স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দ্রুত বিচার আইনকে স্থায়ী করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এ আইন কোনো দল বা রাজনৈতিক দলকে দমন করার জন্য নয়।
অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করতে আইনটি স্থায়ী করা হবে বলে জানান তিনি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত বিচার আইনের প্রয়োগ ফল দিয়েছে। আইনটি বিরোধীদের দমনের জন্য ব্যবহার করা হবে না। তবে যারা অবরোধ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা অস্থিতিশীল করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে।”
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনলাইন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম দিনে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কালো পতাকা মিছিল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, “সংসদের প্রথম দিনে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা ঠিক হয়নি। এ কারণে পুলিশ বাধা দেয়। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কোনো বাধা নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোনো কর্মসূচি হতে দেওয়া হবে না।”
মন্ত্রিসভার বৈঠকে দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত
২৯ জানুয়ারি (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচিত দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন করা হয়। তখন এর মেয়াদ ছিল দুই বছর। পরে কয়েকবার আইনটির মেয়াদ দুই-তিন বছর করে বাড়ানো হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৯ জুলাই দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়ে সংসদে বিল পাস করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল ‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুতবিচার) (সংশোধন) বিল- ২০১৯’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এই আইনের মেয়াদ এ বছরের ৯ এপ্রিল শেষ হবে।
আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল, চাঁদাবাজি, যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও সন্ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র কেনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপরাধ দ্রুততার সঙ্গে বিচারের জন্য এ আইন।
এ আইনে দোষী প্রমাণিত হলে দুই থেকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। প্রতি জেলায় গঠিত এক বা একাধিক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ আইনের মামলার বিচার চলে।
দ্রুত বিচার আইনে ১২০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৬০ দিন সময় পাওয়া যায়।
বিচার নিয়ে বিএনপি নেতা রিজভীর মন্তব্য
এদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়ার পর এখন গায়েবি সাজা দেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর আগে মৃত ব্যক্তি, গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও সাজা দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় পিকেটিং ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল শেষে বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আবারও প্রমাণিত হলো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা চক্রান্তমূলক এবং অবৈধ সরকারের নির্দেশেই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গায়েবি মামলা ও গায়েবি সাজা দিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। অবৈধ ক্ষমতাকে আর এক্সটেনশন করা যাবে না। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন দমানো যাবে না।"