ইরান সমর্থিত জঙ্গী হামলা ঠেকাতে “একাধিক পদক্ষেপের” প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সাউথ লনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। (৩০ জানুয়ারি, ২০২৪)

ইরান সমর্থিত জঙ্গিদের ড্রোন হামলায় আমেরিকান সৈন্য নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র “একাধিক পদক্ষেপের'” প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক তখনই ইরানের ইরাকভিত্তিক প্রক্সি দলগুলোর অন্যতম শক্তিশালী নেতা কাতাইব হিজবুল্লাহ ওই অঞ্চলে আমেরিকান সৈন্যদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সামরিক অভিযান স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার বলেন, ইরাক ও সিরিয়া সীমান্তের কাছে জর্ডানে তাদের একটি ঘাঁটিতে হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন সৈন্য নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছে। এ কারণেই তিনি সামরিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বাইডেন বা তার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, আমেরিকান সৈন্য ও স্থাপনায় হামলা চালানো গোষ্ঠীগুলোর সক্ষমতা হ্রাস করতে চান তারা। তাছাড়া ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরে যারা তাদের সমর্থন করে যাচ্ছেন “তাদের প্রতি কঠোর সংকেত” পাঠানোই এর লক্ষ্য।

তিনি বলেন যে আমেরিকান সৈন্য ও স্থাপনা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যা করা দরকার প্রেসিডেন্ট তাই করবেন।

গত ৭ অক্টোবর গাজায় হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কোন ঘাঁটিতে হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম আমেরিকান সৈন্য নিহত হবার ঘটনা ঘটল।

ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠী ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। পেন্টাগন বলছে, ড্রোন হামলায় ইরান সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়া গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহর “লক্ষণ” রয়েছে। যদিও এ ঘটনায় দায়ীদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত কিছু বলেনি।


মঙ্গলবার কাতাইব হিজবুল্লাহ বলেছে, ওই অঞ্চলে আমেরিকান সৈন্যদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। ইরাকি সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলার জন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তারা।

গোষ্ঠীটির মহাসচিব আবু হুসেইন আল-হামিদাউয়ি টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছেন,

"গাজায় আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে আমরা অন্যান্য সকল চেষ্টা বজায় রাখব।”

শত্রুতা বন্ধে কাতাইব হিজবুল্লাহর বিবৃতির পর ওয়াশিংটন তার পরিকল্পনা বদল করবে এমনটা মনে হচ্ছে না। পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি মেজর জেনারেল প্যাট রাইডার মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “কথার চেয়ে কাজ বেশি কথা বলে”।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, মঙ্গলবার রাতে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি ইরানি সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশ, স্বার্থ ও নাগরিকদের ওপর যে কোনো হামলার স্পষ্ট জবাব দেবে ইরান।

আঞ্চলিক যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ঠেকাতে বাইডেন তার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি না মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রয়োজন আছে”।


নভেম্বরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে সর্বাত্মক যুদ্ধ বন্ধে, ইরান ও তার প্রক্সিদের ঠেকানো বাইডেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রিপাবলিকানদের সমালোচনা এড়ানোর পাশাপাশি ওয়াশিংটনকে সঙ্ঘাতের বাইরেও রাখতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে এটি।

ভয়েস অব আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা জেফ সেলদিন এবং ভয়েস অব আমেরিকার তুর্কি সার্ভিসের প্রতিবেদক বেগম এরসোজ এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।