মাইকেল সুয়ারেজ যখন ঐ অনুষ্ঠানে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন তার বান্ধবী তাকে পাগল ভেবেছিল। কিন্তু ইমেইলে যখন আমন্ত্রনপত্রটি চলে আসে, তখন নিউ হ্যাম্পশায়ারের মেরিম্যাক শহরের এই ভোটার জানতেন, তিনি ডনাল্ড ট্রাম্প-এর নির্বাচন-পরবর্তী পার্টিতে না গেলেই নয়।
‘’আজকের বিশ্বে, আমাদের একজন শক্ত মানুষ দরকার,’’ সুয়ারেজ বলেন। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক প্রেসিডেন্ট দরকার যিনি রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন বা উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন-এর মতো স্বৈরশাসকের সাথে টেক্কা দিতে পারবে।
‘’একজন শক্তিশালী পুরুষ, যিনি সোজা কোথা বলা থেকে পিছপা হবেন না,’’ তিনি বলেন।
কিছুক্ষণ পরেই, নিউ হ্যাম্পশায়ারের নাশুয়ার এক হোটেল বলরুমে তাঁর প্রার্থী যখন স্টেজে উঠলেন, কয়েক শত সমর্থকের সাথে তিনি উল্লাস শুরু করেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী একটু আগেই ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রাইমারি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
মোট প্রদত্ত ভোটের ৯১ শতাংশ গণনার পর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিসংঘে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত নিকি হেইলি পেয়েছেন ৪৩ শতাংশ।
রেকর্ড সৃষ্টি
এই ফলাফল কয়েক দিক দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে। তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় ট্রাম্প পর পর তিনবার নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রাইমারি নির্বাচনে জয়লাভ করলেন, এবং গত দু’সপ্তাহে এটি তাঁর দ্বিতীয় বিজয়।
গত সপ্তাহে আইওয়া রাজ্যের ককাস এবং মঙ্গলবারের নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারি নির্বাচনে জয়লাভ করে ট্রাম্প হলেন গত ৪০ বছরে রিপাবলিকান দলের প্রথম পদপ্রার্থী, যিনি ক্ষয়তায় না থেকে এই দুই রাজ্যে জয়লাভ করলেন।
‘’আমরা রেকর্ড তৈরি করেছি,’’ আইওয়া রাজ্যে ৩০-পয়েন্ট ব্যবধানে তাঁর জয়ের দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন। ‘’এই ককাসের ইতিহাসে এটাই ছিল সব চেয়ে সেরা।‘’
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যানটিস রবিবার প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করার পর, নিউ হ্যাম্পশায়ারে মাত্র দু’জন প্রার্থী টিকে থাকে।
প্রাইমারি নির্বাচনের আগের রাতে, ট্রাম্পের তিন জন এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী – সাউথ ক্যারোলিনা সেনেটার টিম স্কট, নর্থ ডাকোটা গভর্নর ডাগ বারনাম এবং ব্যবসায়ী ভিভেক রামাসওয়ামি - তাঁর জনসভায় যোগ দিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের প্রতি তাদের সমর্থন প্রদর্শন করেন।
একতার সন্ধানে
নিকি হেইলি ট্রাম্পের সাথে তাঁর ব্যবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হন। জনমত জরিপে যা দেখা যাচ্ছিল, তার চেয়ে অনেক ভাল সংখ্যায় ভোট পেয়ে তিনি দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন।
‘’এক সময় এই প্রতিযোগিতায় আমার ১৪জন ছিলাম,’’ হেইলি নির্বাচন-পরবর্তী এক সভায় বলেন। ‘’এবং জরিপে আমাদের মাত্র ২ শতাংশ সমর্থন ছিল। কিন্তু আমি একজন যোদ্ধা, আমি লড়াই করি। এখন ডনাল্ড ট্রাম্প-এর পাশে শুধু আমরাই দাঁড়িয়ে আছি।‘’
নিউ হ্যাম্পশায়ারের গভর্নর ক্রিস সুনুনুর সমর্থন হেইলিকে সাহায্য করেছে, যেমন করেছে দল-নিরপেক্ষ ভোটার যারা তাঁকে রিপাবলিকান দলের ব্যালটে সমর্থন করেছে। যেমন, নিউ হ্যাম্পশায়ারের পেলহাম শহরের স্কুল শিক্ষক পেগি সাওাকি।
‘’হেইলি লোকজনকে একত্রিত করতে পারবেন, আর এই দেশে আমারদের এখন সেটাই প্রয়োজন,’’ পেগি সাওাকি বলেন।
সবার দৃষ্টি দক্ষিণে
পরবর্তী প্রাইমারি নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারী মাসে সাউথ ক্যারোলিনা রাজ্যে, যেখানে ট্রাম্প আবার হেইলির বিরুদ্ধে লড়বেন। হেইলি এক সময় এই রাজ্যের গভর্নর ছিলেন, অন্যদিকে ট্রাম্প সাউথ ক্যারোলিনার রাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছেন। ট্রাম্প বলছেন, তিনি ‘’খুব সহজেই জিতবেন।‘’
হেইলি মনে হয় এই চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতের জনসভায় তিনি উৎফুল্ল চিত্তে ঘোষণা দেন, ‘’তোমাদের ভালবাসার জন্য ধন্যবাদ নিউ হ্যাম্পশায়ার। আমরা এখন সাউথ ক্যারোলিনায় নিজ বাড়িতে যাচ্ছি।‘