জাতিসংঘের মহাসচিব গাজায় প্রধান ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থার অর্থায়ন অব্যাহত রাখার জন্য রবিবার (২৮ জানুয়ারী) দাতা দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। গাজায় সংস্থটির ডজনখানেক কর্মচারীর বিরুদ্ধে চার মাস আগে ইসরাইলে হামাসের হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর তাঁর এই আহবান আসে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউএনআরডব্লিউএ বা আন’র, গাজায় ২০ লক্ষর বেশি ফিলিস্তিনিকে দেয়া সাহায্য ফেব্রুয়ারীতেই গুটিয়ে আনতে বাধ্য হবে।
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের সহায়তার কাজে নিয়োজিত জাতিসংঘের এই সংস্থাকে ঘিরে বিতর্ক এসেছে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচনাকারীরা নতুন একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে ঐক্যমতের কাছে চলে এসেছেন। নতুন এই সমঝোতার অধীনে সব চেয়ে ভয়ানক ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সহিংসতায় দু’মাসের জন্য বিরতি আসতে পারে।
উপকূলীয় এই ভূখণ্ড ভয়ানক এক মানবিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চলমান যুদ্ধ আর ইসরাইলি বিধিনিষেধের কারণে ত্রাণ সামগ্রী অবরুদ্ধ এলাকায় পৌঁছাচ্ছে না, যার ফলে জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশ এখন অনাহারের দ্বারপ্রান্তে।
‘’এসব কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তার পরিণতি থাকতেই হবে,’’ গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন।
‘’কিন্তু হাজার হাজার নারী ও পুরুষ যারা আন’রতে কাজ করে, অনেকে মানবিক কর্মীদের জন্য সব চেয়ে বিপজ্জনক পরস্থিতিতে, তাদের শাস্তি দেয়া ঠিক হবে না। যে জনগোষ্ঠীর জন্য তারা কাজ করে, তাদের চাহিদা অবশ্যই মেটাতে হবে,’’ তিনি বলেন।
তিনি বলেন, যে ১২জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে হামাসের হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে নয়জনকে তাৎক্ষনিক ছাঁটাই করা হয়, একজন মারা গেছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং বাকি দুজনকে শনাক্ত করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা সহ জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, যারা আন’রকে সব চেয়ে বেশি অনুদান দেয়, সপ্তাহান্তে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে ব্রিটেন, জার্মানি আর ইটালি সহ আটটি দেশ। আন’র-র ২০২২ সালের বাজেটের ৬০% আসে এই নয়টি দেশ থেকে।
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু ১৯৪৮ সাল থেকে
জাতিসংঘের এই সংস্থা স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষাসহ মৌলিক সেবা দেয় সেইসব ফিলিস্তিনি পরিবারকে, যারা ১৯৪৮ সালে ইসরাইল থেকে পালিয়ে এসেছিল বা নিজ বাসা-বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। তারা এখন গাজায়, ইসরাইল-অধিকৃত পশ্চিম তীর, জর্ডান, লেবানন আর সিরিয়ায় উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করেন।
উদ্বাস্তু এবং তাদের উত্তরসূরিদের সংখ্যা এখন প্রায় ৬০ লক্ষ, এবং গাজায় তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আন’র এবং গাজায় তাদের ১৩,০০০ কর্মচারী চলমান যুদ্ধের সময় তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে। তারা আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করে যেখানে লক্ষ লক্ষ সম্প্রতি বাস্ত্যচুত মানুষ আশ্রয় পেয়েছে।
গাজা ভূখণ্ডের ২৩ লক্ষ বাসিন্দার প্রায় ২০ লক্ষ খাদ্য এবং বাসস্থান সহ শুধু বেঁচে থাকার জন্য আন’র কর্মসূচির উপর নির্ভর করে, বলছেন সংস্থার কমিশনার-জেনেরাল ফিলিপে লাটসারিনি।
যুক্তরাষ্ট্র সহ ৯টি দেশের অনুদান স্থগিত করার ঘোষণার পর তিনি বলেন, এই লাইফ-লাইন যে ‘’কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে।‘’