রাহুল গান্ধী বিহারে পৌঁছে বললেন, ঘৃণার বাজারে ভালবাসার দোকান খুলতেই ন্যায় যাত্রা

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

সোমবার ২৯ জানুয়ারি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়ে বিহারে পৌঁছেছেন। সোমবার ভারতীয় সময় সকালে কিষাণগঞ্জ পৌঁছে জনসভায় নিজের বক্তব্য রাখেন তিনি।

নিজের ভাষণে বিজেপি-র সমালোচনা করে তিনি বলেন, "হিংসা এবং অশান্তি ছড়িয়ে দেশের পরিবেশ নষ্ট করছে বিজেপি শিবির।" পাশাপাশি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস-এরও সমালোচনা করেন তিনি।

কংগ্রেস নেতা এদিন বলেন, "আরএসএস এবং বিজেপির যে আদর্শ রয়েছে তা দেশে হিংসা ছড়াচ্ছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে পাল্টা হিংসা কখনই কাজে দেবে না। ঘৃণাকে ঘৃণা মারতে পারে না, তাকে ভালবাসা দিয়েই মারতে হবে।" তাই ঘৃণার বাজারে ভালোবাসার দোকান খুলতেই তিনি এই ন্যায় যাত্রা করছেন বলে নিজের বক্তব্যে জানান তিনি।

এছাড়া জাতিগণনা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, "জাতিগণনা হলেই জনজাতি এবং ওবিসি তাদের প্রাপ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। এখন তারা নিজেদের প্রাপ্য সম্পর্কে পুরোটাই অন্ধকারে আছেন।"

কংগ্রেস নেতা ভাষণে বলেন কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীরের যাত্রার সময় অনেকেই তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে পশ্চিমবঙ্গ বা মণিপুরের কী হবে। সেই ভাবনা মাথায় রেখেই তিনি ভারত জোড়ো যাত্রার দ্বিতীয় পর্বে এই যাত্রার করার সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি আক্রমণাত্মক সুরে বলেন, "মণিপুরে কী হয়েছে সকলে জানেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেখানে যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হিংসা, তবু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।"

বিহারের রাজ্য রাজনীতি নিয়ে এই মুহূর্তে সারা ভারতে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় চলছে। রবিবার ২৯ জানুয়ারি বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি-র নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন সরকারের মুখ্যমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে নীতীশ কুমার আবার বিজেপি ও শরিক দলের জোট এনডিএ-তে ফিরে গেছেন ও রবিবারই মুখ্যমন্ত্রী পদে নবমবারের জন্য শপথ নিয়েছেন।

ভারতে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক দল বিহারের লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি ও নীতীশ কুমারের জেডিইউ। নীতীশ কুমার ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম আহ্বায়ক ছিলেন।

অন্যদিকে কংগেস ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের সম্পর্ক ভালো। জেডেইউ-এর তরফে আশা করা হয়েছিল নীতীশ কুমারকে ইন্ডিয়া জোটের সভাপতির পদ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই পদে মনোনীত হন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে।

এরপর থেকেই জোট ও জোটের শরিক দল, বিশেষত রাজ্যে আরজেডি-র সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে জেডিইউ ও নীতীশ কুমারের। মহাগঠবন্ধন ভেঙে এবার বিজেপির সঙ্গে জেডিইউ জোট বাঁধার ফলে লোকসভা নির্বাচনের আগে সামগ্রিকভাবে সমস্যা বাড়বে ইন্ডিয়া জোটের।

রবিবার ইস্তফা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের নীতীশ জানান, অনেক ভেবেই ইস্তফা দিয়েছেন তিনি এবং সরকার ভেঙেছেন। তার বক্তব্য ছিল, "আমাকে বিরোধী জোটে সামিল করা হয়েছিল, কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল না।"

নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ দাবি করেছে, কংগ্রেসের কারণেই 'ইন্ডিয়া' জোট ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন নীতীশ কুমার। দলের নেতা এস কে ত্যাগী মন্তব্য করেছে, বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসাবে ষড়যন্ত্র করে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গের নাম বলানো হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়েই এই কাজ করিয়েছিল কংগ্রেস, এমনই দাবি তুলেছে জেডিইউ-এর।