"বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের ট্রাস্ট এতটাই চলে গেছে যে, বিএনপি যদি ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে অংশও নিতো, জনগণ তাহলেও ভোট দিতে যেত না", বলে মনে করেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সুইডিশ সাংবাদিক, 'নেত্র নিউজ'-এর প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল।
তাসনিম খলিল জানান, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত "তত্ত্বাবধায়ক সরকারের" সময়ে আটক অবস্থা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি সুইডেনে চলে যান এবং সেখানে থাকা শুরু করেন।
২৫ জানুয়ারী ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাসনিম খলিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সম্পর্কে আরও বলেন, "এই যে একটা ফ্রাস্ট্রেশন। যে ভোট দিতে পারবো না, ব্যবস্থার ওপর তাদের (ভোটারদের) যে বিশ্বাস, ট্রাস্ট সেটা তারা হারিয়ে ফেলেছেন।"
বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানের যে হার নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে তা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ , বিএনপির নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের ডাক, সাইবার সিকিউরিটি আইন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে ভিন্নমতালম্বীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানি, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে
তাসনিম খলিল এ সাক্ষাৎকারে কথা বলেন।
তার নিজের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে (বর্তমানে সাইবার সিকিউরিটি আইন) করা মামলা প্রসঙ্গে তাসনিম বলেন, তার বিরুদ্ধে করা মামলাটি সম্পর্কে তিনি পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছেন।
তিনি সুইডেনের নাগরিক, থাকেন সুইডেন, লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্লাটফর্ম ফেইসবুকে, আর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বাংলাদেশে।
"বাংলাদেশের তো এখানে একটা এম্বেসি আছে, তারা কোনো চিঠি দেয়নি, কোর্ট কোনো চিঠি দেয়নি, কোনো সামন্স দেয়নি, কিছুই দেয় নি।"
সাইবার সিকিউরিটি আইনে তার বিরুদ্ধে করা মামলার একটি অভিযোগ প্রসঙ্গে তাসনিম খলিল বলেন, "আমি ফেইসবুকে লিখেছিলাম যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদরা, বিকজ শেখ মুজিবুর রহমান তো তখন বন্দি ছিলেন, জেলে ছিলেন।"... (এই কথা) বলাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে বলে তার বিরুদ্ধে র্যাব-এর এক কর্মকর্তা মামলা করে দেন।
তাসনিম খলিল মনে করেন, "বাংলাদেশের কোনো বিচারক র্যাব-এর ওই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করবেন না যে এই লোক তো সত্যি কথা বলেছে তাহলে ওর বিরুদ্ধে মামলা কেন করা হলো?"
ভয়েস অফ আমেরিকাকে তাসনিম খলিল বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইনে বাংলাদেশের মানুষের ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
"এ আইন গণবিরোধী, মানুষের বাকস্বাধীনতা বিরোধী আইন। এইটা যে নামেই থাকুক তা বাতিল করা উচিত। এ আইন যাদের আটক করা হয়েছে রাষ্ট্রের তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।"
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তাসনিম খলিল মনে করেন, যে আদালত নিজেই একটি 'তামাশায়' পরিণত হয়েছে। (অনেক ক্ষেত্রে) দেখা যায় এখানে পুলিশই বাদী হয়ে মামলা করে, পুলিশই স্বাক্ষী, পুলিশ যা চায় রায় সেটাই হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাসনিম খলিল।
তিনি বলেন, "বিচার ব্যবস্থা এখন একটা ডামি বিচার ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।"
ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শতরূপা বড়ুয়া।
বিএনপি ইলেকশনে গেলেও জনগণ ভোট থেকে বিরত থাকতো -- তাসনিম খলিল
Your browser doesn’t support HTML5