বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের সমীক্ষার রিপোর্ট গত ডিসেম্বরে পেশ করেছিল আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ।
হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন জানিয়েছেন এই সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে হিন্দু মন্দিরের কাঠামোর উপরে তৈরি হয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ২৫ জানুয়ারি সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল হিন্দু পক্ষ। সেখানে বিষ্ণুশঙ্কর জৈন দাবি করেন, "মন্দিরের পুরনো কাঠামো ব্যবহার করেই মসজিদ তৈরি করা হয়েছে বলে এএসআই-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। "
বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের একাংশ ভেঙে তৈরি হয়েছিল বলে দাবি করে হিন্দু পক্ষ ও মুসলিম পক্ষের মধ্যে বহুদিন ধরে বিতর্ক চলছে।
হিন্দু পক্ষ দাবি করে, অনেক বারই মুসলিমদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে ওই মন্দির। শেষবারের মতো বড় হামলা হয় মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সময়। তখনই তৈরি হয় জ্ঞানবাপী মসজিদ।
গত বছর ২০২৩-এর ২১ জুলাই হিন্দু পক্ষের আবেদন মেনে জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘সিল’ করা এলাকার বাইরে এএসআই-কে সমীক্ষার অনুমতি দিয়েছিলেন বারাণসী জেলা আদালতের বিচারক। এ ব্যাপারে গত ১৮ ডিসেম্বর বারাণসী জেলা আদালতে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল আরকিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া।
এরপরই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছিল হিন্দু পক্ষ। সম্প্রতি আদালত জানায়, জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’-র রিপোর্ট হিন্দু এবং মুসলিম পক্ষকে দেওয়া হবে। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এবার প্রকাশ্যে আনলেন হিন্দু পক্ষের আইনজীবী।
হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন দাবি করেছেন, "বর্তমান কাঠামোর আগে ওই চত্বরে বড় হিন্দু মন্দিরের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে। মন্দিরের পিলার ও প্লাস্টারের সামান্য বদল এনে পুরনো কাঠামোর উপরেই মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল বলেও রিপোর্টে পরিষ্কার ভাবে লেখা আছে। এমনকী মসজিদের গায়ে থাকা যে দেবনগরী, তেলুগু, কন্নড় ভাষায় লেখা লিপিগুলি উদ্ধার করা হয়েছে তা সাধারণত প্রাচীন হিন্দু মন্দিরেই দেখা যায়।"
এর আগে ২০২২ সালে জেলা প্রশাসনের সমীক্ষায় জ্ঞানবাপীর চত্বর থেকে একটি পাথরখণ্ড উদ্ধার হয়। সেটি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের আসল শিবলিঙ্গ বলে দাবি করে হিন্দু পক্ষ। মুসলিম পক্ষ দাবি করে, গত চারশো বছরে এই নিয়ে যেখানে কোনও বিবাদ হয়নি, সেখানে এখন কেন তা নিয়ে বিতর্ক উসকে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া মসজিদের গায়ে শৃঙ্গার গৌরী দেবীর মূর্তি খোদাই করা আছে। ওই মূর্তি সারা বছর পুজো করার অনুমতি চেয়ে মামলা করেছেন পাঁচ জন হিন্দু মহিলা। সেই মামলার সূত্র ধরেই এএসআই-এর সমীক্ষার নির্দেশ দেন বিচারক।
সেই আদেশ বাতিলের দাবিতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। কিন্তু শীর্ষ আদালত বারাণসী আদালতের নির্দেশ বহাল রাখে।
গত ১৬ জানুয়ারি এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানায় জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে এখনই আর কোনও সমীক্ষা করা যাবে না।
মসজিদ পরিদর্শনে স্থানীয় এক কমিশনার নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেই নির্দেশেও স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে ২০২৩-এর ১৯ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেখানে উচ্চ আদালত জানায় যেকোনও ধর্মস্থানের একটিমাত্র পরিচয় থাকতে পারে। একই সঙ্গে মন্দির ও মসজিদ হতে পারে না। তাই জ্ঞানবাপী মসজিদের চরিত্র নির্ধারণ করা দরকার।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রোহিত রঞ্জন অগ্রবাল জানান, জ্ঞানবাপী মসজিদ ভারতের ১৯৯১ সালের প্রোটেকশন অফ ওরশিপ অফ প্লেসেস আইনের আওতায় আসবে না। কারণ এই মসজিদের চরিত্র বদলের দাবি নিয়ে ১৯৯১ সালের আগেই মামলা হয়েছিল।