শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সাজাপ্রাপ্ত চারজনের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে বলে আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে, বাদীর আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। ড. ইউনূসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
গত ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন; গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
পরে, এই রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন ড. ইউনূস এবং অন্য দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। একই সঙ্গে জামিন চান তারা।
শুনানি নিয়ে, গত ২৮ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূস সহ চারজনকে জামিন দেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে, শ্রম আদালতের দেয়া সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে আদালত।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল আপিল শুনানির জন্য আগামী ৩ মার্চ তারিখ ধার্য করেন।
এই আদেশ বাতিল চেয়ে, হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। সেই আবেদনের ওপর সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
ডক্টর ইউনূসের জন্য স্বচ্ছ ও ন্যায্য বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করার আহবান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের
বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর আপিল চলার সময় একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সম্মত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।
দুদকের একটি মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া ও তার বিরুদ্ধে করা শ্রম আইনে চলমান মামলাগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার পাঠানো এক ইমেইলের জবাবে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র এ আহবান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, "আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) লক্ষ্য করেছি, শ্রম আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে পরিচালিত হয়েছে।"
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর অভিযোগপত্র জমা দেয়া সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন, "দুর্নীতি দমন কমিশন অতিরিক্ত মামলাগুলির জন্য একটি চার্জশিট অনুমোদন করেছে যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হচ্ছে।"
এ বিষয়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মত যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বিগ্ন যে, "এই মামলাগুলি ড. ইউনূসকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশের শ্রম আইনের অপব্যবহার হিসাবে প্রতীয়মান হতে পারে।"
মুখপাত্র তার প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেন, "শ্রম ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে যে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে তা বাংলাদেশে আইনের শাসন জারি থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন জাগাতে ও ভবিষ্যৎ বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন।"