রাজনৈতিক দলগুলোতে ট্রান্সজেন্ডারদের যুক্ত করা হচ্ছে না

রাজনৈতিক দলগুলোতে ট্রান্সজেন্ডারদের যুক্ত করা হচ্ছে না

দলগুলোর সদিচ্ছার অভাব ও সামাজিক-ধর্মীয় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে রাজনীতিতে এগিয়ে যেতে পারছে না ট্রান্সজেন্ডরা (তৃতীয় লিঙ্গ), এমনটা মনে করছেন তারা।

তারপরও নিজস্ব উদ্যোগে বিভিন্ন সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন অনেক ট্রান্সজেন্ডার।

আর এবারই প্রথম দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দুই ট্রান্সজেন্ডার প্রার্থী অংশ নিয়ে কেউ জয়ী হতে না পারলেও তাদের একজন, আনোয়ারা ইসলাম রানী ভোটের মাঠে দারুন লড়াই করে চমক দেখিয়েছেন।

আগামীতে সুযোগ পেলে স্থানীয় সরকারের মতো জাতীয় সংসদেও ট্রান্সজেন্ডরা আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করতে পারবে বলে আশাবাদী তারা।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরর প্রধান প্রতিদ্বন্দী হিসেবে শুরু থেকে আলোচনায় ছিলেন ট্রান্সজেন্ডার আনোয়ারা ইসলাম রানী।

এই আসনে ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ভোটে জিএম কাদের জয়ী হলেও দ্বিতীয় হয়েছেন রানী।

রানী ভোটে পেয়েছেন ২৩ হাজার ৩২৬ ভোট।

অন্যদিকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-৫ আসনে সুপ্রিম পার্টির মনোনয় পান ট্রান্সজেন্ডার উর্মি।

যদিও ভোটে ১০৯৪ টি ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন তিনি।

আনোয়ারা ইসলাম রানী ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "ভোটের ফলাফল নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। কাদের সাহেব অনেক দিনের রাজনীতিবিদ। তিনি একটি দলের চেয়ারম্যান, তার সঙ্গে নির্বাচন করে এতো দূর আসতে পেরেছি এটাই বড় সফলতা। আমি রংপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।"

আরেক প্রার্থী উর্মি বলেন, "প্রথমবার ভোট করেছি। অনেকের কাছে যেতে পারি নাই। অনেক কিছু জানতাম না।এবার সেইগুলো জেনিছি। আগামী যদি আবার কখনো নির্বাচনে দাঁড়াই, তাহলে তখন এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবো।"

গত নভেম্বরে বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল-এক্সপ্লোর ইয়োর ফিউচার উইথ আস’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিলো ট্রান্সজেন্ডার হো চি মিন ইসলামের। কিন্তু, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত তাকে বক্তব্য দিতে দেয়নি আয়োজকরা।

হো চি মিন ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "সংসদ নির্বাচনে দুই ট্রান্সজেন্ডারের অংশ নেওয়াই ছিলো বিশাল ব্যাপার। কারণ আমাদের সমাজে ট্রান্সজেন্ডারা অবহেলিত। সেখানে ট্রান্সজেন্ডার যদি সংসদে দাড়িয়ে আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করার সুযোগ পায় সেটা পুরো পৃথিবী চেয়ে-চেয়ে দেখবে। আমি আশাবাদী, তারা এবার না পারলেও আগামীতে কেউ না কেউ পারবে।"

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়াটাকে আমি মহতি উদ্যোগ হিসেবে দেখি। নারী-পুরুষ সবার মতো ট্রান্সজেন্ডাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সমান সুযোগ থাকা উচিত।"

রানী

রানী, উর্মি আগামীতে নির্বাচন করবেন কিনা?

নির্বাচন করতে গিয়ে নিজের সব সঞ্চয় শেষ এবং ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রানী।

তিনি বলেন, "আমার তো আর্থিক সমস্যা আছে। যা ছিলো সবকিছু এই নির্বাচনে শেষ করে দিয়েছি। ঋণও করেছি। তাই হয়তো আগামীতে নির্বাচনে আর অংশগ্রহণ করবো না। কিন্তু আমার জায়গা থেকে মানুষের যে সেবা করে যাচ্ছি, সেটা অব্যাহত রাখবো। এটাকে আমি আমার ধর্ম মনে করি।"

তিনি আরও বলেন, "আমার সম্প্রদায়ের লোকদের উদ্দেশ্যে একটা বার্তা থাকবে, সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদ হয়ে বাচঁতে হবে। আমরা যদি কর্মমুখী হয় দেশের ওপর চাপ কমবে। আমরা কাজ করলে সেখানে সরকারের দেশ পরিচালনার কাজে একটু হলেও ভূমিকা থাকবে। আমারও সম্মান-মর্যাদা নিয়ে সমাজে বেঁচে থাকতে পারবো।"

আরেক প্রার্থী উর্মি বলেন, "আগামীতে আবার নির্বাচনে অংশ নিবো কিনা সেটা এখন বলতে পারবো না। আমাদের তো আর্থিক একটা সীমাবদ্ধতা আছে। তবে, রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।"

ঊর্মি

সরাসরি রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে চান ট্রান্সজেন্ডাররা

বিচ্ছিন্নভাবে রাজনীতি না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সারাসরি যুক্ত হয়ে মূলধারায় আসতে চান ট্রান্সজেন্ডার নাগরিকরা।

তারা বলছেন, সুযোগ পেলে সাধারণ রাজনীতিবিদের চেয়ে তারা বেশি জনগণের সেবা করতে পারবেন। তাদের ছেলে-মেয়ে নেই। কারও-কারও পরিবার নেই। ফলে, তাদের কোনও "পিছু টান" নেই।

কিন্তু ট্রান্সজেন্ডারদের দলে যুক্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

আবার কেউ স্বতন্ত্রভাবে রাজনীতি করে জনপ্রতিনিধি হয়ে গেলেও সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে মেনে নিতে চায় না। বিভিন্ন ধরণের সমস্যা তৈরি হয়।

হো চি মিন ইসলাম বলেন, "আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করার চেষ্টা ছিলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো আমাদেরকে সেইভাবে স্বাগত জানাচ্ছে না। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ট্রান্সজেন্ডারদের অনেকে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে সেই সুযোগ নেই। দলের পরের কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এবার দেয়নি। আমাদের পক্ষে থেকে সব সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। তারা যেন ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন।"

বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচিত প্রতিনিধি ট্রান্সজেন্ডার নজরুল ইসলাম ঋতু।

তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার লোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

ঋতু ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "জনগণের সেবা করা মানেই রাজনীতি। আমাদের তো ছেলে-মেয়ে নেই। জনগণই আমাদের কাছে সব। তারা আমাদেরকে আপন করে নিলে আমরা এগিয়ে যেতে পারি।"

তিনি আরও বলেন, "ইতোমধ্যে আমার বিরুদ্ধে স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতা ও মেম্বারা ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে। তারা চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে আমি বিরোধী দলের লোক। আমাকে যেন কোনও সহযোগিতা ও বরাদ্দ দেওয়া না হয়। আসলে রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাদের লোকদের সুযোগ দেবে না। তারা চায় না আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি।"

দলে ট্রান্সজেন্ডারদের সুযোগ না থাকার কথা স্বীকার রাজনীতিবিদদের

সরাসরি দলে যুক্ত হয়ে ট্রান্সজেন্ডারদের যে রাজনীতি করার সুযোগ এখনো তৈরি হয়নি তা স্বীকার করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠিগুলো এখনও ট্রান্সজেন্ডারদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে নাই।

যার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোতে ট্রান্সজেন্ডারদের যুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে, সামনের দিনগুলোতে ট্রান্সজেন্ডারে কিভাবে সরাসরি দলে যুক্ত করা তা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "ট্রান্সজেন্ডাররাও মানুষ। সমাজ তাদেরকে অনেক জায়গায় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি মনে করি আমাদের ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।"

আমিনুল ইসলাম বলেন, "আমাদের সরকার তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদেরকে রাজনীতিতে স্বাগত জানাবো না, এটা হতে পারে না। তবে, ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে বাংলাদেশে সামাজিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে। হুট করে একজন ট্রান্সজেন্ডারকে দলে এনে মনোনয় দিলে হবে না। আগে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।"

বিএনপি'র নিপুন রায় চৌধুরী বলেন, "২০১৮ সালে আমি যখন জেলে গিয়েছি, তখন আমার সঙ্গে একজন ট্রান্সজেন্ডার ছিলো। তখন আমি দেখেছি তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনা আছে। তারা সুযোগ পায় না বলেই রাজনীতিতে পিছিয়ে আছে।"

তিনি আরও বলেন, "ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য আলাদা একটা কোটা রাখতে আমি দলের মধ্যে প্রস্তাব করবো। যাতে তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। নির্বাচনেও তাদেরকে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব রাখবো আমাদের দলে।"

সমাজে ট্রান্সজেন্ডাদের "বিকৃতভাবে" উপস্থান করা হয়

ট্রান্সজেন্ডাrরা বলছেন, সমাজে তাদেরকে বিকৃতভাবে উপস্থান করা হয়।

নাটক-সিমেনায় শুধু দেখানো হয়, হিজড়ারা রাস্তায় টাকা তুলছে। বিয়ে বাড়িতে নাচ-গান করছে।

হো চি মিন ইসলাম বলেন, "আমাদের সমাজে ট্রান্সজেন্ডাররা অবহেলিত। তাদেরকে সমাজে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। মানুষ হিজড়া বলতে চিন্তা করে, রাস্তায় টাকা তুলছে। বিয়ে বাড়িতে নাচ -গান করছে। নাটক-সিনেমায়ও সেইভাবে দেখানো হয়।"

একই কথা বলছেন ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে কাজ আরেক সংগঠন প্রান্তজের চেয়ারম্যান মুন। তিনি বলেন, "এছাড়া ট্রান্সজেন্ডারদের সহজে কেউ বাসা ভাড়া দেয় না। চাকরি ও কাজে নিতে চায় না। নিজের পরিবারও মেনে নিতে চায় না। আমাদের দেশে নানান সমস্যায় ট্রান্সজেন্ডাররা ভুগছে।"

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যত ট্রান্সজেন্ডার জনপ্রতিনিধি

জাতীয় নির্বাচনে ট্রান্সজেন্ডার ২ প্রার্থীর পরাজয় হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি হয়েছেন।

তবে, এখন পর্যন্ত কতজন ট্রান্সজেন্ডার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তার সঠিক হিসেব নেই।

বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে প্রকাশিত খবরের হিসেবে অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২৩ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ট্রান্সজেন্ডার সুলতানা আহমেদ সাগরিকা। ২

০২২ সালের কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য পদে নির্বাচিত হন ট্রান্সজেন্ডার পায়েল খাতুন।

২০২১ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে ৩নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হন ট্রান্সজেন্ডার দিথি খাতুন। তার আগে ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন দিথি খাতুন।

২০২১ সালের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬ নম্বর ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বাংলাদেশে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নজরুল ইসলাম ঋতু।

২০২১ সালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন ট্রান্সজেন্ডার সাহিদা বিবি।

একই বছর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন ট্রান্সজেন্ডার কুলসুম খাতুন।

২০১৭ সালে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী হন তৃতীয় লিঙ্গের নাদিরা খানম। নাদিরা খানম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।

২০০৪ সালে যশোর বাঘারপাড়া পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়ে ট্রান্সজেন্ডার সুমি খাতুন মাত্র ১৩ ভোটে পরাজিত হন। তিনি ২০১৫ সালে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন।

ভোটার ৮৪৯, দেশে প্রকৃত ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা কত?

২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় ট্রান্সজেন্ডাররা।

ভোটার নিবন্ধন ফর্মে ‘নারী’ ও ‘পুরুষের’ পাশাপাশি ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ শব্দটিও যুক্ত হয়।

তবে, তার আগে ট্রান্সজেন্ডররা ভোট দিতো নারী অথবা পুরুষ পরিচয়ে।

ইসির হিসেবে বর্তমানে ট্রান্সজেন্ডার ভোটার সংখ্যা- ৮৪৯ জন। গত বছরের জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি-২০২২–এর প্রতিবেদন বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিজড়া ১২ হাজার ৬২৯ জন।

কিন্তু দেশে প্রকৃত ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা আরও ৫০ হাজারের বেশি বলেও দাবি তাদের।

ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে কাজ করে 'বন্ধু' স্যোশাল ওয়েলফেয়ার নামের একটি সংগঠন।

এই সংগঠনের সাথে যুক্ত ট্রান্সজেন্ডার কাজী রাফিদ রেজওয়ান অরুপ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। যারা এই কাজটি করেছে, তারা বাসা-বাড়িতে গিয়ে সঠিকভাবে বলতে না পারায় অনেক ট্রান্সজেন্ডার তালিকার বাইরে রয়ে গেছে।"

প্রান্তজে'র চেয়ারম্যান মুনম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমার পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ মুমিনুল ইসলাম মুন। আমি এখন ভোটার তালিকায় পুরুষ হিসেবে আছি। কারণ আমার শিক্ষাগত সনদে একই নাম আছে। এইগুলোতো আমি পরিবর্তন করতে পারি নাই। আবার ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় দিলে আমাদের সহজে চাকরি পাওয়া যায় না। যার কারণে অনেকে পরিচয় গোপন রাখতে এখনও পুরুষ অথবা মহিলা হিসেবে আছেন। তাই প্রকৃত ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা অনেক বেশি।"

ট্রান্সজেন্ডার আইন নিয়ে হেফাজতের আপত্তি

বাংলাদেশের ধর্মীয় সংগঠন হেফাজত ইসলাম। গত ৫ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে সংগঠনটির আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেন, “ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন ২০২৩ (খসড়া)" আমাদের নজরে এসেছে। বিভিন্ন সূত্র মারফত আমরা এটিও জানতে পেরেছি যে, আইনটি অচিরেই পাশ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।এ আইনটিকে যদিও হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষা আইন মনে করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার এক নয়। হিজড়া হচ্ছে জন্মগতভাবে যার মধ্যে পুরুষ ও নারী উভয়ের চিহ্ন বিদ্যমান থাকে। পক্ষান্তরে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি হল, জন্মগতভাবে কোনও পুরুষ নারী হয়ে যাওয়া। যা স্পষ্ট হারাম। এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেওয়া শরীয়ত এবং কুরআন-সুন্নাহর বিকৃতি সাধনের মতো কুফরি গুনাহ।"

শীর্ষ এই দুই নেতা বলেন, "হিজড়া তথা খুনছার বিষয়ে শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধান ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবসমূহ উল্লেখ রয়েছে। সে বিধান বাস্তবায়ন করলেই তাদের অধিকারের প্রকৃত সুরক্ষা হবে। তাই ইসলামী পরিপন্থীই এই আইন পাশ না করে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সরকার প্রধানের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।"