সাম্প্রদায়িক সময়ে ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিক দল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও অন্য কংগ্রেস নেতারা জানিয়েছিলেনন, জোট সম্মানজনক শর্তে হোক। কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গে কম করে ৬ থেকে ৮টি আসন ছাড়তে হবে।
মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারি দলীয় বৈঠকে মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, "কংগ্রেস আটটা, দশটা, বারোটা আসন চাইছে। এভাবে জোট হবে না। বাংলায় সব আসনে লড়াই করার প্রস্তুতি নিন।"
ডেরেক ও' ব্রায়েন এবং অধীর চৌধুরীর মধ্যে এই প্রেক্ষিতে বিবাদ সম্প্রতি প্রকাশ্যে চলে আসে। তিনি বলেছেন, "বাংলায় ইন্ডিয়া জোট যে ঠিকমতো আকার নিতে পারছে না তার জন্যই তিন কারণ দায়ী—অধীর চৌধুরী, অধীর চৌধুরী এবং অধীর চৌধুরী।"
এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা অধীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন তিনি বলেন, “ডেরেক একজন বিদেশি। উনি সব জানেন। ওনাকেই জিজ্ঞেস করুন।”
এদিন সে ব্যাপারেই এক্স হ্যান্ডেল (পূর্ববর্তী ট্যুইটার)-এ ক্ষমা চেয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি লিখেছেন, "আমি ডেরেকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। অসাবধানতাবশত (বা অজান্তে) ওঁকে বিদেশি বলে ফেলেছি।"
দুই দলের দ্বন্দ্বের কারণ হিসাবে অধীর চৌধুরীর নাম করে তৃণমূল সংসদ সদস্য ডেরেক ও' ব্রায়েন অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি চলতি বিবাদের সূত্রপাত করেছেন। রাজ্য কংগ্রেসের একাংশ নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে জোট চাইছে না, অভিযোগও করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের এক অংশের নেতৃত্ব।
কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে মমতা শুরু থেকেই বলছেন, তারা রাজ্যে দুটোর বেশি আসন ছাড়বেন না। সেই দু'টি আসন হল বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ। এই দু'টি আসন ইতিমধ্যে কংগ্রেসের দখলেই রয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার, ২৪ জানুয়ারি আরও বলেছিলেন, “জোটের ব্যাপারে আমি প্রথম দিন যা প্রস্তাব দিয়েছিলাম তা ওরা প্রত্যাখ্যান করেছে। তখনই আমার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাংলায় আমরা একা লড়ব।" মমতার কথায়, “ওরা (কংগ্রেস) ৩০০ আসনে লড়ুন। বাকি আসনে আঞ্চলিক দলগুলির ব্যাপারে যেন হস্তক্ষেপ না করে।"
ডেরেক ও' ব্রায়েন-এর জন্ম কলকাতাতেই। তাদের পরিবার আইরিশ বংশোদ্ভূত। ১৮৬০ সালে এক আইরিশ সৈনিক কলকাতায় এসেছিলেন। তার পরবর্তী প্রজন্ম বাঙালির সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। ডেরেক-এর দাদু আমোস ও' ব্রায়েন প্রথম কোনও খ্রীষ্টান ছিলেন যিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও সংসদে রাজ্যসভায় তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও' ব্রায়েন পরস্পরের প্রতি সম্ভ্রম দেখিয়ে থাকেন। একই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দীর্ঘদিন সদস্যও ছিলেন দুই নেতা।