মুখমণ্ডলের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এক শিশু ভর্তি হয় পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তার ঠোঁট, গাল, চোয়ালে ছড়িয়ে পড়েছিল ক্যানসার।
অস্ত্রোপচারের পরে শিশুটির ঠোঁট, গাল, চোয়ালের অনেকটা অংশ বাদ দিতে হয়। সেই জায়গায় নতুন ত্বক, শিরা-উপশিরা প্রতিস্থাপন করে শিশুটির মুখের নতুন আকার দেন প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা। এই ধরনের অস্ত্রোপচারে সারা ভারতে নজির তৈরি হয়েছে এই সফল প্লাস্টিক সার্জারিতে।
শিশুটির মুখের ক্যানসার ছড়াতে শুরু করেছিল খুব তাড়াতাড়ি। তরল খাবারও গিলতে অসুবিধা হচ্ছিল তার। গলার কাছে তীব্র যন্ত্রণায় কথা বলতেও অসুবিধা হচ্ছিল।
সেই অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলে শিশুটির জটিল অস্ত্রোপচার করে মুখের অনেকটা অংশ বাদ দিতে হয়। ক্যানসার কোষ মুখমণ্ডলের যে যে অংশে ছড়িয়েছিল, সেই জায়গাগুলো সার্জারি করে বাদ দেন চিকিৎসকরা।
অপারেশনটি হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার গৌরাঙ্গ দত্তের নেতৃত্বে। ডাক্তার দত্ত জানিয়েছেন, "মুখের ক্যানসারের সার্জারি এমনিতেই জটিল প্রক্রিয়া। এরপরে মুখে গর্ত হয়ে যাওয়া অংশগুলিকে ভরাট করে নতুন আকার দেওয়া কঠিন ব্যাপার। আর বাচ্চার ক্ষেত্রে এই ধরনের সার্জারি ঝুঁকির হতে পারে।"
ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে যাননি অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। মুখ থেকে চোয়াল অবধি অংশের ত্বক পুনর্গঠন করারই সিদ্ধান্ত নেন তারা।
শিশুটির ঠোঁট ও গাল ও চোয়ালের যে অংশ বাদ যায় সেখানে বাঁ হাত থেকে নেওয়া ত্বক ও শিরা-উপশিরা প্রতিস্থাপন করা হয়। বয়সের কারণেই শিশুটির ছোট্ট শরীর। তার হাত আরও ছোট। তাই মাইক্রোস্কোপের তলায় রেখে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই গোটা কাজটি করা হয়।
শিরা-উপশিরা, ধমনী-সহ হাতের সেই ফ্ল্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হয় মুখের গর্ত হয়ে যাওয়া অংশগুলিতে। দীর্ঘ সময় ধরে চলে এই সার্জারি। এরপর শিশুটিকে দু’দিন পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) রাখা হয়। তারপর তাকে স্থানান্তরিত করা হয় ওয়ার্ডে।
এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, "প্লাস্টিক সার্জারির সঙ্গে অনেকেই কসমেটিক সার্জারিকে গুলিয়ে ফেলেন। এটা খুবই ভুল ধারণা। বহু ক্ষেত্রে জটিল কোনও অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর অঙ্গহানি ঘটে। বড়সড় দুর্ঘটনার জেরেও তা হতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে ত্বক, পেশি ও রক্তবাহগুলি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে আনাটাই সব চেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। যে সব শিশু জন্মগত বিভিন্ন ত্রুটি, যেমন কাটা ঠোঁট নিয়ে জন্মায়, তাদের ক্ষেত্রেও এই ধরনের সার্জারি করা হয়।"