গাজা ইসরাইলঃ বাইডেনের সাথে বৈঠক শেষে জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহ 'পূর্ণ যুদ্ধবিরতির' ডাক দিলেন

হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ। পাশে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে আলোচনা শেষে জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ গাজায় লড়াই শেষ করার জন্য পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছেন। রাজার আহবান বাইডেনের মতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় নি, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শুধু ছয় সপ্তাহের বিরতি চাইছেন, যাতে ইসরাইল হামাসকে পরাজিত করার সময়টা পায়।

হোয়াইট হাউসে আব্দুল্লাহকে পাশে নিয়ে বাইডেন বলেন যে, গাজার দক্ষিণে রাফা শহরে ইসরাইল যে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাতে যেন বেসামরিক মানুষদের অবশ্যই নিরাপত্তা দেয়া হয়। অন্য দিকে, জর্ডানের রাজা যেকোন অভিযানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন।

একাশি বছর বয়স্ক বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা ভূখণ্ডের যুদ্ধে অন্তত ছয় সপ্তাহের বিরতির জন্য আলোচনা চালাচ্ছে। এই সাময়িক বিরতি আরও বিস্তীর্ণ একটি সমঝোতার অংশ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে, যার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

তবে জর্ডানের রাজা বলেন, ‘’আমাদের এই মুহূর্তে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন। এই যুদ্ধের অবসান হতেই হবে।’’ গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইল আক্রমণ করলে যে লড়াই শুরু হয়, তা বন্ধ করার জন্য আব্দুল্লাহ বারবার পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিয়েছেন।

মানবিক বিপর্যয়

সেই আক্রমণের পর বাইডেনের সাথে প্রথম সামনা-সামনি বৈঠকে আব্দুল্লাহ বলেন, রাফার উপর ইসরাইলের হামলা ‘’এই বিশ্ব মেনে নিতে পারে না।’’

‘’এটা আরেকটি মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আসবে। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এটা আর চলতে দিতে পারি না।’’

রাফার এক মসজিদে ইসরাইলি বিমান হামলার পরিণতি দেখছেন একজন ফিলিস্তিনি। ফটোঃ ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই পূর্ণ যুদ্ধবিরতির ডাক প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আমেরিকা বলছে, তারা হামাসকে পরাজিত করার জন্য ইসরাইলের অভিযান সমর্থন করে এবং সীমিত বিরতির মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করার প্রক্রিয়ার আহবান জানাচ্ছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইসরাইলের সাথেও বাইডেন কঠোর অবস্থান নেয়া শুরু করেছেন। গত সপ্তাহে বাইডেন বলেছেন যে গাজায় ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া ‘’মাত্রা ছাড়িয়ে’’ গেছে।

আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা

সংঘাত যাতে এই অস্থিতিশীল অঞ্চলে ছড়িয়ে না পরে, তা নিয়েও দুই নেতা আলোচনা করেন।

জানুয়ারী মাসে জর্ডানের এক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিনজন আমেরিকান সৈন্য নিহত হয়, যার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আর সিরিয়াতে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের উপর বিমান হামলা চালায়।

জর্ডানের রাজার সফরের প্রথম বিরতি হচ্ছে ওয়াশিংটন। এর পর তিনি গাজায় যুদ্ধ বিরতি এবং হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কানাডা, ফ্রান্স এবং জার্মানি যাবেন। .

গাজার ইতিহাসে সব চেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয় যখন হামাস দক্ষিণ ইসরাইলে এক অভূতপূর্ব হামলা চালায়, যাতে ১,১৬০ জন লোক নিহত হয় যাদের বেশির ভাগ বেসামরিক মানুষ। এই পরিসংখ্যান এএফপি ইসরাইলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করেছে্।

জবাবে ইসরাইল ব্যাপক বোমাবর্ষণ আর স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২৮,৩৪০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু।

প্রথম আক্রমণের দু’সপ্তাহরও কম সময় পর বাইডেন যখন ইসরাইলে যান, তখন আব্দুল্লাহর সাথে আলোচনার জন্য তাঁর জর্ডানে যাবার কথা ছিল। কিন্তু গাজার এক হাসপাতালে বিস্ফোরণের ফলে আরব বিশ্বে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হলে সেই সফর বাতিল করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানুয়ারী মাসে আম্মানে আব্দুল্লাহর সাথে দেখা করেন। জর্ডানের রাজা এই শীর্ষ কূটনীতিকে গাজায় মানবিক সংকট নিরসনের জন্য যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করার আহবান জানান।