ইসরাইল-হিজবুল্লাহর হামলা বৃদ্ধি; দুই পক্ষের অস্ত্র সম্ভারের তুলনা

ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হামাসের সংঘাতের মধ্যেই, ইসরাইলের উত্তরে, সাফেদে একটি হাসপাতালের প্রবেশপথের কাছে লেবানন থেকে ছোঁড়া একটি রকেট নিক্ষিপ্ত হবার স্থানটি। (১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪)

লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে চলতি সপ্তাহে আন্তঃসীমান্ত সংঘাত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ক্রমশ পুরোদমে যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বুধবার লেবানন থেকে নিক্ষিপ্ত একটি রকেট ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর সাফেদে আঘাত হানলে ২০ বছর বয়সী এক নারী সৈন্য নিহত ও অন্তত পক্ষে ৮ জন আহত হয়।

জবাবে, ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়ে দক্ষিণ লেবাননে কমপক্ষে ১০ জনকে হত্যা করে। এদের মধ্যে একজন সিরীয় নারী ও তার দুই সন্তান সহ অন্য একটি পরিবারের ৪ জন সদস্য ছিল। বাকি তিন জন ছিল হিজবুল্লাহ যোদ্ধা। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৯ জন।

৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ এবং এই আন্তঃসীমান্ত সহিংসতার সুত্রপাত হয়।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে ।ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

হিজবুল্লাহ বুধবারের হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আরও উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে দু'পক্ষের অস্ত্রাগারের তুলনামূলক পর্যালোচনা নিচে দেয়া হলো-

হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা-

আরব বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধাসামরিক বাহিনীগুলোর একটি হিজবুল্লাহ। একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ কাঠামোর পাশাপাশি একটি বিশাল অস্ত্রাগারও রয়েছে বাহিনীটির। ইরানের সমর্থন রয়েছে বাহিনীটির প্রতি। সিরিয়ার ১৩ বছরের সংঘাত থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা তাদের যোদ্ধাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।

হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহর মতে, দলটির যোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ বলা হলেও অন্যান্য সদস্যদের মতে তা অর্ধেকেরও কম। ইসরাইল চায় সীমান্ত এলাকা থেকে হিজবুল্লাহ তার বিশেষ রাদওয়ান বাহিনী প্রত্যাহার করে নিক যাতে করে উত্তরাঞ্চলের শহর ও গ্রামগুলি থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার ইসরাইলি নিজেদের বাস্থানে ফিরে যেতে পারে।

ওয়াশিংটনের চিন্তক গোষ্ঠী সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মতে, হিজবুল্লাহর কাছে বেশিরভাগ ছোট, বহনযোগ্য এবং ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য আর্টিলারি রকেটের বিশাল অস্ত্রাগার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ধারণা, লেবাননে হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর কাছে দেড় লাখ ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট রয়েছে। হিজবুল্লাহ নির্ভুলভাবে নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র নিয়েও কাজ করছে।

হিজবুল্লাহ এর আগেও ইসরাইলে ড্রোন নিক্ষেপ করেছে এবং ২০০৬ সালে ভূমি থেকে সমুদ্রে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলের একটি যুদ্ধ জাহাজে আঘাত হানে। হিজবুল্লাহ বাহিনীর কাছে অ্যাসল্ট রাইফেল, ভারি মেশিনগান, রকেট পরিচালিত গ্রেনেড, রাস্তায় পাতার জন্য বোমা এবং অন্যান্য অস্ত্র রয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা-

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বার্ষিক তিন শ’ তিরিশ কোটি ডলার সহায়তা পেয়ে আসছে। তাছাড়াও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির জন্য ৫০ কোটি ডলার সহায়তাও করছে পায় তারা।

বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রের দিক দিয়ে অন্যতম সুসজ্জিত দেশ ইসরাইল। এর বিমান বাহিনীতে রয়েছে অত্যাধুনিক আমেরিকান এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান; আমেরিকান তৈরি প্যাট্রিয়টসহ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাটারি; আয়রন ডোম রকেট-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

ইসরাইলের সাঁজোয়া কর্মী বহনের যান, ট্যাঙ্ক এবং রাস্তায় যে কোনও লড়াইয়ের উপযোগী ড্রোন এবং অন্যান্য প্রযুক্তির একটি বহর্ রয়েছে।

ব্রিটিশ চিন্তক গোষ্ঠী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মতে, ইসরাইলের ১ লাখ ৭০ হাজার সেনা সক্রিয় দায়িত্ব পালন করছে। তাছাড়া, যুদ্ধের জন্য তাদের আনুমানিক সক্ষমতার তিন-চতুর্থাংশ, প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার রিজার্ভ সৈন্য মোতায়েন করা আছে। যুদ্ধের এই পঞ্চম মাসে রিজার্ভ এই সৈন্যদের অধিকাংশই দেশে ফিরে গেছে।

ইসরাইলের হাতে দীর্ঘদিন ধরে অঘোষিত পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিও বজায় রয়েছে।

অধিকাংশ বিশ্লেষকই মনে করেন যে হিজবুল্লাহ কিংবা ইসরাইল কারও কোন পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা নেই তবুও এ রকম আশংকা রয়েছে যে হিসেবে ভুল হলে সংঘাত বৃদ্ধি পেতে পারে।

সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশ তাদের কূটনীতিকদের পাঠিয়েছে।