রোজা পার্কস

ফাইল ছবি - রোজা পার্কস, ২৮ অক্টোবর ১৯৮৬। নিউ ইয়র্ক।

যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি মাসকে 'ব্ল্যাক হিস্টরি মান্থ' হিসাবে পালন করা হয়। এর মাধ্যমে এই দেশের ইতিহাসে যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক বা ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে , সেগুলো তুলে ধরা হয়। এর অংশ হিসাবে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা এই দেশের বিখ্যাত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের অবদানের কথা তুলে ধরছে।

রোজা পার্কস

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে যে নামটি প্রথমেই আসে,তা হল রোজা পার্কস। তিনি ১৯৫৫ সালে ছোট একটি প্রতিবাদ করেছিলেন যেটা পরবর্তী বছরগুলোতে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে আলাবামা রাজ্যের মনটগোমারি শহরে ১ ডিসেম্বর পার্কস কাজ শেষে বাড়ি যাবার জন্য একটি বাসে ওঠেন। সেসময় মনটগোমারির বাসগুলোতে কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গ যাত্রীরা এক সাথে বসতে পারতেন না। বাসের মাঝখান দিয়ে একটি রেখা থাকত যার সামনের সিটগুলো শ্বেতাঙ্গদের জন্য আর তার পেছনের সিটগুলো ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বরাদ্দ।

পার্কস কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বরাদ্দ সিটের প্রথম সারিতে বসেছিলেন। বাসে যখন অনেক শ্বেতাঙ্গ যাত্রী উঠে যায়, তখন বাস ড্রাইভার কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বরাদ্দ সিটের প্রথম সারির সবাইকে উঠে যেতে বলে,যাতে শ্বেতাঙ্গরা বসতে পারে। প্রথম সারির চারটি আসনের তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ যাত্রী উঠে গেলেও, পার্কস সিট থেকে উঠতে অস্বীকার করেন। ড্রাইভারের নির্দেশ অমান্য করায় পুলিশ রোজা পার্কসকে গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে।

রোজা পার্কসকে ৫ ডিসেম্বর আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, কিন্তু সে সময় শত শত মানুষ আদালতের বাইরে তাঁর সমর্থনে স্লোগান দিতে থাকে। তাঁর প্রতিবাদ মনটগোমারি শহরে সকল বাস বর্জন করার আন্দোলনের সুত্রপাত ঘটায়। মনটগোমারি বাস বর্জন এক বছরের মধ্যে নগর কর্তৃপক্ষকে পথ পরিবর্তনে বাধ্য করে।

বাস বর্জনের মাঝে আদালতে মামলা করেন কৃষ্ণাঙ্গরা। আলাবামার একটি ডিসট্রিক্ট আদালত ১৯৫৬ সালের জুন মাসে বর্ণ বৈষম্যবাদী আইন অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। মনটগোমারি শহর কর্তৃপক্ষ মামলাটি উচ্চ আদালতে নিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ১৩ নভেম্বর, ১৯৫৬ গণপরিবহনে বর্ণ বৈষম্যকে সংবিধান-পরিপন্থি বলে ঘোষণা করে।

ফাইল ছবি - রোজা পার্কস।

রোজা পার্কস-এর জন্ম হয়েছিল ১৯১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী, আলাবামা রাজ্যে। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল রোজা লুইস ম্যাককলি। তিনি ১৯ বছর বয়সে রেমন্ড পার্কসকে বিয়ে করেন। তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য আলাবামা স্টেট টিচার্স কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু তাঁর নানী অসুস্থ হয়ে পড়ায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

রোজা পার্কস এবং তাঁর স্বামী দুজনেই নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। পরবর্তীতে রোজা এবং রেমন্ড পার্কস উত্তরে মিশিগান রাজ্যের ডিট্রয়েট শহরে চলে যান। রোজা পার্কস ৯২ বছর বয়সে,২০০৫ সালের ২৪ অক্টোবর মারা যান।