অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের দিন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বধর্মের সংহতি মিছিল; বিরোধিতায় বিজেপি, আইএসএফ

অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের দিন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বধর্মের সংহতি মিছিল; বিরোধিতায় বিজেপি, আইএসএফ

আগামী ২২ জানুয়ারি উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের পৌরোহিত্য করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

মঙ্গলবার ১৬ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন-তে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২২ জানুয়ারি কলকাতার কালীঘাট থেকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পার্ক সার্কাস ময়দান পর্যন্ত সব ধর্মের, সব বর্ণের মানুষকে নিয়ে মিছিল করবেন তিনি। পার্ক সার্কাস ময়দানে একটি জনসভারও আয়োজন করা হবে।

নবান্নর সাংবাদিক বৈঠক থেকে ঘোষণা করলেও, ২২ জানুয়ারির কর্মসূচি হবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক কর্মসূচি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তৃণমূলের সমস্ত জেলা ও ব্লক সংগঠনকে বলা হয়েছে, তারা যেন ওই দিন সকলে সম্প্রীতি মিছিল বের করেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে গোটা দেশে বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটাতে চাইছে।

রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার তিনি বলেন, "প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা কোনও মুখ্যমন্ত্রীর কাজ নয়। আমার কাজ পরিকাঠামো তৈরি করা ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখা।"

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ২২ তারিখ যে বর্ণাঢ্য মিছিল হবে তা মসজিদ, গুরুদ্বারা, গির্জা সব ছুঁয়ে পার্ক সার্কাস ময়দানে পৌঁছবে।

দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আসন্ন এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য শুধু মাত্র রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষকে বার্তা দেওয়া নয়। তিনি রাজ্যের উদার হিন্দুদেরও বোঝাতে চাইছেন, উগ্র ধর্মীয় রাস্তায় হেঁটে কেন্দ্রের সরকার সমাজ ব্যবস্থাকে বিপন্ন করে তুলছে। সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।

সংহতি মিছিলে আপত্তি জানিয়ে বুধবার ১৭ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মিছিল পিছনোর দাবি জানিয়েছেন।

তার যুক্তি ওই মিছিলকে কেন্দ্র করে হিংসা ছড়াতে পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। এদিন একই মন্তব্য করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট সেক্যুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকি।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নওসাদ বলেন, "শুভেন্দুবাবুরা এ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন। ওঁরা সুযোগ পেয়েছেন, এখন করবেনই। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২২ তারিখ মিছিলের ডাক দিয়ে উস্কানি দিতে চাইছেন। আমি রাজ্যের সংখ্যালঘুদের এবং ধর্মনিরপেক্ষ সুশীল সমাজের উদ্দেশে বলতে চাই, এই প্ররোচনায় পা দেবেন না।"

নওসাদের কথায়, "শুভেন্দুবাবু যে রকম কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর কথা বলছেন, তা আমি মনে করি না। বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নামনোর প্রয়োজন নেই। বাংলার মানুষ শান্তিপ্রিয়। কিন্তু এও বিশ্বাস করি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাতা ফাঁদে ওই দিন কারও পা দেওয়া ঠিক হবে না।"

নওসাদ সিদ্দিকি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২২ তারিখের সংহতি মিছিল বাতিল করে ২৩ তারিখ হাঁটুন। আমিও তাতে হাঁটব। ২৩ তারিখ আইএসএফের দেশপ্রেম দিবসের ডাক দিয়েছে। ওই দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাঁটতে রাজি। কিন্তু ২২ তারিখ নয়।" ২৩ তারিখ নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোসের জন্মদিন।