মানবতা বিরোধী অপরাধ: শেরপুরের ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

প্রতীকী ছবি।

একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে, বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার তিন রাজাকার সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এই মামলার এক অভযুক্ত বিচার চলাকালে মারা যান।

সোমবার (১২ ফেব্রয়ারি) বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এ রায় দেয়।

তিন রাজাকার সদস্য হলেন; এ কে এম আকরাম হোসেন, এস এম. আমিনুজ্জামান ফারুক ও মোখলেছুর রহমান ওরফে তারা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের যাবজ্জীবন সাজার রায় হওয়ায়, সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নকলার মুক্তিযোদ্ধারা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত ২৪ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় রেখেছিলো ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার সময় তিন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করা হয়।

তিনি আরো জানান, তাদের বিরুদ্ধে এক নম্বর অভিযোগ ছিলো নকলার রামেরকান্দি বিবিরচর ও মজিদ বাড়ি গ্রামে গিয়ে সংঘবদ্ধভাবে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।

আর, দুই ও তিন নম্বর অভিযোগ ছিলো, তারা নকলা উপজেলার জালালপুর গ্রামের মো. আব্দুল হান্নান ও বাজারদি গ্রামের শাহজাহান আলী ওরফে সাজু এবং নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

তিনটি অভিযোগই ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন। তবে চার নম্বর অভিযোগ; জোর করে শ্রম আদায় বা কাজে বাধ্য করা; প্রমাণ করতে না পারায়, এ অভিযোগ থেকে তিন জনকেই খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে, ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই এ মামলার প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। সেই বছরের ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।

একই বছরের ১৪ নভেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় আদালত। আর, ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট বিচার শুরুর আদেশ দেয়।

অভিযোগ গঠনের পর ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি জামিনে থাকা অবস্থায় মারা যান অভিযুক্ত মো. এমদাদুল হক ওরফে খাজা। সেই দিন তার নাম মামলা থেকে বাদ দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৩ জন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষের কোনো সাক্ষী ছিলো না। সাক্ষ্য নেয়া শেষ হলে, ২০২২ সালের ৩ জুলাই যুক্তিতর্ক শুরু হয়। শেষ হয় চলতি বছর ২৪ জানুয়ারি।

এর পর, মামলাটি রায়ের জন্য আপেক্ষায় রাখে ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১২ ফেব্রয়ারি) রায়ে তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।