বাংলাদেশ নির্বাচনঃ জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের বাংলাদেশকে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টুর্ক

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টুর্ক বাংলাদেশের নবনির্বাচিত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার নবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

সহিংসতা এবং বিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর দমনপীড়নের কারণে রবিবারের নির্বাচনের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয় বলে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

সোমবার (৮ জানুয়ারী) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান এই বক্তব্য দেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টুর্কের বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য

সহিংসতা এবং বিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর দমনপীড়নের কারণে রবিবারের নির্বাচনের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয় বলে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

টুর্ক বলেন, “ভোটের আগে কয়েক মাস ধরে হাজার হাজার বিরোধীদলের সমর্থককে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে অথবা ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। ঐ ধরণের কৌশল সত্যিকারের (গণতান্ত্রিক) প্রক্রিয়ার পক্ষে সহায়ক নয়।”

তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তার সকল বাংলাদেশী জনগণের মানবাধিকারের বিষয়টিকে পুরোপুরি বিবেচনায় নিয়ে এবং দেশে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানের কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভোট গ্রহণের আগে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা গণহারে গ্রেপ্তার, হুমকি, জোরপূর্বক গুম, ব্ল্যাকমেইল এবং নজরদারি এধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা গেছে ফলে, প্রধান বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচন বয়কট করে।

বিরোধী দলগুলোর দ্বারা কথিত অগ্নি হামলাসহ রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়।

২৮ অক্টোবর থেকে দলটির একজন প্রধান নেতাসহ প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।।

গত দুই মাসে অন্তত ১০জন বিরোধী দলের সমর্থক পুলিশের হেফাজতে মারা গেছে অথবা নিহত হয়েছে।

সম্ভাব্য নির্যাতন বা কঠোর আটক অবস্থায় রাখার বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মন্তব্য করেন।

জোরপূর্বক গুমের সন্দেহজনক কয়েক ডজন ঘটনার খবর পাওয়া গেছে যার বেশির ভাগ ঘটে নভেম্বর মাসে, অনেক মানবাধিকার কর্মী আত্মগোপন করতে বাধ্য হন এবং কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান টুর্ক বলেন, “ঐ ঘটনাগুলোকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে হবে এবং দায়ীদের অবশ্যই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনী প্রচারণার সময় এবং নির্বাচনের দিন যে নিয়ম লঙ্ঘন ও অনিয়ম হয়েছে তার পূর্ণ ও কার্যকর তদন্ত হওয়া উচিত।”

হাইকমিশনার বলেন, "বাংলাদেশে গণতন্ত্র কষ্টার্জিত এবং তা কেবল লোক দেখানোর জন্য হওয়া উচিত নয়।" তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল এবং তা রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রেও হবে তা আমি আন্তরিকভাবে আশা করি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে।"

৭ জানুয়ারির নির্বাচন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে ২৯৮ টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২২ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

একজন প্রার্থীর মৃত্যু এবং একজনের প্রার্থীতা বাতিলের কারণে ২ টি আসনের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার ৪১.৮ শতাংশ।

বিএনপিসহ ১৬ টি নিবন্ধিত দলবিহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় ২ জন গুলিবিদ্ধ ও ১ জন নিহত হয়েছে।

ভোট বর্জন করা বিএনপিসহ দলটির আন্দোলনে সঙ্গী ৩৬ টি দল ভোটের আগের দিন (৬ জানুয়ারি) ও ভোটের দিন (৭ জানুয়ারি) ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করে।