মাইকেল জ্যাকসন

ফাইল - মাইকেল জ্যাকসন ভিয়েনার এক কনসার্টে গান করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।

মাইকেল জ্যাকসন

আশির দশকে 'কিং অফ পপ' খ্যাত মাইকেল জ্যাকসনের একক অ্যালবাম 'থ্রিলার' প্রকাশিত হবার পর শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বের সংগীত জগতে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। বিট ইট, বিলি জিন বা থ্রিলার গানের মিউজিক ভিডিওতে তিনি গান এবং নাচের অদ্ভুত শৈল্পিক বন্ধন রচনা করেন যা তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বময় তরুণ প্রজন্মকে উদ্দীপিত করেছিল।

১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট ইন্ডিয়ানা রাজ্যের এক দরিদ্র কৃষ্ণাংগ পরিবারে জন্ম হয় মাইকেল জ্যাকসনের। তিনি ছিলেন ১০ ভাইবোনের মধ্যে অস্টম। পারিবারিক গানের ব্যান্ড দিয়ে শুরু হয়েছিল তার সাংগীতিক যাত্রা। ৬০এর দশকে 'দ্য জ্যাকসন ফাইভ' গানের ব্যান্ডের অংশ হিসেবে ভাইদের সাথে গান করতেন মাইকেল। তারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন রাজ্যে পারফর্ম করতেন।

১৯৬৮ সালে বিখ্যাত সংগীত কোম্পানি মোটাউন তাদের গান রেকর্ড করতে শুরু করে।

অল্প দিনের মধ্যেই সংগীতে মাইকেলের দক্ষতা সবার নজর কাড়তে শুরু করে। মো টাউনের মাধ্যমে প্রকাশিত তাদের কয়েকটি গান ইউ এস বিলবোর্ড তালিকায় ওপরে উঠে আসে।

১৯৭৫ সালে 'দ্য জ্যাকসন ফাইভ' মোটাউন থেকে বেরিয়ে আরও সৃজনশীল গান পরিবেশন করতে শুরু করে। কৃষ্ণাংগ হলেও তাদের গান ক্রমশ জাতিগত পরিচয় ছাড়িয়ে বৃহত্তর শ্রোতা দর্শকের কাছে আবেদন তৈরি করে।

মাইকেল শিশু শিল্পী থেকে টিন আইডল, টিন আইডল থেকে তরুণ তারকা শিল্পীতে পরিণত হন। ৭০ এর দশকের শেষ নাগাদ মাইকেলের একক অ্যালবাম 'অফ দ্য ওয়াল' সোলো শিল্পী হিসেবে তাকে ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয়।

১৯৮২ সালের শেষ দিকে প্রকাশিত একক অ্যালবাম 'থ্রিলার' অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসে 'বেস্ট সেলিং অ্যালবাম অফ অল টাইমে' পরিণত হয়।

পরবর্তী বছরগুলোতে মাইকেল জ্যাকসন শ্রোতাদের একের পর এক 'হিট সং' উপহার দিয়েছেন। বিপুল আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি তার গানের কথায় এবং ভিডিওতে স্থান করে নিয়েছে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির বন্দনা, পরিবেশ সচেতনতা প্রসংগ। 'ব্ল্যাক অর ওয়াইট' বা 'আর্থ সং' তার উদাহারণ।

১৯৯৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়াতে এক অনুষ্ঠানে মাইকেল জ্যাকসন।

৯০এর দশকে মাইকেলের বিরুদ্ধে শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে তার গানের কেরিয়ার বাধাগ্রস্ত হয়। আদালতের বাইরে সেই মামলার সুরাহা হলেও তার ভাবমূর্তির ওপর এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

১৯৯৩ সালে মাইকেল বিয়ে করেন খ্যাতনামা শিল্পী এলভিস প্রেসলির মেয়ে লিসা মেরি প্রেসলিকে। অবশ্য সেই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

২০০০ সালের পর মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে আবার শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ এবং মামলা তার কাজ এবং শারিরীক-মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। সংগীত জগতে মাইকেল জ্যাকসনের প্রকাশ্য উপস্থিতি ক্রমশ কমে আসে।

২০০৯ সালের ২৫ জুন মাত্র ৫০ বছর বয়সে মাইকেল জ্যাকসন লস অ্যাঞ্জেলেসে মারা যান। বলা হয়, অতিমাত্রায় ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের প্রতিক্রিয়াতে তিনি মারা যান।

মাইকেল জ্যাকসন তার গানের সফল কেরিয়ারে পেয়েছেন ১৫টি গ্র্যামি, ছয়টি ব্রিট অ্যাওয়ার্ডসহ বহু স্বীকৃতি।

মাইকেল জ্যাকসনের গান তার মৃত্যুর পরও বিশ্বের কোটি কোটি সংগীত প্রেমীর কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। জাতিগত ভেদাভেদ কাটিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্বের কথা বলেছেন তিনি বিভিন্ন গানে।

কৃষ্ণাংগ শিল্পী হিসেবে কেরিয়ার শুরু করলেও মাইকেল জ্যাকসন তার কাজের মাধ্যমে জাতি ধর্ম বর্ণের ঊর্ধে স্থান করে নিয়েছেন।