যুক্তরাষ্ট্রর সামরিক বাহিনী শুক্রবার ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের ব্যবহার করা কয়েক ডজন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে। গত সপ্তাহান্তে জর্ডানে এক ড্রোন হামলায় তিনজন আমেরিকান সৈন্য নিহত হবার পর এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা জবাবের শুরু।
‘’আমরা যেখানে আঘাত করতে চেয়েছি, সেটাই আঘাত করেছি,’’ বলেন ইউএস আর্মি লেফটেন্যান্ট জেনেরাল ডগলাস সিমস, যিনি জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ-এর অপারেশন্স ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন বিমান হামলা আনুমানিক ৩০ মিনিট ধরে চলেছে। ইরাকে তিনটি এবং সিরিয়ায় চারটি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, আক্রমণ তাঁর নির্দেশে চালানো হয়েছে।
‘’আমাদের জবাব আজ শুরু হল। আমাদের পছন্দের সময় এবং স্থান অনুযায়ী এটা চলতে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের কোথাও সংঘাত চায় না। কিন্তু যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তারা একথা জেনে রাখুকঃ আপনি যদি কোন আমেরিকানের ক্ষতি করেন, তাহলে আমরা তার জবাব দেব,’’ বাইডেন শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, তাদের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র আঘাত করলে পাল্টা জবাব দেবার প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করেন।
ইরান, রাইসি বলেন, ‘’কোন যুদ্ধ শুরু করবে না, কিন্তু কোন দেশ, কোন নিষ্ঠুর শক্তি যদি আমাদেরকে হুমকি দিতে চায়, তাহলে ইরান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র শক্ত জবাব দেবে।’’
সেন্ট্রাল কমান্ড-এর ঘোষণা
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বি-১ বোমারু বিমান অভিযানে অংশ নেয় যেখানে ১২৫টির বেশি প্রেসিশন বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।
‘’আমাদের জবাবের এটাই শুরু,’’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক বিবৃতিতে বলেন। ‘’প্রেসিডেন্ট আরও পদক্ষেপের অন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ইরানি রেভলুশনারী গার্ড আইআরজিসি এবং তাদের সম্পৃক্ত মিলিশিয়াদের যুক্তরাষ্ট্র এবং কোয়ালিশন বাহিনীর উপর হামলার জন্য জবাবদিহি করতে হয়।’’
‘’আগামী দিনগুলোতে আরও পাল্টা হামলা চালান হবে।’’
বিমান অভিযান শুরু হবার পর মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সামরিক বাহিনী পাল্টা হামলার ঘোষণা দেয়।
‘’ যুক্তরাষ্ট্র সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরানের ইসলামিক রেভলুশনারি গার্ড কুদস বাহিনী এবং তাদের সম্পৃক্ত মিলিশিয়া বাহিনীর উপর বিমান হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দূরপাল্লার বোমারু বিমান সহ অন্যান্য বিমান দিয়ে ৮৫টার বেশি লক্ষবস্তুতে আঘাত হানে,’’ সেন্টকম শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়।
CENTCOM Statement on U.S. Strikes in Iraq and SyriaAt 4:00 p.m. (EST) Feb. 02, U.S. Central Command (CENTCOM) forces conducted airstrikes in Iraq and Syria against Iran’s Islamic Revolutionary Guards Corps (IRGC) Quds Force and affiliated militia groups. U.S. military forces… pic.twitter.com/HeLMFDx9zY
— U.S. Central Command (@CENTCOM) February 2, 2024
যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা মিলিশিয়া এবং তাদের কুদস বাহিনী স্পন্সর, যারা আমেরিকা এবং মিত্রদের উপর হামলায় সহায়তা করেছে, তাদের ‘’ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম, গোয়েন্দা কেন্দ্র, রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র আর চালক-বিহীন ড্রোন গুদাম, রসদ এবং গোলাবারুদ সরবরাহ কার্যক্রমের'' উপর আঘাত করেছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম মরুভূমি এলাকায় কয়েকটি জায়গায় এবং সিরিয়া-জর্ডান সীমান্তে ‘’আমেরিকান আগ্রাসনের’’ খবর দিয়ে হতাহতের কথা বলেছে।
কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য কর্মকর্তারা কয়েক দিন ধরেই বলেছেন, আমেরিকা মিলিশিয়াদের উপর পাল্টা হামলা চালাবে। তারা পরিষ্কার করে বলেছেন, সময় নিয়ে ধাপে-ধাপে হামলা চালানো হবে, শুধু এক দফায় হবে না। কর্মকর্তারা নাম না প্রকাশ করার শর্তে কথা বলেন।
পাইলট চালিত জঙ্গি বিমান এবং চালক-বিহীন বিমান দিয়ে চালানো প্রাথমিক হামলাগুলোর লক্ষ্য ছিল মিলিশিয়াদের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, গোলাবারুদের গুদামঘর এবং অন্যান্য স্থাপনা।
ডেলাওয়ের রাজ্যের ডভার বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে জর্ডানে নিহত তিনজন সৈন্যের মরদেহ পৌঁছানোর দৃশ্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিহত সৈন্যদের শোকাহত পরিবারের সাথে দেখার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আক্রমণ শুরু হয়।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার না। গত কয়েক দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণের হুঁশিয়ারি দেয়ার ফলে মিলিশিয়া সদস্যরা তাদের জায়গা থেকে সরে গিয়েছে কি না, সেটাও পরিষ্কার না। তবে বোঝা যাচ্ছে, ইরাকের অন্যতম ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া কাতায়েব হেজবুল্লাহ সম্প্রতি আমেরিকান বাহিনীর উপর হামলা স্থগিত করার যে ঘোষণা দিয়েছে, তা পাল্টা হামলার পরিকল্পনার উপর কোন প্রভাব ফেলে নাই।
জর্ডানে আমেরিকান ঘাঁটিতে হামলার সাথে সম্পৃক্ততা ইরান অস্বীকার করেছে।