পাকিস্তানের নির্বাচনে কোন দল নিরংকুশ জয় পায়নি,তাহলে এখন কী হবে?

বাঁ দিক থেকেঃ ইমরান খান, মুসলিম লীগ (নওয়াজ) নেতা শাহবাজ শরিফ এবং বিলওয়াল-ভুট্টো জারদারি।

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সুস্পষ্ট ভাবে কোন দল জয়ী হয়নি। কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মিত্ররা গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করেছে।

প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নিলে এটি একটি হতবাক করা ফলাফল। তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ কোনো প্রচারণা সমাবেশ করতে পারেনি, নির্বাচনের দিন তাদের কোনো পোলিং এজেন্ট ছিল না এবং তারা ইন্টারনেটের বিধিনিষেধের মুখোমুখি হয়েছিল।

ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৬৫টি আসনের মধ্যে তারা ৯৩টিতে জয়লাভ করে। তবে সরকার গঠনের জন্য এই আসন যথেষ্ট নয়।

ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নেতৃত্বে অন্য দুটি মূলধারার দলও এককভাবে সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে।

দল দুটি হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী বিলওয়াল-ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পিপিপি। তারা যথাক্রমে ৭৫টি ও ৫৪টি আসনে জয়লাভ করেছে।

পাকিস্তানের পার্লামেন্টই পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিযোগিতায় কে আছে?

ইমরান খান নেই। তিনি কারাগারে আছেন এবং সরকারি পদে থাকতে পারবেন না। পিটিআই তাদের পর্যাপ্ত আসন রয়েছে দাবি করে বলেছে, তারা জোট চায় না এবং তাদের প্রয়োজনও নেই। তারা দাবি করছে তাদের পর্যাপ্ত আসন রয়েছে, কিন্তু আসলে তা নয়। ।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আবার ক্ষমতায় আসার আশা করছেন।

দলটির জনসমর্থন রয়েছে- যেমন প্রার্থীরা যতগুলো আসন পেয়েছে তা থেকে তাদের জনসমর্থন বোঝা যায়। তবে তাদের রাজনৈতিক সহকর্মীদের সমর্থন নেই।

বিশ্লেষক আজিম চৌধুরী বলেন, ইমরান খানের দায়িত্ব পালনের সময় থেকে তার বিরুদ্ধে অন্য দলগুলোর ‘অভিযোগ ও ক্ষোভ’ রয়েছে এবং তারা ইমরান খানের সাথে হাত মেলাতে প্রস্তুত নয়। কারণ তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তিনি দলগুলোর সাথে কথা বলতে চান না।

যখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইমরান খানের অনুসারীরা নেতৃত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে, পিএমএল-এন এবং পিপিপি জোট সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করে। তাদের দাবি, ইমরান খানের দলত্যাগীসহ ছোট ছোট দল এবং নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সাথে তাদের আসন কোটা ১৬৯ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় উন্নীত করার জন্য সমঝোতা হয়েছে।

কিন্তু এই র‍্যাগট্যাগের ভিড় থেকে কে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তা জানা আরও জটিল।

দলের ঘনিষ্ঠ সদস্যরা বলছেন, নওয়াজ শরিফ তার মেজাজের কারণে জোটের জন্য উপযুক্ত নন। ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁর ছোটভাই শাহবাজ একটি জোটের নেতৃত্ব দেন। তাকে আরও সহনশীল মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এরপরই আছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুট্টো-জারদাই। এমন কলঙ্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের শীর্ষ পদটি তিনি চাইবেন কি না তা স্পষ্ট নয়।

তবে তিনি এবং তার দল যেকোনো জোটের মূল চাবিকাঠি। কারণ তারা তৃতীয় বৃহত্তম সংখ্যক আসন জিতেছে। তার বাবা আসিফ আলী জারদারিকে ‘কিংমেকার’ হিসেবে গণ্য করা হয় না। চৌধুরীর মতে, তিনি এমন কিছু করবেন না, যা তার ছেলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে বিপন্ন করে, যেমন ইমরান খানের সাথে হাত মেলানো।

সব পক্ষকে খুশি রাখার জন্য বাইরের কোনো প্রার্থীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু দুই পরিবার ক্ষমতার দাবি ছেড়ে দিচ্ছে- এটা দেখা কঠিন।

পরিবেশ কেমন?

যেভাবে নির্বাচন হয়েছে এবং যেভাবে ভোট গণনা হয়েছে তাতে জনগণ অসন্তুষ্ট। কিছু ফলাফলের ক্ষেত্রে প্রতিবাদ জানানোর জন্য আইনি চ্যালেঞ্জ চলছে। ভোট কারচুপি নিয়ে প্রতিবাদ ও অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষত ইমরান খানের সমর্থকরা তাদের ভাষায় নির্বাচনে চুরি নিয়ে ক্ষুব্ধ। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে এবং পাকিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভে কয়েক ডজন মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভোটের অনিয়ম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এরপর কী হবে?

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনের ২১ দিনের মধ্যে অথবা ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন ন্যাশনাল এসেম্বলির উদ্বোধনী অধিবেশন আহ্বান করতে হবে। ওই অধিবেশনে আইনপ্রণেতারা শপথ নেন। তারা স্পিকার ও সংসদ নেতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

এই পদগুলো পূরণ হওয়ার পরে নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এই পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হয়।