ভারতে সংশোধনাগারে থাকাকালীন মহিলা বন্দিদের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের সুপ্রিম কোর্ট।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্টে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতির করা স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় বৃহস্পতিবার ৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মহিলা সংশোধনাগারগুলি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করেন আইনজীবী তাপস ভঞ্জ।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি জানান, সংশোধনাগারে থাকাকালীন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছেন একাধিক মহিলা বন্দি।
আদালতবান্ধব তাপস ভঞ্জর আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্ট থেকে আদালত জানতে পারে, সম্প্রতি রাজ্যের জেলগুলিতেই ১৯৬টি শিশুর জন্ম হয়েছে। এই তথ্য জানতে পেরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
বিষয়টি শোনা মাত্রই উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর বলে উল্লেখ করেছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএম শিবাজ্ঞনম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি বিশেষ বেঞ্চে মামলাটি স্থানান্তর করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে বৃহস্পতিবার তাপস ভঞ্জ দাবি করেছেন, বন্দিরা জেলে সুরক্ষিত নয়। তিনি জানান, "মেয়েরা বন্দি হিসেবে আসার সময় গর্ভবতী ছিলেন না। পরে জানা গেছে তারা গর্ভবতী।"
তাপস ভঞ্জ আদালতে এও জানান, তিনি জেলবন্দি মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন বেশিরভাগই কারাগারের কর্মীদের ব্যবহারে খুশি নন। তিনি অভিযোগ করেন, রাজ্য বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও রিপোর্ট জমা পড়েনি।
কলকাতা হাইকোর্টে তার আবেদন, থানা থেকে পরীক্ষা করিয়ে মহিলাদের কারাগারে পাঠানো হোক এবং মেয়েদের জেলে পুরুষ কর্মী প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক।
কলকাতা হাইকোর্টে তাপস ভঞ্জ জানিয়েছিলেন, কোনও মহিলা বিচারাধীন বা সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর জেলে প্রবেশের আগে তার প্রেগনেন্সি টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হোক। কলকাতা হাইকোর্টে আগামী সোমবার ১২ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি রয়েছে।
সব শোনার পর বিচারপতিরা অত্যন্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে এই ঘটনাকে অপরাধমূলক কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের জেলবন্দি মহিলারা গর্ভবতী হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এবার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মামলা গ্রহণ করল দেশের শীর্ষ আদালত।
শুক্রবার ৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি আসানুদ্দিন আমানুল্লার ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত মামলাটি গ্রহণ করেছে।
বিচারপতি আসানুদ্দিন আমানুল্লার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে গোটা দেশে সংশোধনাগারগুলির দুরবস্থা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলছে। সেই মামলার সূত্রেই এদিন সংশ্লিষ্ট বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে হস্তক্ষেপ করেছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের এই মামলায় আদালত বান্ধব নিযুক্ত হয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী গৌরব অগরওয়াল। তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
তাপস ভঞ্জ জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আদালত বান্ধব। তারপরই বিষয়টি গৌরব অগরওয়াল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নজরে আনেন।