বাংলাদেশ: প্রথম অফিস করছেন নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা

মন্ত্রণালয়ের প্রথম অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের নবনিযুক্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪।

বাংলাদেশের নবনিযুক্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা রবিবার (১৪ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের প্রথম অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

এসময় তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বুঝে নেন; পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হন। কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। জানান তাদের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন যে রাতারাতি বিদ্যমান সংকট দূর করা যাবেনা। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি বদল করা হবে।

আর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। নতুন কৃষিমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি মনেপ্রাণে কৃষক।

এদিকে, নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের বরণ করে নিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলো মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলো।

অর্থমন্ত্রী: রাতারাতি সব সংকট দূর করা যাবে না

রাতারাতি সব সংকট দূর করা যাবে না বলে জানয়িছেন নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, “অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আছে; তা সমাধান করতে হবে।”

অর্থমন্ত্রী জানান, রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সময় দিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় একা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, “ এবিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবো। রাতারাতি সব কিছু ঠিক করা যাবে না।”

অর্থ পাচার রোধে কাজ করা হবে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। বলেন, টাকার মূল্য কমে গেছে। সেটা নিয়েও কাজ করা হবে। অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আছে; একটু সময় দিতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী: ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা দেবো’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন, “এটা করতে পারলে ঢাকা শহরে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হবে না।” সামন্ত লাল বলেন, “আমি প্রতিটি হাসপাতালে যাবো; সমস্যা জেনে কর্মপরিকল্পনা করবো।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন।

অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন আরো বলেন, “আমরা যদি সবাই সিনসিয়ারলি কাজ করি অসম্ভব বলে কিছু নেই।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি আগের মতোই থাকবেন। কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, “আপনাদের উপদেশ পেলে আমরা যথাযথভাবে কাজ করতে পারবো।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি দূর করতে আপনি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমি চেষ্টা করবো। দুর্নীতির বিষয় নিয়ে আমার জিরো টলারেন্স থাকবে।”

শিক্ষামন্ত্রী: ‘মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন হতে পারে’

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, দরকার হল, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি-তে অবশ্যই পরিবর্তন আসতে পারে।

শিক্ষামন্ত্রী উল্লেখ করেন যে শিক্ষায় নানান ধরনের রূপান্তরের কাজ সূচিত হয়েছে। আর এই রূপান্তরের ভিত রচনা করে দিয়েছিলেন আগের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ কী; এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার সব কাজের মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা রাখতে হয়।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

তিনি বলেন, “সুতরাং এখানে নতুন করে হঠাৎ কোনো কিছু চিন্তা করার অবকাশ খুবই কম।”

“বিদ্যালয় পর্যায় শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে। এমন সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির ঊর্ধ্বে;” যোগ করেন মহিবুল হাসান চৌধুরী।

তিনি জানান, যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা করতে যাচ্ছে, তাদের যেন কর্মভিত্তিক জ্ঞান দেয়া যায় সে চেষ্টা করা হবে।

কারিকুলাম হঠাৎ করে আসেনি বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। “আমরা আগামী দিনগুলোতে শিক্ষা পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাজ করবো; জানান মহিবুল হাসান চৌধুরী।

পরিবেশমন্ত্রী

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত করে, ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি আরো বলেন, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ, প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণ এবং পাহাড় কাটা রোধে অংশীজনদের পরামর্শ গ্রহণ করে সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার এবং ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান সাবের হোসেন চৌধুরী।

বিমানমন্ত্রী

বিমানে দুর্নীতি আছে কি না, তা আগে দেখতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক খান।

তিনি বলেন, “আমি আগেও এই মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। সুতরাং, এখানকার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি জানি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে যে কাজগুলো চলছে সেগুলো যাতে দ্রুত শেষ হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখবো।”

পর্যটন খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, পর্যটন খাতে অপার সম্ভাবনা আছে। কীভাবে সেই সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করা যায় সেগুলো দেখা হবে।

বিমানের দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “বিমানের দুর্নীতি আছে সেটা আমি স্বীকার করি না। আমাকে আগে দেখতে হবে।”

মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী

মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেছেন, সভ্যতার দুইটি হাত, একটি পুরুষ অন্যটি নারী। কাউকে পেছনে ফেলে কেউ অগ্রসর হয় না।

মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি।

তিনি বলেন, “নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমি নারী ও শিশু নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করি। সেজন্য আমার খুবই ভালো লাগার জায়গা এটি।”

কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ বলেছেন যে তিনি পেশায়-নেশায় সবকিছুর মধ্যে কৃষক।

তিনি বলেন, “সবকিছুতেই মোটামুটি টাচ দিয়ে এসেছি। চিফ হুইপ ছিলাম, সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অ্যাক্টিভিটি ছিলো আমার। তবুও বলবো, আমি এখনো শিখছি। শেখার শেষ নেই। আমি শিখে কাজ করতে চাই।”

কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ।

কৃষিমন্ত্রণালয়কে একটি বড় দফতর বলে উল্লেখ করেন আব্দুস শহীদ। বলেন, “আমাদের কৃষকদের উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন, আমাদের ক্ষমতার মধ্যে যা আছে করবো।”

আব্দুর রাজ্জাকের মতো কৃষিবিদ যে মন্ত্রণালয় কাজ করে গেছেন, সেই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কি না; জানতে চাইলে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্যই তো আমাদের জীবন। কোনো কাজ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা না করে ফলাফল অর্জন করা যায় না।”

কৃষিতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন নতুন মন্ত্রী।

আব্দুস শহীদ আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সিন্ডিকেট সব জায়গায় থাকে। তাদের কীভাবে ভেঙে দিতে হবে, সেটার পদ্ধতি বের করতে হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী

চলমান কাজগুলো শেষ করা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

তিনি বলেন, “গত তিন মেয়াদে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখিনি। এখন আবার কী চ্যালেঞ্জ। এখন মূলত যেগুলো শুরু করেছিলাম সেগুলো শেষ করে যেতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ।”

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

প্রধানমন্ত্রী সবসময় সৎ লোক মূল্যায়ন করেন বলে উল্লেখ করেন ইয়াফেস ওসমান।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, যদি সততার সঙ্গে কাজ করি, তাহলে চারবার কেন পাঁচবার, ছয়বারও মন্ত্রী হতে পারবো। এটাই প্রমাণ হয়েছে।”

৭ জানুয়ারির নির্বাচন

উল্লেখ্য, ৭ জানুয়ারী ২০২৪-এ হয়ে গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে ৩০০ আসনের ঘোষিত ২৯৮ টির মধ্যে ২২২ টিতে জিতে, দুই তৃতীয়াংশের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।

অংশ নেয়া ২৮ টি দলের মধ্যে, ২৪ টি দল থেকে একজনও জয়লাভ করেনি। আর, হেরে যাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই জামানত হারিয়েছেন। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ১১ ও জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যান পার্টি থেকে জিতেছেন ১ জন করে।

এদের মধ্যে, জাতীয় পার্টির ১১ জনই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে, যেসব জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো, সেসব নির্বাচনী এলাকায়।

জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন নৌকা নিয়ে লড়ে, আর কল্যান পার্টিও তার আসনটি জিতেছে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে।

বিজয়ী ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা।