গাজা শহরে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২০জন নিহত, বলছে হামাস 

গাজা শহরে একজন ফিলিস্তিনি নারী মৃত স্বজনের হাত ধরে কাঁদছেন। ফাইল ফটোঃ ২৩ অক্টোবর, ২০২৩।

গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বৃহস্পতিবার গাজা শহরের এক চৌরাস্তার মোড়ে ফিলিস্তিনিরা যখন মানবিক ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত ও ১৫০ জন আহত হয়েছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা এই খবরের তদন্ত করছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা টমাস হোয়াইটের বলেছেন, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিসে জাতিসংঘের এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপর বুধবারের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ জনে এবং ৭৫ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।

জাতিসংঘের দাতব্য সংস্থা সরাসরি ইসরাইলকে দোষ দেয়নি, যদিও আগে তারা বলেছিল যে, তাদের কেন্দ্র ট্যাঙ্কের গোলায় আক্রান্ত হয়েছে এবং গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে ইসরাইলই একমাত্র শক্তি যাদের ট্যাঙ্ক রয়েছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের বিমান বা কামান মারফত এই হামলা চালানোর সম্ভাবনাকে তারা “বর্তমানে নাকচ করছে”, তবে এই হামলা নিয়ে তারা এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

তারা বলেছে, হামাসের নিক্ষেপ করা রকেটে ভবনটি আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।

শত শত ফিলিস্তিনি খান ইউনিস ছেড়ে পালাচ্ছেন।

খান ইউনিস হাসপাতাল এলাকায় বোমাবর্ষণ

খান ইউনিসে দুটি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বোমাবর্ষণ করে ইসরাইলের একাধিক ট্যাঙ্ক, যার ফলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে এই শহর ছেড়ে অন্যত্র পালাতে বাধ্য হয়েছে। ভূমধ্যসাগর বরাবর অপ্রশস্ত ভূখণ্ড গাজাকে হামাসের নিয়ন্ত্রণ-মুক্ত করতে ইসরাইলের যে প্রচেষ্টা তারই অংশ এই হামলা।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, আগের দিন খান ইউনিসে এক বসতবাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলার ফলে দুইজন শিশুসহ অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছে, এই শহরকে এখন ইসরাইলের সশস্ত্র বাহিনী ঘিরে রেখেছে এবং প্রায় লাগাতার আকাশ ও স্থল পথে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে।

গত বছর ৭ অক্টোবর গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস দক্ষিণ ইসরাইল আক্রমণ করে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইল গাজায় আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র থেকে ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে।

গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় ২৫,৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে।

নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘের আহবান

হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দেয়া জাতিসংঘের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ট্যাংক গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ‘সব ধরনের পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র গাজা বিষয়ক পরিচালক টমাস হোয়াইট বলেন, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যে শহরে আক্রমণটি হয়েছে, সেই খান ইউনিসের পরিস্থিতি “মানবিক আইনের মৌলিক নীতি সমুন্নত রাখতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার” প্রমাণ দেয়।

“খান ইউনিসে বেসামরিক স্থাপনায় ক্রমাগত হামলা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে এটি বন্ধ হওয়া উচিত,” হোয়াইট বলেন। “মানুষ সেখানে নিহত ও আহত হচ্ছে। বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেয়া হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর চারপাশে লড়াই তীব্র হওয়ায় লোকজন ভেতরে আটকা পড়েছে এবং জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।‘’

যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা

হামাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বেসামরিক লোকজনের উপর সর্বসাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানিয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, “আমরা জাতিসংঘের খান ইউনিস প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আজকের হামলার কঠোর নিন্দা জানাই।”

ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপে লাটসারিনি বলেন, প্রাঙ্গণটি স্পষ্টভাবে জাতিসংঘের স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এটির অবস্থান ইসরাইলের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এদিকে নতুন করে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এর অধীনে হামাসের হাতে আটক ইসরাইলি জিম্মি এবং ইসরাইলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে এবং ভূমধ্যসাগরের সংকীর্ণ অঞ্চল গাজায় আরও সহায়তা প্রবেশের অনুমোদন দেয়া হবে।

এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, এএফপি এবং রয়টার্স থেকে নেয়া হয়েছে