ওবায়দুল কাদের: 'মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করা হয়েছে'

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সৃষ্ট উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে বাংলাদেশ তার অবস্থার শক্তিশালী করেছে।

তিনি বলেন, “আমরা সীমান্ত খুলে দেওয়ার পক্ষে নই এবং আমরা কাউকে এই সুযোগ দিতে দেব না। মিয়ানমার সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশ তাদের উদ্বেগের কথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতিসংঘে চিঠি দেবে।”

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তারা তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্য, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছিল এবং তারা তাদের ফিরিয়ে নেবে এবং অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের ফিরিয়ে না নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা আমাদের সীমান্তে আতঙ্ক জিইয়ে রাখতে পারি না। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে এবং জাতিসংঘে চিঠি দেবে। ভারতের সঙ্গেও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন ভারতে আছেন। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্ত ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।”

বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার কথা বলায় বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বার্তা দিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টও একটি বার্তা দিয়েছেন। এখন বিএনপির সব আশা শেষ। তারা ভেবেছিল বিদেশি বন্ধুরা তাদের পাশে দাঁড়াবে। তাদের আশা একেবারেই শেষ হয়ে গেছে।”

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান ও অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি প্রথম ক্ষমতায় থাকাকালে রোহিঙ্গাদের এখানে আসার অনুমতি দিয়েছিল। “তারা কি তাদের অতীত ইতিহাস ভুলে গেছে?”

তিনি বলেন, “আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করেছেন, জাতিসংঘসহ সবাই তার প্রশংসা করেছে।”

রুহুল কবির রিজভী: সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায়

এদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেলের আঘাতে মানুষ নিহত ও আহত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলে এক বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর জন্য সরকারকে দায়ী করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো নারী-পুরুষ নিরাপদ নয়। মর্টার শেলের আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সার্বভৌমত্ব আরও শক্তিশালী করতে আমরা প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা ও কার্যক্রম দেখতে চাই।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি।

অন্য দেশের ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে কেন বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “এই ঘটনার উপযুক্ত জবাব কোথায়? জনসমর্থন না থাকায় বর্তমান সরকার একটি দুর্বল শাসন ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। ফলে লিখিত প্রতিবাদও করতে পারছে না।”

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে কিছুই করতে পারছে না। “তারা তাদের (বিদেশি) প্রভুদের ভয় পায়, কিন্তু তারা দেশের জনগণকে সন্ত্রস্ত করার জন্য বন্দুক ব্যবহার করে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশের চারপাশের সীমান্ত এলাকায় রক্ত ঝরায় বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও ভূমি এখন অরক্ষিত। তিনি বলেন, “প্রতিবেশী দেশ থেকে দলে দলে মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নীরব। এমনকি বিএসএফের গুলিতে বিজিবির এক সদস্য নিহত হলেও সরকার প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।”

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংযম ও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান এখন দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। “ফলে আমাদের সীমান্তরক্ষীরা প্রতিদিন পিছু হটছে, যা বাংলাদেশের মানুষকে বিপদে ফেলছে।”

রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা ছিল সুরক্ষিত, দেশের মানুষ নিরাপদে ছিল।

তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতা দখল করেছে। যা দেশের ৯৫ শতাংশ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, “কেবল ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তার দোসররা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলেছেন। কিন্তু এটা ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে জঘন্যতম উপহাস।”

উল্লেখ্য, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তার সশস্ত্র বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র লড়াই, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির কারণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সীমান্তে সংঘাতের আশঙ্কায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমারের তিন শতাধিক সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে, সোমবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপায়তলী গ্রামের একটি বাড়িতে মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা পুরুষ নিহত হয়েছেন।