চলতি মাসের শুরুর দিকে টাকার কার্লসন ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে দু’ বছর আগে ইউক্রেনে আক্রমণের কারণ জানতে চান। তখন রাশিয়ার ইতিহাস নিয়ে তাকে একটি বক্তৃতা দেন পুতিন । ৭১ বছর বয়সী রুশ নেতা ২০ মিনিটেরও দীর্ঘ সময় ব্যয় করে বিস্মিত কার্লসনকে নবম শতকের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার তারিখ ও ব্যক্তির নাম মনে করিয়ে দেন।
পুতিন ঐতিহাসিক দলিলপত্রের অনুলিপি সম্বলিত একটি ফোল্ডারও দেন। তিনি বলেন এই সব অনুলিপি তার বক্তব্যকেই প্রমাণ করে যে: ইউক্রেনীয় এবং রুশরা ঐতিহাসিকভাবে সবসময় এক জাতির অন্তভর্ভূক্তই ছিল এবং ইউক্রেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অবৈধ ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি অংশ মাত্র।
কার্লসন বলেন, এররকম ইতিহাস শুনে তিনি যারপরনাই “হতবাক”। তবে যারা পুতিনের সরকারের সাথে পরিচিত, তাদের কাছে এটি মোটেও আশ্চর্যজনক নয়। রাশিয়ায়, দীর্ঘকাল ধরেই ক্রেমলিনের রাজনৈতিক লক্ষ্য এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইতিহাস, প্রচারের একটি উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।আগের বছর গুলোর সাথে ধারাবাহিকতা রেখেই গত দুই বছরও সম্পূর্ণরূপে সেই সামঞ্জস্য বজায় রাখা হয়েছে।
বিশ্বের ব্যাপারে তাদের মতবাদের প্রতি জনগণকে সমবেত করার প্রচেষ্টায় রুশ কর্তৃপক্ষ দেশটির অতীত বিজয়কে বড় করে দেখানোর চেষ্টায়, দেশটির ইতিহাসের আরও কলংকিত অধ্যায়গুলোকে পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। তারা তাদের পাঠ্যপুস্তক নতুন করে লিখছে। তাদের ঐতিহাসিক তথ্য বিস্তৃত ভাবে বদলে ফেলার জন্য তারা ব্যাপক অর্থায়ন করছে একই সাথে বিপরীত মতগুলোকে কঠোর ভাবে দমন করছে।
ইউক্রেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে সোভিয়েত স্মৃতিস্তম্ভগুলি ভেঙে ফেলার জন্য তিরস্কার করে চলেছেন রুশ কর্মকর্তারা। এই সব স্তম্ভকে অতীতের অত্যাচারের অনাকাঙ্খিত নিদর্শন হিসেবে দেখা হয়। এমনকী বহু ইউরোপীয় কর্মকর্তার নাম রাশিয়া শাস্তি প্রদানের তালিকায় রেখেছে।
পুতিন তার সিকি শতাব্দির এই শাসনামলের গোড়া থেকে বার বার বলে এসেছেন যে তাদের ইদিহাস অধ্যয়ন করলে রাশিয়ার জনগণ গর্বিত বোধ করবে। এমনকী জোসেফ স্ট্যালিনের মতো সোভিয়েট স্বৈরশাসকরা রাশিয়ার বিশাল হয়ে ওঠায় অবদান রেখেছেন বলে পুতিন যুক্তি দেখান। রাশিয়ান প্রচারমাধ্যমে রাশিয়াতেই স্ট্যালিনের ১০০ টিরও বেশি স্মৃতিস্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। যার বেশিরভাগই পুতিনের শাসনামলে স্থাপন করা হয়েছিল।
তাছাড়া রাশিয়ার সরকার গত বছর, দশম এবং একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের জন্য চারটি নতুন "সর্বজনীন" ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকের একটি সিরিজ চালু করেছে।যার একটিতে রয়েছে ইউক্রেনে মস্কোর “বিশেষ সামরিক অভিযানের” একটি অধ্যায়। যেখানে স্নায়ুযুদ্ধের জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করা হয়েছে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে “বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
অনেক ঐতিহাসিকরা এটিকে নির্লজ্জ প্রচার বলে নিন্দা করছেন।