অ্যাপোলোর শেষ চন্দ্র অভিযানের অর্ধশতক পর চাঁদে যাচ্ছে বাণিজ্যিক মালিকানাধীন মুন ল্যান্ডার 

ইনটিউটিভ মেশিনস-এর নোভা-সি ল্যান্ডার 'ওডিসিয়াস' স্পেসএক্স-এর  একটি ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়। ফটোঃ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম চাঁদে অবতরণের জন্য একটি চন্দ্র অবতরণযান ফ্লোরিডা থেকে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) উৎক্ষেপণ করা হয়। এই প্রথমবার চাঁদে অবতরণের জন্য একটি বেসরকারি মালিকানাধীন ‘মুন ল্যান্ডার’ ব্যবহার করা হচ্ছে। চন্দ্র অবতরণযানটি তৈরি করেছে হিউস্টন-ভিত্তিক মহাকাশবিষয়ক কোম্পানি, ইনটিউটিভ মেশিনস।

কোম্পানির নোভা-সি ল্যান্ডার, যার নাম দেয়া হয়েছে ওডিসিয়াস, কেপ ক্যানাভেরালে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স-এর একটি ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়।

নাসা-স্পেসএক্স-এর লাইভ অনলাইন ভিডিও ফিডে দুই-পর্যায়ের রকেটটির উড্ডয়ন দেখানো হয়। লঞ্চ প্যাড থেকে ২৫-তলা রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয় এবং একটি জ্বলন্ত হলুদ বর্ণের নিষ্কাশন পিছে তৈরির মাধ্যমে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূলে অন্ধকার আকাশের দিকে ধেয়ে যায়।

চন্দ্র অবতরণযানটির প্রপালশন সিস্টেমে ব্যবহৃত তরল মিথেনে অনিয়মিত তাপমাত্রা সনাক্ত করার কারণে বুধবার সকালে পূর্বনির্ধারিত করা উৎক্ষেপণ পরিকল্পনা ২৪ ঘন্টার জন্য স্থগিত করা হয়। স্পেসএক্স জানায় সমস্যাটি পরে সমাধান করা হয়েছে।

এটি ইনটিউটিভ মেশিনস কোম্পানির মিশন হিসাবে বিবেচনা করা হলেও, আইএম-১ ফ্লাইটটি এই দশকের শেষের দিকে নাসার মহাকাশচারীদের চাঁদে ফিরে আসার আগে চন্দ্রের পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য নাসার যন্ত্র বহন করছে।

অন্য একটি বেসরকারী সংস্থা, অ্যাস্ট্রোবোটিক টেকনোলজির চন্দ্র অবতরণযাণের প্রপালশন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয় চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছানোর পর। ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স (ইউএলএ)-এর ‘ভালকান’ রকেট ৮ জানুয়ারী ঐ মুন ল্যান্ডারকে কক্ষপথে স্থাপন করেছিল।

অ্যাস্ট্রোবোটিকের পেরেগ্রিন ল্যান্ডারের অভিযান ছিল, যা সেবারও চাঁদে নাসার বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বহন করছিল, একটি বেসরকারি কোম্পানির চন্দ্রপৃষ্ঠে "হাল্কা অবতরণ" অর্জনে টানা তৃতীয় ব্যর্থতা। এর আগে, জাপান এবং ইসরাইলের প্রচেষ্টা সফল হতে পারে নি।

মহাকাশযাত্রার লক্ষ্য অর্জন করতে বাণিজ্যিক খাতের উপর অতীতের তুলনায় আরও বেশি নির্ভর করার ফলে নাসা যে ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে, এই দুর্ঘটনাগুলি থেকে তা দেখা যায়।

নাসা টেলিভিশনের মাধ্যমে স্পেস-এক্স এর ছবিতে, রকেটের আপার স্টেজ থেকে মুন ল্যান্ডারকে আলাদা হতে দেখা যাচ্ছে। ফটোঃ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইনটিউটিভ মেশিনস-এর নোভা-সি যান প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী ফ্লাইটের পর ২২ ফেব্রুয়ারি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে মালাপার্ট এ ক্রেটারে অবতরণ করবে।

মিশনটি সফল হলে, ফ্লাইটটি ১৯৭২ সালে সর্বশেষ অ্যাপোলো মহাকাশচারী বহনকারী চন্দ্র মিশনের পর এটিই হবে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশযান দ্বারা এবং প্রথমবারের মতন একটি বেসরকারি সংস্থা দ্বারা চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রথম নিয়ন্ত্রিত অবতরণ।

এই চন্দ্রাভিযান হবে নাসার আর্টেমিস মুন প্রোগ্রামের অধীনে চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রথম যাত্রা। চীন সেখানে নিজস্ব মহাকাশচারীযুক্ত মহাকাশযান অবতরণ করার আগেই যুক্তরাষ্ট্র নভোচারীদের পৃথিবীর প্রাকৃতিক উপগ্রহে পুনরায় পাঠানোর চেষ্টা করছে।

আর্টেমিস মিশনের খরচ কমাতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বেসরকারি কোম্পানী নির্মিত এবং মালিকানাধীন মহাকাশযান ব্যবহারে নাসার কৌশলের সর্বশেষ পরীক্ষা হল আইএম-১। আর্টেমিস মিশনকে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর অগ্রদূত হিসাবে দেখা হয়।

অন্যদিকে, অ্যাপোলোর সময়ে, নাসা বাণিজ্যিক খাত থেকে রকেট এবং অন্যান্য প্রযুক্তি কিনে নিজেরাই সেগুলি পরিচালনা করে।

নাসা গত মাসে ঘোষণা করে তারা প্রথম নভোচারীবহনকারী আর্টেমিস চাঁদে অবতরণ করার তারিখ ২০২৫ থেকে ২০২৬ সালের শেষের দিকে বিলম্বিত করবে। চীন বলেছে তারা ২০৩০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা করেছে।

চন্দ্রের পৃষ্ঠ, এর সম্পদ এবং সম্ভাব্য বিপদগুলি ঘনিষ্ঠভাবে জরিপ করার জন্য যন্ত্রপাতি বহনকারী, নোভা-সি-এর মতো ছোট ল্যান্ডাররা প্রথমে সেখানে পৌঁছবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

ওডিসিয়াস চাঁদের পৃষ্ঠে মহাকাশ আবহাওয়ার মিথস্ক্রিয়া, নির্ভুল অবতরণ প্রযুক্তি এবং নেভিগেশনের উপর কাজ করবে।

স্পেস-এক্সের ফ্যালকন-৯ রকেট পৃথিবীর কক্ষপথের দিকে চলছে। ফটোঃ ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

ইনটিউটিভ মেশিনস-এর আইএম-২ ২০২৪ সালে চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার কথা আছে, যার পরেই বছরের শেষের দিকে বেশ কয়েকটি ছোট রোভার সহ একটি আইএম-৩ মিশন করা হবে।

গত মাসে, জাপান পঞ্চম দেশ হিসেবে চাঁদে একটি ল্যান্ডার স্থাপন করে। তার মহাকাশ সংস্থা জেএএক্সএ-এর এসএলআইএম প্রোব একটি অস্বাভাবিক সুনির্দিষ্ট "পিনপয়েন্ট" অবতরণ অর্জন করে।

গত বছর, একই মাসে রাশিয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে ভারত চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে অবতরণ করে।

যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন বাকি একমাত্র দেশ যারা সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করেছে।

চীন ২০১৯ সালে চাঁদের দূরপ্রান্তে প্রথম অবতরণ করার সাফল্য অর্জন করে।