ভারতের রাজধানী ও আশেপাশের শহরগুলোর দূষিত বাতাসের প্রভাবে প্রশান্ত কালরার তিন বছর বয়সী মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। যার ফলে তিনি পাঁচ বছর আগে পশ্চিমের উপকূলীয় শহর গোয়ায় চলে আসেন।
কালরা একটি ক্ষুদ্র কিন্তু ক্রমবর্ধমান গোষ্ঠীর অংশ যারা মারাত্মক বায়ু দূষণের কারণে স্বাস্থ্যের ওপর সৃষ্ট ঝুঁকি থেকে বাঁচতে এই শহরটি ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর শীতকালে এ ধরনের দূষিত বাতাস রাজধানীকে ঘিরে ফেলে।
দিল্লির কর্তৃপক্ষ প্রায় দুই দশক ধরে এই বিষাক্ত ধোঁয়াশা পরিষ্কারের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। নির্মাণকাজের ফলে তৈরি হওয়া ধুলা, গাড়ির কালো ধোঁয়া ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে ফসল পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার সংমিশ্রণে এই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এরকম অনেক ‘দূষণ অভিবাসী’ গোয়ার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত ও নারিকেল গাছে আচ্ছাদিত এই জনপ্রিয় অবকাশযাপন কেন্দ্রটি দিল্লির বাতাসের হাত থেকে নিস্তার পেতে ইচ্ছুক মানুষদের চুম্বকের মতো টানছে।
কালরার মতো আরও অনেকেই সন্তানদের নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেওয়ায় দিল্লি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সলিল পাওয়াহ ও তাঁর স্ত্রীর জন্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে তাঁর কমবয়সী কন্যা সন্তানের নিরবচ্ছিন্ন কাশির দমক।
ভারতের রাজধানীতে সারাজীবন থেকেছেন পাওয়াহ, যিনি পেশায় একজন উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, “দিল্লিতে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দিয়ে রাখতে হতো”। “আমরা কয়েক সপ্তাহের ছুটিতে এখানে (গোয়ায়) আসার পর তাঁর কাশি পুরোপুরি উবে যায়। তক্ষুনি আমরা অনুধাবন করি, বাতাসই এর জন্য দায়ী এবং আমরা দিল্লি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই”।
দিল্লি নিয়মিত বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় স্থান পায়। প্রতি বছরের এই ধোঁয়াশাকে হাজার হাজার মানুষের অকাল প্রয়াণের জন্য দায়ী করা হয়।
কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে দিল্লি থেকে গোয়ায় চলে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ সেসময় ওয়ার্ক ফ্রম হোম সুবিধার কারণে কর্মীরা বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থান থেকে কাজ করার সুবিধা পান।
ভারতের বড় শহরগুলোকে দূষণমুক্ত করাই হবে দেশটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের অন্যতম। এ বছর তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, এমনটাই প্রত্যাশিত। তাঁর সামনে রয়েছে ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশে উন্নীত করার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য।