বাইডেন ট্রাম্পঃ 'সুপার টিউসডে' পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখোমুখি হবার পথ সুগম করতে পারে

রিম্যাচের পথে? প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ডনাল্ড ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার প্রাইমারি নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দিনে তাদের দলের মনোনয়ন জয়ের আরও কাছাকাছি যেতে প্রস্তুত। এর ফলে একটি ঐতিহাসিক 'রিম্যাচ' (বা ২০২০ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি) হতে পারে। অনেক ভোটার আবার এটি দেখতে চান না।

আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ভারমন্ট ও ভার্জিনিয়াসহ ১৬টি অঙ্গরাজ্য ও একটি অঞ্চলে সুপার টিউসডেতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রার্থীদের পক্ষে শত শত ডেলিগেট জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, যা কোনো একক দিনে উভয় দলের পক্ষে হবে সবচেয়ে বড় সংখ্যা।

ট্রাম্প ১২ মার্চ এবং বাইডেন ১৯ মার্চ তাদের দলের অনুমানযোগ্য মনোনীত প্রার্থী হতে পারে । তবে পূর্ববর্তী বেশিরভাগ সুপার টিউসডে থেকে ব্যতিক্রম হল, কার্যকরভাবে উভয় মনোনয়নেরই নিষ্পত্তি হয়েছে। বাইডেন এবং ট্রাম্প উভয়েই ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির অপেক্ষায় আছেন।

কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট

মঙ্গলবার ফক্স এন্ড ফ্রেন্ডস মর্নিং শো-তে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের বাইডেনকে পরাজিত করতে হবে- তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট”। বাইডেন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে তার সমর্থন জোরদার করার লক্ষ্যে একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে পাল্টা জবাব দিয়েছেন। কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট তাকে ২০২০ সালে জিততে সহায়তা করেছিল।

ডিডি ম্যাকগোয়ার আয়োজিত ‘ডিডি ইন দ্য মর্নিং’ অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, “আমরা যদি এই নির্বাচনে হেরে যাই, তাহলে ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসবেন। তিনি যেভাব কথা বলেছেন, যেভাবে কাজ করেছেন, আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের সাথে যেরকম আচরণ করেছেন, আমি মনে করি তা লজ্জাজনক।”

অভিবাসন নিয়ে অস্বস্তিঃ টেক্সাসের ইগল পাস-এ মেক্সিকো সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া। ফটোঃ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

মঙ্গলবারের আগের শেষ দিনগুলো এই বছরের প্রচারের অনন্য প্রকৃতি দেখিয়েছে। প্রাইমারি হচ্ছে, এমন রাজ্যগুলোতে ঝটিকা প্রচারণা চালানোর পরিবর্তে বাইডেন ও ট্রাম্প গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে নিজেদের কার্যক্রম আয়োজন করেছিলেন, যেখানে তাঁরা ক্রমশ অস্বস্তিকর অভিবাসন বিতর্কে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেন।

বাইডেন বৃহস্পতিবার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দেবেন। এরপর পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়ায় প্রচারণা চালাবেন, যে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোকে 'সুইং স্টেট' বলা হয়, কারণ তারা যেকোনো প্রার্থীর দিকে ঝুঁকতে পারে।

শুধু নিকি হেলি বাকি

ওয়াইট হাউস ডিরেক্টর অফ কমিউনিকেশন জেমস লাবল্ট বলেন, প্রেসিডেন্ট “রেকর্ড সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি, বর্ধিত মজুরি এবং পারিবারিক সম্পদ এবং প্রেস্ক্রিপশান ওষুধ এবং জ্বালানির মূল্য হ্রাস” সংক্রান্ত নীতিগুলো নিয়ে কথা বলবেন।

ট্রাম্প এরই মধ্যে ১২ জনের বেশি প্রধান রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেছেন। এখন কেবল একজন অবশিষ্ট আছেন। তিনি হলেন নিকি হেলি। হেলি সাবেক প্রেসিডেন্টের এক সময়ের জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত, যিনি তার নিজ রাজ্য ক্যারোলাইনায় দু'বার গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন।

নিকি হেলি মেইন রাজ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফটোঃ ৩ মার্চ, ২০২৪।

হেলি শক্তিশালী তহবিল সংগ্রহ বজায় রেখেছেন এবং সপ্তাহান্তে ওয়াশিংটন ডিসিতে তার প্রথম প্রাথমিক নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেছেন। ওয়াশিংটন ডিসি অল্প সংখ্যক নিবন্ধিত রিপাবলিকান অধ্যুষিত শহর, এবং ট্রাম্প তাঁর বিজয় নিয়ে ব্যঙ্গ করেন।

হেলি যদি সুপার টিউসডেতে যেকোনো রাজ্যে জিতে যায়, তাহলে সেটা হবে অপ্রত্যাশিত। আর ট্রাম্প যদি ব্যাপক বিজয় লাভ করেন, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে যাবার জন্য হেলির উপর চাপ বৃদ্ধি পাবে।

বাইডেনের নিজের সমস্যা আছে, যার মধ্যে আছে জনমত জরীপে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর কাজের প্রতি বেশ কম সমর্থন। তা ছাড়া, ডেমক্র্যাট দলের সংখ্যা গরিষ্ঠ সমর্থক সহ অনেক আমেরিকান ৮১-বছর বয়স্ক কাওকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চান না।

বাইডেনের বিপক্ষে কিন্তু 'কাওকে না'

গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট খুব সহজেই মিশিগান রাজ্যের প্রাইমারিতে জয়লাভ করেন। কিন্তু গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্টের নীতির বিরোধিতা করেন যারা, তাঁরা প্রাইমারির সময় “কাওকে না” ভোট দেয়ার প্রচারণা চালিয়ে তাঁর বিজয় কিছুটা ম্লান করে দেয়।

মিনেসোটা সহ অন্যান্য রাজ্যেও “কাওকে না” ভোটের মিত্ররা প্রচারণা চালাচ্ছে। মিনেসোটায় সোমালি-আমেরিকান সহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে। গভর্নর টিম ওয়াল্টজ, যিনি বাইডেনের সমর্থক, গত সপ্তাহে এপি কে বলেন, মঙ্গলবার তিনি “কাওকে না”র পক্ষে কিছু ভোট পড়বে বলে ধারনা করছেন।

বাইডেন যদিও ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট, তাঁর দল নিশ্চিত যে, নভেম্বরে যখন হয় তাঁকে না হয় ট্রাম্পকে ভোট দিতে হবে, তখন অনিচ্ছুক লোকজন বাইডেনকেই বেছে নেবেন।

ট্রাম্পের বয়স ৭৭ এবং তাঁকেও বয়স নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে – বিশেষ করে তিনি যখন আবোল-তাবল কিছু বলে বসেন, যেমন গত সপ্তাহে তিনি ভুলক্রমে বলেছিলেন তিনি বারাক ওবামার বিরুদ্ধে লড়ছেন।

এসব নিবেদিত ট্রাম্প সমর্থকদের মত পালটাতে পারে নি।

“ট্রাম্প তাঁকে চিবিয়ে খাবে,” বলছেন কেন বালস, একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার যিনি সপ্তাহান্তে ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পের জনসভায় গিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, বাইডেন “ সেখানে একদম বোকা মনে হবে।”