বাংলাদেশ নির্বাচনঃ যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এই নির্বাচন অবাধ বা নিরপেক্ষ হয়নি, জানালেন ম্যাথিউ মিলার

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার

অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের মতো যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, জানুয়ারির ৭ তারিখে হওয়া বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি, বলেছেন যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। সেইসাথে সবগুলো দল এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশা প্রকাশ করেছে।

সোমবার, ৮ জানুয়ারি দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের গণতন্ত্রের আকাঙ্খা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানায়।" ৭ জানুয়ারি ২০২৪-এ অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে উল্লেখ করে মিলার বলেন, "এই নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেফতার করা ও নির্বাচনের দিন ঘটা অনিয়মের রিপোর্টগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ জারি থাকবে।"

নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের আগের কয়েকমাসে ঘটা সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ম্যাথিউ মিলার বিবৃতিতে বলেন, "সহিংসতার এ ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা ও এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করছি। সেই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসতা পরিহার করার জন্যও আমরা আহ্বান জানাই।"

মিলার আরও বলেন, "সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ভিশন বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো -প্যাসিফিক, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও সুশীল সমাজের প্রতি সমর্থন ও দু'দেশের নাগরিকদের সঙ্গে নাগরিকদের ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে গভীর করা।"

৭ জানুয়ারির নির্বাচন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে ২৯৮ টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২২ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

একজন প্রার্থীর মৃত্যু এবং একজনের প্রার্থীতা বাতিলের কারণে ২ টি আসনের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার ৪১.৮ শতাংশ।

বিএনপিসহ ১৬ টি নিবন্ধিত দলবিহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় ২ জন গুলিবিদ্ধ ও ১ জন নিহত হয়েছে।

ভোট বর্জন করা বিএনপিসহ দলটির আন্দোলনে সঙ্গী ৩৬ টি দল ভোটের আগের দিন (৬ জানুয়ারি) ও ভোটের দিন (৭ জানুয়ারি) ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের ঘোষণা: বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

২৪ মে, ২০২৩-এ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ভিসা নীতির ঘোষণা দিতে গিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, "...আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করা্র উদ্দেশ্যে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ২১২ (এ) (৩) (সি) (‘৩সি’) ধারার অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মে মাসের ৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।"

তিনি আরো বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কর্মের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার ব্যবহার, জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার থেকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে যেকোনো রকম ব্যবস্থার ব্যবহার”।

ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সকলের- ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়ার। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যারা চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি”।

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা

২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩-এ এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

সেই বিবৃতিতে মিলার জানান, “এর মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।”

এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেওয়া হয়েছে।