গ্রামীণ টেলিকমসহ ৮টি প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখল করেছে গ্রামীণ ব্যাংক: অভিযোগ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের

বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিযোগ করেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ টেলিকমসহ তাঁর আটটি প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখল করেছে।

তিনি বলেন, “আমরা অনেক ধরনের দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাই, কিন্তু এমন বিপর্যয় আগে দেখিনি। হঠাৎ করে বাইরে থেকে কিছু লোক এসে আমাদের নিজেদের অফিস থেকে সরে যেতে বলে।”

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরে চিড়িয়াখানা সড়কে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের নিচতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আছি। … আমাদের আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের হয়ে আমরা গ্রামীণ টেলিকম ভবনটি বানিয়েছি। সেখানে আমাদের কর্মীরা নিয়মিত অফিস করছে, কাজকর্ম করছে। “হঠাৎ, চার দিন আগে (১২ ফেব্রুয়ারি) আমরা দেখি বহিরাগতরা আমাদের অফিস দখল করছে। আমরা তাদের কাছে বহিরাগত হয়ে গেলাম। তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী এটি চালানোর চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না এটা কীভাবে হলো।”

মুহাম্মদ ইউনূস জানান, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েও তিনি প্রতিকার পাননি। তিনি বলেন, “আমার ঘর জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম, একটা জিডি করেছিলাম। জিডির কপি নিয়ে পুলিশ এসেছিল, কিন্তু কোনো সমাধান দেয়নি। আমরা অফিস করতে পারছি না।”

কিছু লোক তাদের কার্যালয়ের সামনে ঝাড়ু নিয়ে মিছিল করেছে উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এর পেছনের কারণ তিনি বুঝতে পারছেন না। “আমরা কী হঠাৎ করে এমন একটি অবস্থানে পৌঁছেছি যেখানে আমাদের ঝাড়ু প্রাপ্য? আমরা নিজেদের জায়গায় আছি। আমরা আর অন্য কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না।"

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর একই ভবনে। “এই ভবনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ব্যবসার লাভ দিয়ে। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কোনো কর্তৃত্ব নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই গড়ে ওঠেনি।”

গ্রামীণ টেলিকম ভবনে (১৩ তলা) মুহাম্মদ ইউনূসের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটির চেয়ারম্যান তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক যে আটটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেগুলো হলো—গ্রামীণ কল্যাণ; গ্রামীণ টেলিকম; গ্রামীণ শক্তি; গ্রামীণ সামগ্রী; গ্রামীণ ফান্ড; গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন; গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন এবং গ্রামীণ উদ্যোগ। ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মাঈনুদ্দিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডক্টর ইউনূসের জন্য স্বচ্ছ ও ন্যায্য বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করার আহবান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের

বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর আপিল চলার সময় একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সম্মত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে ভয়েস অফ আমেরিকাকে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, "আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) লক্ষ্য করেছি, শ্রম আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে পরিচালিত হয়েছে।"

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর অভিযোগপত্র জমা দেয়া সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন, "দুর্নীতি দমন কমিশন অতিরিক্ত মামলাগুলির জন্য একটি চার্জশিট অনুমোদন করেছে যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হচ্ছে।"

এ বিষয়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মত যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বিগ্ন যে, "এই মামলাগুলি ড. ইউনূসকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশের শ্রম আইনের অপব্যবহার হিসাবে প্রতীয়মান হতে পারে।"

মুখপাত্র তার প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেন, "শ্রম ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে যে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে তা বাংলাদেশে আইনের শাসন জারি থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন জাগাতে ও ভবিষ্যৎ বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন।"

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক জানিয়েছেন যে, ড ইউনুসকে নিয়ে যে সব খবর আসছে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

জাতিসংঘে দৈনিক ব্রিফিং-এর সময় বাংলাদেশর একজন সাংবাদিক জানতে চান যে, গ্রামীণ অফিস দখল এবং ড, ইউনুসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার নতুন যে সব অভিযোগ এনেছে, সে সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিব অবগত আছেন কীনা। এই প্রশ্নের জবাবে দুজারিক বলেন, “ আমরা বিষয়টি জানি।''

''আমি আবার জোর দিয়েই বলবো যে বহু বছর ধরে মি ইউনুস দাপ্তরিক ভাবে এবং দপ্তরের বাইরে থেকেও জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল, দ্য সাস্টনেবেল ডেভেলপমেন্ট গোল এবং সাধারণ ভাবে আমাদের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডসহ আমাদের অনেক উদ্যোগের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছেন।

''তাঁর বিষয়ে যে সব খবর আসছে সে সম্পর্কে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন,'' তিনি বলেন।