কালো রমজান।”

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মনোযোগ গাজা থেকে আল আকসায় সরে যেতে পারে। কেননা, এর আগে, অনেক দিন থেকেই এ এলাকাটি ছিলো ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রধান কেন্দ্রস্থল।

হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালায়। আর, তারা এই হামলা চালায় আল-আকসায় মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধের অংশ হিসেবে। এখন গাজা যুদ্ধ বিরতির উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে এবং ইসরাইলকে অন্য যুদ্ধাঞ্চলে যুক্ত করতে, নতুন ‍যুদ্ধাঞ্চল সন্ধান করছে হামাস এবং তারা একটি উত্তেজক ঘটনা চাইছে।

বিদ্রোহীরা, ইসরাইল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রার্থণা ও চলাচলের ওপর প্রত্যাশিত ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে মসজিদে যাওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছে।

যদিও অতীতে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রায়শই সংঘর্ষের কারণ হয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে, ফিলিস্তিনিরা বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলেই সংঘর্ষের ঝুঁকি নেবে কিনা।যখন কি-না ইসরাইলি বাহিনী যেকোনো সম্ভাব্য হুমকির মোকাবেলায় কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।

ওল্ড সিটির বাইরে একটি বইয়ের দোকানের মালিক ইমাদ মোনা বলেন, “এবছর রমজান মাসটি কেমন হবে তা নির্ভর করছে শহরে প্রবেশ এবং বের হওয়ার বিষয়ে ইসরাইলি পুলিশ কী আচরণ করবে, তার ওপর; আর, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে।

ইসরাইল বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন মাত্রায় আল-আকসায় প্রবেশ সীমিত করেছে যার মধ্যে রয়েছে, নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে যুবকদের প্রবেশে বাধা দেয়া।

ইসরাইলের সরকার এই বছরের রমজানের আগে বিস্তারিত বিধি-বিধান প্রকাশ করেছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই এগুলো কার্যকর হওয়ার কথা। তবে এতে বলা হয়েছে,পশ্চিম তীরের কিছু ফিলিস্তিনিকে আল-আকসায় নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হবে।

এই চত্বরটি দীর্ঘকাল ধরে একটি গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। কারণ এটি টেম্পল মাউন্ট-এর ওপর অবস্থিত। এই স্থানকে ইহুদিরা তাদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান বলে মনে করে।

চত্বরটি পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত; শহরের একটি অংশ; যা ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময়ইসরাইল দখল করে নেয় এবং পরে তাদের রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে ঘোষণা করে।

ফিলিস্তিনিরা এই শহরকে তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা রমজানশুরু হওয়ার সাথে সাথে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে, এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ওল্ড সিটির বেশিরভাগ দোকান মালিকরা আসন্ন রমজান সম্পর্কে তাদের মতামত জানাতে অস্বীকার করেন।

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের কারণে বহু ফিলিস্তিনি ইসরাইলের হাতে আটক হয়েছে।

যারা কথা বলেছেন, তারা জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে ওল্ড সিটিতে আরও ইসরাইলি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দোকান মালিকদের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে শুক্রবারে জুম্মার নামাজের জন্য তরুণ ফিলিস্তিনি পুরুষদের নিয়মিতভাবে আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশকরতে বাধা দেয়া হচ্ছে।

পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিন বিষয়ক দায়িত্বে নিয়োজিত ইসরাইলি সামরিক সংস্থা, যা সিওজিএটি নামে পরিচিত, শুক্রবার বলেছে, পশ্চিমতীরের কিছু মুসলিমকে রমজানের নামাজের জন্য এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। তবে তারা এবিষয়ে বিশদভাবে কিছু জানায়নি।

গত বছর, এখানে কয়েক হাজার মুসলিম প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই ছিলো নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ পুরুষ।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এই ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেন যে গত বছরের মতো একই সংখ্যক লোককে রমজানের প্রথম সপ্তাহে আল-আকসায় নামাজের অনুমতি দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন,

এই পুরো মাস এই বিষয়ে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে।

১৯৬৭ সাল থেকে একটি অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থার অধীনে, ওয়াকফ নামে পরিচিতএকটি জর্ডান-ভিত্তিক মুসলিম ধর্মীয় সংস্থা দ্বারা এই চত্বর পরিচালিত হয়।ইহুদিদের জন্য এই চত্বর পরিদর্শন করার অনুমতি আছে; তবে সেখানে তারা প্রার্থনা করতে পারে না।

সাধারণভাবে, আশেপাশের অঞ্চলের ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুজালেমে প্রবেশের জন্য অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। এই শহরকে ইসরাইল তার সংযুক্ত রাজধানীর অংশ হিসাবে বিবেচনা করে, যদিও এই দখলকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ অংশ স্বীকৃতি দেয় না।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জেরুসালেম বা ইসরাইলের যেকোনো অংশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।